Thursday, January 15, 2015

আক্রান্ত হলে অস্ত্র চালাবে বিজিবি

আক্রান্ত হলে অস্ত্র চালাবে বিজিবি


Artile

র্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেছেন, 'বিজিবির সবই লিথ্যাল (প্রাণঘাতী) অস্ত্র। বিজিবির সদস্যরা কাউকে গুলি করবে না। তবে কেউ আক্রমণ করলে জীবন বাঁচাতে গুলি করতে পারে। একজন ব্যক্তি যদি বোমা ফাটায়, তাহলে পাঁচজন লোক নিহত হতে পারে। এ দৃশ্য কোনো বিজিবি সদস্যের নজরে এলে ওই বোমা বহনকারীকে ক্যাজুয়ালটি (হতাহত) করা তার দায়িত্ব।'
বিজিবির মহাপরিচালকের এ বক্তব্য নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। বিদেশি গণমাধ্যমেও এ নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়েছে। বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটি এক বিবৃতিতে বলেছে, বিজিবিপ্রধানের এ বক্তব্য সম্পূর্ণ এখতিয়ারবহির্ভূত ও আইনপরিপন্থী।
বিজিবিপ্রধানের বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রফিক-উল হকও। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, 'একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যারা আমাদের রক্ষা করবে, তাদের কাছে এ ধরনের বক্তব্য আশা করি না। তবে সত্যিকার অর্থে সে রকম ঘটনা ঘটলে হয়তো সেটা করতে পারে। কিন্তু সে রকম পরিস্থিতি এখনো হয়নি। আপাতদৃষ্টিতে এসব বক্তব্য আইনের পরিপন্থী।'
বিজিবির মহাপরিচালক গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পিলখানায় নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে হরতাল-অবরোধে দায়িত্ব পালনের বিষয়ে বলতে গিয়ে ওই মন্তব্য করেন। বিজিবির এক বছরের সাফল্য তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। বিজিবির পদস্থ কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে বিজিবির মহাপরিচালক বলেন, 'বিজিবি মানুষ হত্যা করতে চায় না। সে ধরনের নির্দেশও বিজিবির ওপর নেই। তবে মানুষ হত্যা করতে দেখলে এবং নিজে আক্রান্ত হলে জীবন বাঁচানোর তাগিদে যেকোনো আক্রমণ প্রতিহত করবে। আক্রান্ত হলে সে নিজের অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে, এটা তার অধিকার।'
বিজিবিপ্রধানের এ বক্তব্যের ব্যাপারে জানতে চাইলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিজিবির দায়িত্ব হচ্ছে সীমান্ত রক্ষা করা। তবে সরকার বিজিবিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সহায়ক হিসেবে বাড়তি দায়িত্ব দিলে তা পালন করা তাদের জন্য বাধ্যতামূলক। আক্রান্ত হলে অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে, এটা বলার প্রয়োজন পড়ে না। কারণ, আত্মরক্ষার জন্য শক্তি প্রয়োগ সব আইনব্যবস্থাতেই স্বীকৃত বৈধ পন্থা। তবে এভাবে বলা হলে একধরনের অস্বস্তি সৃষ্টি হতে পারে। এটিও সত্য, যখন ঝলসে যাওয়া মুখ বা পেট্রলবোমার আগুনে দগ্ধ মানুষের আর্তনাদ শোনা যায়, তখন এ ধরনের বাড়তি ব্যবস্থা নেওয়ার যৌক্তিকতাও সামনে এসে দাঁড়ায়।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কীভাবে দেখছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে বিজিবির মহাপরিচালক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। ৩৫ জেলা প্রশাসক বিজিবি মোতায়েনের অনুরোধ করেছেন। আমরা ১৭টি জেলায় বিজিবি মোতায়েন করেছি। জেলা প্রশাসকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয়তা যাচাই করে বিজিবি মোতায়েন করা হচ্ছে। কিছু কিছু জায়গায় বিজিবি স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে, প্রয়োজনে নামানো হবে।' হরতাল-অবরোধে কত বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপাতত ৮৫ প্লাটুন (প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন) মোতায়েন করা আছে, আরও ৮০ প্লাটুন মজুত রাখা হয়েছে। দরকার হলেই তাদের নামানো হবে।
বিজিবি কত দিন দায়িত্ব পালন করবে—জানতে চাইলে মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, সম্প্রতি বিভিন্ন সময়ে বিজিবির গাড়ির পাশে ককটেল বিস্ফোরণের মতো তিন-চারটি ঘটনা ঘটলেও তাতে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। অবরোধের কারণে রাস্তায় যানবাহন চলাচলেও নিরাপত্তা দিচ্ছে বিজিবি। জনগণকে 'সেন্স অব সিকিউরিটি' দেওয়ার জন্য যত দিন দরকার, বিজিবি মাঠপর্যায়ে কাজ করবে। তিনি বলেন, 'সরাসরি গুলি করার নির্দেশের কথা কিন্তু আমি বলিনি। আপনারা ভুল ব্যাখ্যা করবেন না। একজন পেট্রলবোমা মারছে, তা দেখার পর কী করা উচিত, সেটা আপনারাই বলুন। তাকে কি প্রতিহত করার দরকার নেই?'
যোগাযোগ করা হলে বিশিষ্ট আইনজীবী শাহদীন মালিক প্রথম আলোকে বলেন, 'বিজিবি আক্রান্ত হলে, সে ক্ষেত্রে বিজিবি অস্ত্র ব্যবহার করলে এবং গুলি ছুড়লে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে এবং সহিংসতা বাড়ার আশঙ্কা থেকে যাবে। এটা কারও কাম্য না। আশা করি, বিজিবি আক্রান্ত হবে না এবং তাদের গুলি ছোড়ার প্রয়োজন হবে না।'
বিএনপির বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে ক্ষমতাসীনদের অনেকেই চরম উসকানিমূলক হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত রাষ্ট্রীয় বাহিনীর কিছু উৎসাহী কর্মকর্তা বেআইনি নির্দেশ ও রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক বক্তব্য প্রকাশ্যে দিতে শুরু করেছেন। এতে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমানের সই করা বিবৃতিতে বলা হয়, জনপ্রতিনিধিত্বহীন সরকার চরম কর্তৃত্ববাদী শাসন চালু করেছে। তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের দিয়ে সবকিছু দমিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্য প্রসঙ্গ: বিভিন্ন পরিসংখ্যান তুলে ধরে বিজিবির মহাপরিচালক বলেন, বুধবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে বৃহস্পতিবার (গতকাল) ভোর ছয়টা পর্যন্ত মহাসড়কগুলোতে প্রায় ৩৫ হাজার যান চলাচল করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্য সদস্যদের সঙ্গে যান চলাচলের নিরাপত্তায় বিজিবি সদস্যরা সহায়তা করছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সীমান্ত পাহারা বিজিবির প্রধান কাজ হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বেসামরিক প্রশাসনকে সাহায্য করাও বিজিবির দায়িত্ব। এক দিনে বিজিবি ৩৫ হাজার যান নিরাপদে চলতে সহায়তা করেছে।
গত এক বছরে বিজিবির সফলতা তুলে ধরে মহাপরিচালক বলেন, সীমান্ত রক্ষার পাশাপাশি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা ও সন্ত্রাসীদের কবল থেকে জনসাধারণের জানমাল রক্ষা করে বিজিবি সবার আস্থা অর্জন করেছে।
মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, 'সাম্প্রতিক কালে সবচেয়ে বড় সমস্যা ইয়াবা পাচার। গত বছর ২৫ লাখ ৩৫ হাজার ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হলো অন্যখানে। আমরা কষ্ট করে আসামি ধরে দিচ্ছি আর কিছুদিন পর সেই অপরাধী জামিনে বেরিয়ে এসে মুচকি হাসি দেবে, সেটা হতে পারে না। আগে নদী দিয়ে ইয়াবা আসত, এখন সমুদ্র দিয়ে আসছে। এ জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। তাতে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। সীমান্ত পরিস্থিতির জন্য চট্টগ্রাম বা কক্সবাজারে একটি লিয়াজোঁ অফিস স্থাপন করার প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়েছে।'
অস্ত্র উদ্ধারের ব্যাপারে বিজিবির মহাপরিচালক বলেন, ফলের ট্রাকে করে অস্ত্র আসে। ট্রাক স্ক্যান করার যন্ত্র কেনার ব্যাপারে প্রস্তাব করা হয়েছে। সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দুর্গম সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। দুর্গম স্থানে যাতে বিজিবি সহজে পৌঁছাতে পারে, সে জন্য বাহিনীতে পৃথক বিমান চলাচল শাখা খোলা হচ্ছে। এ শাখার অধীনে চারটি হেলিকপ্টার কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া বিএসএফের রিংরোড ব্যবহার করে রসদ পৌঁছানোর ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। বিএসএফ এতে সম্মত হয়েছে।
মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, গত এক বছরে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের অভিযোগে সাড়ে নয় হাজার লোককে আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া মিয়ানমারের তিন হাজার বাসিন্দাকে সে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। পাচারের সময় সাড়ে ৮০০ নারী ও সাড়ে ৩০০ শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে। ২০১৩ সালে ভারত থেকে ২০ লাখ ৩২ হাজার গবাদিপশু বাংলাদেশে এসেছে বলে তিনি জানান।

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/425560/%E0%A6%86%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4-%E0%A6%B9%E0%A6%B2%E0%A7%87-%E0%A6%85%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0-%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A6%BF

__._,_.___

No comments:

Post a Comment