Wednesday, May 8, 2013

সারদা চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে নাস্তানাবুদ সরকার। মোকাবিলা করতে রাজ্যের অধীনে নয়া আর্থিক স্কিম ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। লগ্নি ছাড়া এই প্রকল্পে টাকা ঢেলে ফেরত কি ভাবে পাওয়া যাবে, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়।প্রাইভেট চিটফান্ডের মোকাবিলায় তাহলে কি দিদি সরকারী চিটফান্ড খুলছেন? সিবিআই তদন্ত এখন বিশ বাঁও জলে যেহেতু কোলকাতা হাইকোর্ট সারদা গ্রুপ নামে কোনো কম্পানীর অস্তিত্ব নেই বলে পিআইএলের শুনানি স্থগিত করে দিয়েছে ওদিকে আবার সুপ্রিম কোর্ট সিবিাইকে সরকারি তোতাপাখির খেতাব দিদির সুবিধা করে দিয়েছে। দিদি এই সুযোগে লগ্নির নূতন রাস্তা বের করে ক্ষতিপূরণের প্রশ্ন ওভারবাউন্ডারি মেরে উড়িযে দিলেন। পলাশ বিশ্বাস

সারদা চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে নাস্তানাবুদ সরকার। মোকাবিলা করতে রাজ্যের অধীনে নয়া আর্থিক স্কিম ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। লগ্নি ছাড়া এই প্রকল্পে টাকা ঢেলে ফেরত কি ভাবে পাওয়া যাবে, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়।প্রাইভেট চিটফান্ডের মোকাবিলায় তাহলে কি দিদি সরকারী চিটফান্ড খুলছেন? সিবিআই তদন্ত এখন বিশ বাঁও জলে যেহেতু কোলকাতা হাইকোর্ট সারদা গ্রুপ নামে কোনো কম্পানীর অস্তিত্ব নেই বলে পিআইএলের শুনানি স্থগিত করে দিয়েছে ওদিকে আবার সুপ্রিম কোর্ট সিবিাইকে সরকারি তোতাপাখির খেতাব দিদির সুবিধা করে দিয়েছে। দিদি এই সুযোগে লগ্নির নূতন রাস্তা বের করে ক্ষতিপূরণের প্রশ্ন ওভারবাউন্ডারি মেরে উড়িযে দিলেন। 

পলাশ বিশ্বাস

সারদা চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে নাস্তানাবুদ সরকার। মোকাবিলা করতে রাজ্যের অধীনে নয়া আর্থিক স্কিম ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। লগ্নি ছাড়া এই প্রকল্পে টাকা ঢেলে ফেরত কি ভাবে পাওয়া যাবে, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়।প্রাইভেট চিটফান্ডের মোকাবিলায় তাহলে কি দিদি সরকারী চিটফান্ড খুলছেন? সিবিআই তদন্ত এখন বিশ বাঁও জলে যেহেতু কোলকাতা হাইকোর্ট সারদা গ্রুপ নামে কোনো কম্পানীর অস্তিত্ব নেই বলে পিআইএলের শুনানি স্থগিত করে দিয়েছে ওদিকে আবার সুপ্রিম কোর্ট সিবিাইকে সরকারি তোতাপাখির খেতাব দিদির সুবিধা করে দিয়েছে। দিদি এই সুযোগে লগ্নির নূতন রাস্তা বের করে ক্ষতিপূরণের প্রশ্ন ওভারবাউন্ডারি মেরে উড়িযে দিলেন। 

 সারদা-কাণ্ডের পর রাজ্যের মানুষকে বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার হাতে থেকে বাঁচাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশেষ সামাজিক সুরক্ষা সঞ্চয় প্রকল্পের কথা ভাবছেন৷ বুধবার মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী এই ভাবনার জানিয়েছেন৷ তবে সাধারণ মানুষের মতামত নিয়েই এ বিষয়ে চড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চান তিনি৷ সে জন্য অর্থ দন্তরের ওয়েবসাইটে আগামী একমাস ধরে এই প্রকল্পের পরিকল্পনা জানিয়ে বিজ্ঞন্তি দেওয়া হবে৷ সেখানেই মতামত জানাতে পারবেন সাধারণ মানুষ৷ সব মত দেখেই সিদ্ধান্ত নেবে সরকার৷

এ নিয়ে যাতে কোনও ভুল বোঝাবুঝি না হয়, সে বিষয়েও যথেষ্ট সতর্ক মুখ্যমন্ত্রী৷ স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন, এই প্রকল্পের ব্যাপারে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে তিনি ও অর্থমন্ত্রী বাদে কেউ কোনও কথা বলবেন না৷ মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, 'এটা সেনসেটিভ ইস্যু৷ এ নিয়ে কোনও বিতর্ক হোক আমি চাই না৷ এখন আর কিছু বলব না৷ মতামত পেয়ে যা বলার বলব৷' একইসঙ্গে তিনি জানান, যদি প্রকল্প চালু হয়, তা হলে কী হারে সুদ দেওয়া হবে, সেটাও ঠিক করা হবে মতামত পাওয়ার পরই৷

 কয়লা কেলেঙ্কারিতে কেন্দ্রের বিড়ম্বনা বাড়িয়ে এবার সুপ্রিম কোর্টও সিবিআই-র স্বাধীনতা নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুলল৷ বুধবার স্টেটাস রিপোর্ট নিয়ে শুনানিতে সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, 'সিবিআই খাঁচার তোতা৷ মালিকের শেখানো বুলি আওড়ায়৷' কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে বিদ্ধ করে আদালত বলেছে, জমা দেওয়া হলফনামা থেকে পরিষ্কার, সিবিআই-র একাধিক মালিক রয়েছে৷

কেন্দ্রের অস্বস্তি বাড়িয়ে সুপ্রিম কোর্ট অবিলম্বে সিবিআই-কে নিরপেক্ষ করে তুলতে যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছে৷ বলেছে, সিবিআই সব রকম বাহ্যিক চাপ থেকে যাতে মুক্ত হয়, সে চেষ্টা করতে হবে৷ সেই সঙ্গে সর্বোচ্চ আদালতের হুঁশিয়ারি, সিবিআই-কে স্বাধীন করা না হলে, আদালতই পদক্ষেপ করবে৷
আইনমন্ত্রী অশ্বিনী কুমারের ভূমিকা প্রসঙ্গে আদালত বলেছে, আইনমন্ত্রী হিসেবে তিনি স্টেটাস রিপোর্ট দেখতেই পারেন৷ কিন্ত্ত তাতে রদবদল করার কোনও অধিকার তাঁর নেই৷ সিবিআই তদন্তে তিনি নাক গলাতে পারেন না৷

এদিকে এদিন আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেল জিই বাহনবতী বলেছেন, আইনমন্ত্রীর কথামতোই তিনি সিবিআই-র সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন৷ তিনি নিজে কখনোই রিপোর্ট দেখতে চাননি বা দেখেননি৷

কলকাতা: লগ্নিসংস্থা কেলেঙ্কারি কাণ্ডের জেরে এবার সাধারণ মানুষের কষ্টের আয়ের টাকা নিজের কাছে জমা রাখার ভাবনাচিন্তা করছে রাজ্য সরকার৷ কয়েকদিন আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাধারণের উদ্দেশ্যে বলেছেন, অনেক হয়েছে আর নয়৷ চিট ফান্ডে কেউ টাকা রাখবেন না৷ কিন্তু বিকল্প সংস্থান কী? সারদা কাণ্ডের মতো ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সেজন্য আজ মহাকরণে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বিশেষ সামাজিক সুরক্ষা স্কিম আনার কথা ভাবছেন বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।বলেছেন, সাধারণ মানুষ যাতে রাজ্য সরকারের কাছে ভরসা করে টাকা রাখতে পারেন, সেজন্য ভাবনাচিন্তা চলছে৷  স্কিমটি নিয়ে অর্থ দফতরের ওয়েবসাইটে সাধারণ মানুষের মতামত নেওয়া হবে৷ এক মাস পর সেই মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে সরকার৷ তবে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, লগ্নিসংস্থাগুলির মতো সুদ দেওয়ার ক্ষমতা নেই সরকারের৷ তবে রাজ্য সরকারের কাছে টাকা রাখলে সাধারণ মানুষের আমানত সুরক্ষিত থাকবে৷ সঠিক সময়ে প্রাপ্য টাকা ফেরত দেওয়া হবে৷ তবে সবটাই পরিকল্পনা স্তরে রয়েছে বলে এদিন বারবার উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলেই আইন আনা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি৷ স্কিমের নামও পরে ঠিক হবে৷তবে বাস্তবে সাধারণ মানুষের টাকা সুরক্ষিত রাখতে সরকারের সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প কতটা কার্যকর হতে পারে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদদের একাংশ৷ অর্থনীতিবিদ সুমন মুখোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর ভাবনাচিন্তার বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব, সেই প্রশ্নই তুলেছেন। তাঁর কথায়, সাধারণ মানুষের কাছ টাকা তোলার পর সেই টাকা সরকার কোথায় বিনিয়োগ করবে? টাকা ফেরতই বা দেবে কীভাবে? তবে রাজ্য সরকারের এই ভাবনাকে স্বাগত জানিয়ে আরেক অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকার বলেছেন, সরকারের এই ভাবনা অর্থনৈতিক ও মানবিক সিদ্ধান্ত৷ প্রত্যাশামতোই মুখ্যমন্ত্রীর এই ভাবনাচিন্তার তীব্র সমালোচনা করেছে সিপিএম৷ দলের বিধায়ক আনিসুর রহমানের অভিযোগ, সাধারণ মানুষের চোখে ধুলো দেওয়ার চেষ্টা করছে রাজ্য সরকার৷
লোকসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মত, রাজ্য সরকারের এই ভাবনা বাস্তবায়ন করতে কেন্দ্রের অনুমোদন প্রয়োজন৷ 
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, টাকা জমা রাখার ভাবনা নিয়ে ওয়েবসাইটে একমাস ধরে মতামতকে গুরুত্ব দেবে সরকার৷ তারপরেই পরবর্তী সিদ্ধান্তের দিকে এগোবে মহাকরণ৷ তাই অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিবিদদের যাবতীয় প্রশ্নের জন্য বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করতেই হবে৷

অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতুবী হয়ে গেল লোকসভার অধিবেশন। বুধবারও বিরোধীরা একাধিক ইস্যুতে সংসদ অচল করে দেয়। ১১টায় অধিবেশন শুরুর পর বেলা ১২টা পর্যন্ত সভা মুলতুবী হয়। দ্বিতীয় দফায় অধিবেশন বসলেও বিরোধীরা কয়লা কেলেঙ্কারিতে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে শ্লোগান দিতে থাকেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পবন কুমার বনশল ও অশ্বিনী কুমারের পদ্যাগের দাবিতেও সরব হন তাঁরা। 

এর জেরেই অধ্যক্ষ মীরা কুমার অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতুবী করে দিতে বাধ্য হন। বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় দফা শেষ হওয়ার দু`দিন আগেই সংসদের কাজ অসমাপ্ত রেখে স্থগিত হয়ে গেল। 

আজ সকালেই, সংসদ বিষয়কমন্ত্রী রাজীব শুক্ল জানিয়ে দেন বুধবারই রাজ্যসভা ও লোকসভা মুলতুবী হয়ে যাবে। এদিন মন্ত্রীদের পদত্যাগের দাবিতে বিজেপি সাংসদরা স্পিকারের আসনের কাছে এসে হট্টগোল শুরু করে দেন। মীরা কুমারের শত চেষ্টা বিফলে যায়। প্রথমটায় বেলা ১২টা পর্যন্ত অধিবেশন মুলতুবী করে দেন তিনি। একই ছবি ছিল উচ্চ কক্ষেও। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি ওঠে সেখানেও।


 আমাদের প্রিয় বন্ধু শরদিন্দু উদ্দীপন সারদা চিটফান্ড প্রসঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ লেখা লিখেছেন, সেটি পড়লে দেশ ও রাজ্যের ছবি অনেকটা পরিস্কার হবে।দয়া করে এই লেখাটি পড়ুন এবং ভাবুনঃ

চিটফান্ড আসলে বহুজনের বিরুদ্ধে ডিভাইন প্রভুদের যুদ্ধের শঙ্খনাদ।



From: Saradindu Biswas <saradindus@gmail.com>
চিটফান্ড আসলে বহুজনের বিরুদ্ধে ডিভাইন প্রভুদের যুদ্ধের শঙ্খনাদ।
To: Palash Biswas <palashbiswaskl@gmail.com>, 

সারদার জালিয়াতি কান্ড সামনে আসার পরে বেশ কয়েকটি আশঙ্কার কথা আলতো করে বাতাসে ভাসিয়ে দেবার চেষ্টা হচ্ছে। ক্রমশঃ জোরালো করে তোলা হচ্ছে এই আশঙ্কার পরিবেশ। পালা বন্দনার মতো গাওনা শুরু হয়েছে যে চিটফান্ড বন্ধ হলেঃ 
১) বাংলার ফুটবলের উপর বিরাট প্রভাব পড়বে। 
২) বাংলার সুমহান ঐতিহ্য দুর্গা পূজার জৌলুস কমে যাবে। 
৩) টিভি সিরিয়ালগুলির উপর প্রভাব পড়বে। 
৪) সিনেমা শিল্পের অনেক তাবড় প্রযোজক পালিয়ে যাবেন। 
৫) যাত্রা শিল্প পাততাড়ি গুটাতে বসবে। বড় চিত্র তারকাদের পাওয়া যাবে না। 
৬) অনেক খবরের কাগজ কোম্পানি পথে বসবে। 
৭) অনেক টিভি চ্যানেল বন্ধ হয়ে যাবে। 
৮) বড় বড় আবাসন প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়বে। 
৯) সান সিটি,ফান সিটি,গ্রীন সিটি বা হাইল্যান্ড,স্কাইল্যান্ড আগাছায় ভরে যাবে। 
১০) সাংবাদিকরা বেকার হয়ে রাস্তায় রাস্তায় কেঁদে বেড়াবে। ইত্যাদি...ইত্যাদি। 
অর্থাৎ চিটফান্ড যদি বন্ধ হয়ে যায় বাবুবিবিদের ও তাদের ছানাপুনাদের সব ফুটানি বন্ধ হয়ে যাবে। তাদের ঝাঁচকচকে গাড়িগুলির তেল ফুরিয়ে যাবে। কেতাদুরস্ত ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডারদের জলপানি বন্ধ হয়ে যাবে। বুদ্ধিজীবীরা উচ্ছিষ্ট পাবেনা। টিভি চ্যানেলে এসে গুলতানী করা যাবেনা। রোজ রোজ মোচ্ছব করার ভাঁড়ারে টান পড়বে। বেকার হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ফেউ ফেউ করে ঘুরে বেড়াতে হবে তাদের চাঁদির চামচ মুখে নিয়ে জন্মানো ছানাপুনাদের। সুতরাং যে ভাবেই হোক বহুজন সমাজের নিরন্ন মানুষের রক্ত শুষে খাবার এই জালিয়াতি ব্যবসার সুযোগ করে দিতে হবে বাবু-বিবির ছানাপুনাদের এবং তাদের পোষ্য বশংবদদের। তাদের শ্রম এবং উৎপাদনের সমস্তটাই আত্মসাৎ করতে হবে। তাই যে যাই বলুক না কেন, বহুজন সমাজের মাথার উপর কাঁঠাল রেখে কোষ কেঁড়ে খাওয়ার নীতিকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে পরিণত করে ফেলতে হবে। এটাই উন্নয়নের আধুনিক পরিভাষা। অর্থনৈ্তিক বিকাশের একমাত্র অভিমুখ! 

সত্যি সেলুকস! 
বহুজন সমাজ কি এমনই? এতোটা সহিষ্ণু ! রক্ত বীজের ভান্ডার! 
মারলেও মরেনা। পদ দলিত করলেও অবনত হয়ে সহ্য করে নেয় অনন্ত ক্লেশ। 
ধ্বংস করে দিলেও থেকে যায় ধ্বংসাবশেষ। উজাড় করে দিলেও থেকে যায় অস্তিত্ব।  
একী ভীরুতা না ক্ষমাশীলতা! অজ্ঞতা না অমায়ীকতা! 
মূর্খতা না জ্ঞানশীলতার ভবিষ্যবানী! মৃত্যু পথযাত্রী না সঞ্জীবনীসুধা প্রাপ্ত মেধা। 
পথভোলা পথিক না যুগ থেকে যুগান্তরের প্রাজ্ঞ মুসাফির! 

এমনি একটি আত্মান্বেষণের অবকাশ অবশ্যই দরকার ছিল বহুজন সমাজের পুনর্বিন্যাসের জন্য। দরকার ছিল আত্মবিশ্লেষণের। কার্যকারণের ফলাফলের উপর এমন নির্মম অভিঘাত না হলে এই বোধদয় সম্ভব হতনা। এমন নিশ্চিত ভাবে চিহ্নিত হত না নিজেদের আর্থ সামাজিক অবস্থান। চিহ্নিত হতনা শোষক ও শোষণ যন্ত্রের ছলাকলা বিদ্যার কারিকুরি। শুধু এটুকু বলতে পারি যে, নিজেদের ভিটে-মাটি,সঞ্চয়-সম্পদ সব কিছু খুইয়েও বহুজন সমাজের হাতে বেঁচে থাকবে একটা অভিজ্ঞতা। যে অভিজ্ঞতা সঞ্জাত জ্ঞান আবার তাদের আন্তসামাজিক পুনর্গঠনের সহায়ক হয়ে উঠবে। 

এমনি হয়। এমনি হয়ে আসছে। বিবর্তনের সরণী বেয়ে বহুজন সমাজই রুখা মাটিকে রূপময় করে তুলছে। উশর মরুভূমিতে গড়ে তুলছে মরূদ্যান। অনাবাদী পতিত জমি হয়ে উঠছে শ্যামল শোভন। আর সেই সম্পদকে করায়ত্ব করতে, লুন্ঠন করতে নিরন্তর রচিত হয়েছে দুর্বৃত্তায়নের ফাঁদ। শোষণ যন্ত্রকে কাজে লাগিয়ে উৎপাদকদের উৎপন্ন ফসল যুগ যুগ ধরে কেড়ে খাচ্ছে অনুৎপাদ অমানুষেরা। এতে ওরা লজ্জিত হয় না। কুণ্ঠিত হয় না। বরং দুর্বল হলেই ভোজের উৎসবে মেতে ওঠে। দাঁত নখ বেরিয়ে আসে। জিভ লকলক করে ওঠে। নিজেরাতো চেটেপুটে খায়। ভবিষ্যতের বালবাচ্চাদের জন্যেও তুলে রাখে বহুজনের হাড়। এটাই ওদের ধর্ম। এটাই ওদের অর্থ। এটাই ওদের কাম। এটাই ওদের মোক্ষ। 

এবার নির্মাণের কাল। রাষ্ট্রীয় ভাগিদারী বুঝে নেবার কাল। ওদের তৈরি করা বিভেদের বেড়াকে দুপায়ে মাড়িয়ে ভাইয়ের আঙিনায় গিয়ে ভাইচারা স্থাপনের কাল। শুধু এই কাজটি সুনিশ্চিত ভাবে করতে পারলে বাকি কাজ এমনি হয়ে যাবে। এমনিতেই ওরা বহুজন সমাজকে খতম করার জন্য ময়দানে নেমে পড়েছে। এবার যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বে। বহুজন সমাজের সারল্যের সুযোগ নিয়েই ওরা জালিয়াতির ব্যবসা চালিয়ে এসেছে এতদিন। ধ্বংস করে দিয়েছে বহুজনের স্থিতিশীল সমাজ। বৈচিত্রময় প্রকৃতির সুনিবিড় বন্ধনের সাথে সাথে নষ্ট করে দিয়েছে বর্ণময় সংস্কৃতি। ভুলিয়ে দিয়েছে আত্মপরিচয় ,আত্মগৌরব ও আত্মমর্যাদা। এবার পরিষ্কার হয়ে গেছে যে এই আর্থ সামজিক ব্যবস্থায় কেবল বহুজনের ঘর লুণ্ঠিত হয়। বহুজন পথে বসে। লাভবান হয় ডিভাইন প্রভুরা,তাদের বংশধরেরা এবং বশংবদেরা। ডিভাইন প্রভুদের মুখে উন্নয়নের এই উচ্চকিত অমৃতভাষণ আসলে বহুজনের বিরুদ্ধে পৈশাচিক যুদ্ধের উচ্চকিত শঙ্খনাদ। 

শরদিন্দু উদ্দীপন 
আহ্বায়ক, সচেতন বাংলা




সারদা চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে নাস্তানাবুদ সরকার। মোকাবিলা করতে রাজ্যের অধীনে নয়া আর্থিক স্কিম ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু সত্যিই কি এমন স্কিম চালানো রাজ্য সরকারের পক্ষে সম্ভব?  

মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থাগুলোর প্রতারণা ঠেকাতে রাজ্য সরকার একটি নয়া আর্থিক স্কিম চালু করতে চলেছে। কেন্দ্র এবং রাজ্যের আর্থিক সংস্থাগুলো সূত্রে খবর, এরকম স্কিম চালু করার পথ খোলা রয়েছে রাজ্যের সামনে। কী সেই পথ? 
 
নন ব্যাঙ্কিং ফিনানশিয়াল কর্পোরেশনের মাধ্যমে বাজার থেকে টাকা তুলতে পারে রাজ্য সরকার। ইতিমধ্যেই রাজ্যের অধীনে এরকম দুটি সংস্থা রয়েছে-- একটি ওয়েস্টবেঙ্গল ফিনানশিয়াল ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন। দ্বিতীয়টি, ওয়েস্টবেঙ্গল ইনফ্রাস্ট্রাকচর ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন। তবে সুদের হার ঠিক করতে আইন করতে হবে রাজ্য সরকারকে।  
 
তবে এই দুটি সংস্থার বাইরে বেরিয়ে নতুন সংস্থা করে টাকা তুলতে হলে, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অনুমোদন প্রয়োজন। ১৯৭৮ সালে ব্যাঙ্ক অফ ওয়েস্টবেঙ্গল গড়ার উদ্যোগ নেন তত্কালীন অর্থমন্ত্রী অশোক মিত্র। কিন্তু তা অনুমোদন করেনি কেন্দ্র। মনে করা হচ্ছে, পুরনো এই অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রেখে ব্যাঙ্ক নয়, নন ব্যাঙ্কিং কর্পোরেশনের পথেই নতুন আর্থিক স্কিমের কথা ভাবছে রাজ্য সরকার। 


সারদা কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের শুনানি পিছিয়ে গেল ১৪ মে পর্যন্ত। কলকাতা হাইকোর্টের  প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির বেঞ্চে আজ রায় ঘোষণার কথা ছিল। আদালতের তরফে জানানো হয়েছে সারদা চিটফান্ড প্রতারণায় সিবিআই তদন্তের দাবিতে যে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয় সেখানে আবেদনকারীরা সারদা গ্রুপ অফ কোম্পানিজের নামে অভিযোগ দায়ের করেছে। 

আদালত জানিয়েছে সারদা গ্রুপ অফ কোম্পানিজ নামে বাস্তবে কোনও কোম্পানির অস্তিত্ব নেই। তাই সারদা গ্রুপের নির্দিষ্ট কোনও কোম্পানির নামে ফের নতুন করে আবেদনকারীদের হলফনামা পেশের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ১৩ তারিখ আদালতে নতুন হলফনামা পেশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হলফনামা পেশের পর ১৪ তারিখ এই মামলার ফের শুনানি হবে। এপ্রিল মাসের ২৫, ২৬ ও ২৮ তারিখ সারদা চিটফান্ড কান্ডে সিবিআই তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে তিনটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। এর আগে দোসরা মে য়ে শুনানি হয়েছিল, তাতে সরকারের পক্ষ থেকে আদালতে হলফনামা পেশ করা হয়।  

 
রাজনৈতিক মহলের ধারনা, এই স্কিম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বেশ কয়েকটি সুবিধা দিতে পারে--
প্রথমত, এর ফলে রাজ্য সরকারের ভাঁড়ারে টাকা আসতে পারে।
দ্বিতীয়ত, এই প্রকল্পের এজেন্টদের রাজনৈতিক সমর্থন পাওয়ার সুযোগ থাকছে শাসক দলের। সারদা কাণ্ডে সেরকম সুবিধা পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাসক দলরে বিরুদ্ধে।
এছাড়াও, চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে সরকারের ইমেজে যে ধাক্কা লেগেছে, তা কিছুটা পুনরুদ্ধার হতে পারে। 
 
তবে আশঙ্কার কথাও শোনা যাচ্ছে, কোনও কোনও মহলে। ব্যাঙ্ক, স্বল্পসঞ্চয় প্রকল্পের চেয়ে  সত্যিই কি বেশি সুদ দেওয়া সম্ভব হবে এই স্কিমে? না হলে এই প্রকল্প কতটা আকর্ষণীয় হবে, সে প্রশ্ন থাকছেই।  


কয়লা কেলেঙ্কারি নিয়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হলফনামা খতিয়ে দেখল সুপ্রিম কোর্ট। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অশ্মিনী কুমারকে রিপোর্ট দেখানোর প্রসঙ্গে সিবিআইকে তীব্র ভর্ৎসনা করেছে শীর্ষ আদালত। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে কটাক্ষ করে সুপ্রিমকোর্ট বলে,``সিবিআইয়ের প্রভু অনেকেই। মালিকের সুরেই সিবিআই খাঁচার বন্দি তোতার বুলি আওড়ায়।" 

সোমবার হলফনামাটি জমা পড়ে সুপ্রিমকোর্টে। কয়লা দুর্নীতি সহ একাধিক ঘটনায় সিবিআই তদন্তের ওপর আশঙ্কা প্রকাশ করেছে শীর্ষ আদালত। 

এদিন সুপ্রিম কোর্ট জানায়: 

১.এক তোতাপাখির বহু প্রভু রয়েছে। মালিকের সুরেই সিবিআই খাঁচার বন্দি তোতার বুলি আওড়ায়। 

২. সিবিআই যদি সরকারের কাছে জবাবদিহি করতে থাকে, তাহলে তার তদন্তের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাটা স্বাভাবিক।

৩. আদালত উল্লেখ করেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সি বি আই আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করা হয়। 


কর্নাটকের জয়ে উজ্জীবিত প্রদেশ কংগ্রেস এবার সুর চড়াল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। কংগ্রেসের বিকল্প হিসেবে যে `তৃতীয় ফ্রন্ট` গড়ার প্রয়াস তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী শুরু করেছিলেন, তা নিয়ে কটাক্ষ করেছেন মানস ভুঁইঞা। 

তাঁর দাবি, হাওড়ার উপনির্বাচনে কংগ্রেস পাশে না থাকায় তৃণমূল কংগ্রেস জোটের মাহাত্ম্য বুঝতে পারবে। কর্নাটকে জয়ের খবর আসার পর এদিন প্রদেশ কংগ্রেস দফতরে চলে আবির খেলা। কার্যত উত্‍সবে মেতে ওঠেন দলের কর্মী-সমর্থকরা। কংগ্রেস নেতাদের দাবি, এ রাজ্যে এবার `পরিবর্তনের পরিবর্তন` আনতে হবে।  


আদালতের নজরদারিতে সি বি আই 
তদন্তের দাবি সংসদে

নিজস্ব প্রতিনিধি : নয়াদিল্লি, ৮ই মে — সংসদে চিট ফান্ড নিয়ে আদালতের নজরদারিতে সি বি আই তদন্তের দাবি জানালেন সি পি আই (এম) সাংসদ প্রশান্ত চ্যাটার্জি। তিনি জানান আসাম, ত্রিপুরার মতো পশ্চিমবঙ্গের চিট ফান্ড তদন্ত সি বি আই-কে দেওয়া উচিত। রাজ্যে চিট ফান্ডের অর্থ লোপাটের ঘটনা নিয়ে বারে বারে কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন চ্যাটার্জি। বুধবার রাজ্যসভায় ফের তা উল্লেখ করেন তিনি। তাতে সারদা কাণ্ডের অর্থ লোপাট, শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীদের যোগসাজশের যেসব অভিযোগ উঠে আসছে তা উ‍‌ল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে প্রতিদিন সাংসদ অচল হয়ে রয়েছে। একের পর এক দুর্নীতির ঘটনা নিয়ে তোলপাড় রাজধানী। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের চিট ফান্ড কেলেঙ্কারি ও এতে শাসক দলের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগে সর্বত্র প্রশ্ন উঠেছে। চ্যাটার্জি সংসদে বিশেষ উল্লেখে বলেছেন, চিট ফান্ডের ঘটনা যা রাজ্যে ঘটেছে তা নিয়ে জনমানসে তীব্র ফোভ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে সারদা চিট ফান্ডের অর্থ লোপাটের ঘটনায় জড়িয়েছে বড় বড় রাজনৈতিক নেতাদের নাম। প্রভাবশালী বহু নাম এ‍‌ই কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছে। সেবি এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক প্রাথমিক তদন্ত করে তা রিপোর্ট সরকারে জমা দিয়েছে। অর্থমন্ত্রকের সাব কমিটির ১৪ই ‍‌জুন ২০১২ সালের বৈঠকে রাজ্যের চিট ফান্ডের অর্থ তছরূপ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এ‍ই অর্থ লোপাট রুখতে রাজ্যস্তরে বিজার্ভ ব্যাঙ্ক, রেজিষ্টার অব কোম্পানি এক রাজ্যে অপরাধ শাখার প্রতিনিধিদের নিয়ে সমন্বয় কমিটি গঠনের সুপারিশ করা হয় রাজ্য সরকারের কাছে। গত ২৪শে জুলাই ২০১২ সালে তা রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি নিয়ে জানিয়ে দেন কেন্দ্রের অর্থমন্ত্রক। কিন্তু তা সত্ত্বেও কোন উদ্যোগ না নেওয়ায় চিট ফান্ডের অর্থ লোপা‍‌টে সর্বস্বান্ত হয়েছেন গরিব মানুষ। এতে ইতোমধ্যে সি বি আই তদন্তের সুপারিশ করেছে আসাম ও ত্রিপুরা সরকার। পশ্চিমবঙ্গে এনিয়ে আদালতের নজরদারিতে সি বি আই তদন্ত হওয়া উচিত। 

http://ganashakti.com/bengali/breaking_news_details.php?newsid=1192


রাজ্যের প্রথম সারির শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠকের পরও বড় শিল্পের ক্ষেত্রে জমিজট কাটল না। বুধবার রাজ্যের প্রথম সারির শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, একলপ্তে এক বা দেড় হাজার একর জমি দেওয়া সম্ভব নয়। ফলে বড় বিনিয়োগের সম্ভবনা নিয়ে শিল্পমহলের হতাশা কাটল না। তবে একশ কিংবা দেড়শ একর জমি পেতে সমস্যা হবে না বলে বৈঠকে জানান মুখ্যমন্ত্রী। একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন সরকারের আর্থিক অবস্থা ভাল না থাকায় শিল্পপতিদের বাড়তি ইনসেনটিভ দেওয়াও সম্ভব হবে না। রাজ্যের শিল্পসংক্রান্ত কোর কমিটির চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। শিল্পে খরা কাটাতে ওই কমিটির মাথায় এখন মুখ্যমন্ত্রী নিজে। নতুন কমিটি গঠনের পরেই রাজ্যের বিভিন্ন চেম্বার অফ কমার্স প্রতিনিধিদের বৈঠকে ডাকেন মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়াও আইটিসির চেয়ারম্যান ওয়াই দেবেশ্বর, হর্ষ  নেওটিয়াকেও বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বড় জমি দিতে না পারলেও ল্যান্ড ব্যাঙ্ক থেকে ছোট জমি দিতে কোনও অসুবিধা হবে না। একমাসের মধ্যে জমির ছাড়পত্র দেওয়ার ব্যবস্থাও করবে সরকার। ফলে প্রকল্পের প্রস্তাব আসার পর দ্রুততার সঙ্গে কাজ শুরু করতে পারবেন 
বিনিয়োগকারীরা। 
 

মুখ্যমন্ত্রীর ইতিবাচক বক্তব্যে খানিকটা আশার আলো দেখলেও বড় শিল্পের প্রশ্নে যথেষ্টই হতাশ শিল্পপতিরা। বড় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একলপ্তে হাজার-দেড়হাজার একর জমির প্রয়োজন। অথচ মুখ্যমন্ত্রী নিজেই জানিয়েছেন এই ধরনের জমি সরকারের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। শিল্পপতিরা আশা করেছিলেন, জমি নিয়ে টানা দুবছরের জট কাটবে  বুধবারের বৈঠকে। কিন্তু কোর কমিটির চেয়ারম্যান বদল হলেও সরকারের নীতির যে কোনও পরিবর্তনই হয়নি বুধবারের বৈঠকে তা আবারও স্পষ্ট হয়ে গেল। মুখে সরকারের প্রশংসা করলেও নতুন বিনিয়োগ প্রশ্নে নীরবই থাকলেন শিল্পপতিরা। 
 
বুধবারের বৈঠকে এসইজেড নিয়ে সরকারের নীতি পরিবর্তনের জন্য ভারত চেম্বার অফ কমার্সের তরফে মুখ্যমন্ত্রীকে প্রস্তাব দেওয়া হয়। এব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী কোনও মন্তব্য না করলেও জানিয়েছেন একমাসের মধ্যে নতুন শিল্পনীতি ঘোষিত হবে।


তিনি না চাইলে কী হবে, সিবিআইকে এড়াতে পারছেন না তৃণমূল নেত্রী। মামার রেলে ভাগ্নের ঘুষ-কাণ্ড নিয়ে সিবিআই তদন্তে জড়িয়ে গেল রেল মন্ত্রকের তৃণমূল জমানার নিয়োগও। 
বিজয় সিঙ্গলা মুখ পুড়িয়েছেন মামা পবন বনশলের। তার তদন্তে নেমে গত পাঁচ বছরে রেল বোর্ডের শীর্ষ পদে নিয়োগ সংক্রান্ত কোনও অনিয়ম হয়েছে কি না সিবিআই তা তদন্ত করে দেখছে। যার অর্থ, শুধু বনশল নয়, লালু প্রসাদ ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে রেল মন্ত্রক থাকাকালীন রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগে অনিয়ম হয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখছে সিবিআই।
কেন্দ্রকে আক্রমণ করতে গিয়ে তৃণমূল নেত্রী এখন প্রায় নিয়ম করে প্রতিটি সভায় বলছেন, সিবিআইয়ের নাম করে তাঁকে ভয় দেখিয়ে লাভ হবে না। রাজ্যে অর্থলগ্নি সংস্থার প্রতারণা নিয়ে সিবিআই তদন্তের দাবিও মানতে রাজি নন তিনি। যদিও কংগ্রেস-শাসিত অসম ও বামফ্রন্ট-শাসিত ত্রিপুরা সারদা গোষ্ঠীর প্রতারণা-কাণ্ডে সিবিআইয়ের উপরে ভরসা রেখে রাজনৈতিক ভাবে চাপে ফেলেছে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকারের উপরে। সেই চাপ আরও বাড়াল রেলে দুর্নীতি নিয়ে সিবিআইয়ের তদন্ত। রেল বোর্ডের বর্তমান ও প্রাক্তন চেয়ারম্যানের নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে কি না, তা-ও রয়েছে তাদের তদন্তের আওতায়। ওই দুই ব্যক্তিরই নিয়োগ হয়েছিল রেল তৃণমূলের হাতে থাকার সময়। তদন্ত হবে লালু জমানার শেষ পর্যায়ে রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে এস এস খুরানার নিয়োগ নিয়েও। সূত্রের খবর, সিবিআইয়ের একটি দল সোমবারই রেল মন্ত্রকে গিয়ে এ সব নিয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে গিয়েছে। 
সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, সাসপেন্ড হওয়া বোর্ড সদস্য মহেশ কুমার ইতিমধ্যেই কবুল করেছেন, রেল বোর্ডে নিয়োগের পিছনে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই থাকে স্বজনপোষণ বা আর্থিক লেনদেন। প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীর অভিযোগ, দুর্নীতির আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে রেল। মমতার সময়ে রেলে শীর্ষকর্তার নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়ম মানা হয়নি। মমতার আমলেই চেয়ারম্যান পদে বিবেক সহায়ের নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। সহায়ের বিরুদ্ধে সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশনের রিপোর্ট থাকা সত্ত্বেও তাঁকে সদস্য (ট্রাফিক) থেকে চেয়ারম্যান পদে উন্নীত করা হয়। পরের কয়েক মাস তিনি ওই দুই গুরুত্বপূর্ণ পদের যৌথ দায়িত্বে ছিলেন। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে এমন যৌথ দায়িত্ব দিয়ে রাখা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও, তখন কুলুপ এঁটে ছিলেন রেল-কর্তারা। 
অভিযোগ উঠেছে বর্তমান চেয়ারম্যান বিনয় মিত্তলের নিয়োগ নিয়েও। বিবেক সহায় অবসর নেওয়ার পর আনা হয় তাঁকে। অভিজ্ঞতা ও বয়সে তরুণ মিত্তল তখন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার, বোর্ডের সদস্যও নন। অভিযোগ ওঠে, দক্ষিণ-পূর্ব রেলের দায়িত্বে থাকায় মিত্তলের সঙ্গে তৃণমূলের ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছিল। একাধিক ব্যক্তিকে টপকে তাঁকে মন্ত্রকের শীর্ষ পদে বসানো হয়েছে। গত পাঁচ বছরে রেল বোর্ডে যত সদস্য নিয়োগ হয়েছে তারও বিস্তারিত বিবরণ দেখার পরিকল্পনা নিয়েছে সিবিআই। কী কারণে, কীসের ভিত্তিতে তাঁদের নিয়োগ করা হয়েছে তা-ও খতিয়ে দেখবে তারা। আগামী দিনে রেলের ১৭টি জোনের জেনারেল ম্যানেজার নিয়োগের প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখার ইঙ্গিত দিয়েছে সিবিআই। 
ফেডারেশন অফ রেল অফিসার্স' অ্যাসোসিয়েশন-এর কর্তা শুভ্রাংশু এ দিন প্রধানমন্ত্রীর প্রধান সচিব পুলক চট্টোপাধায় ও ক্যাবিনেট সচিব অজিত শেঠকে পাঠানো চিঠিতে রেলে দুর্নীতির পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেছেন। তাঁর বক্তব্য, এই রকম দুর্নীতির ফলে অনেক অফিসার মনোবল হারিয়ে ফেলছেন। প্রশ্ন উঠছে, নিয়োগ-দুর্নীতির প্রশ্নে এখন কেন এতটা সক্রিয় হয়ে উঠল সিবিআই। মহেশই বা কেন নিশানা তাদের? রেল মন্ত্রকের একাংশের বক্তব্য, সিবিআই-প্রধান রঞ্জিত সিন্হার সঙ্গে পুরোনো বিরোধের জেরেই বিপাকে পড়েছেন মহেশ। মমতার আমলে রঞ্জিত সিন্হা আরপিএফ-এর ডিজি ছিলেন। সে সময় মহেশের সঙ্গে তাঁর বিরোধ গড়ায় তৃণমূল নেতৃত্ব পর্যন্ত। সিবিআই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

http://www.abpananda.newsbullet.in/national/60-more/36444-2013-05-08-03-56-31


সারদা-কর্তার চিঠির সংখ্যা নিয়ে জল্পনা উস্কে দিলেন গৌতম দেব

সারদা-কর্তার চিঠির সংখ্যা নিয়ে জল্পনা উস্কে দিলেন গৌতম দেব
শ্যামনগরে আক্রমণাত্মক গৌতম।---কৌশিক রায়।
এই সময়: পুলিশি অনুমতি না মেলায় শ্যামবাজারের ভূপেন বোস অ্যাভেনিউতে সভা করতে না পারলেও পাশের বিধানসরণিতে পালটা সভা করে ফের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তোপ দাগলেন গৌতম দেব৷ চিটফান্ড কেলেঙ্কারি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে তুলোধনা করা ছাড়াও এই কেলেঙ্কারির নায়ক সুদীপ্ত সেন সিবিআইকে একটি চিঠি না দুটি চিঠি পাঠিয়েছেন সেই প্রশ্ন তুলে নতুন জল্পনা উস্কে দিয়েছেন সিপিএমের এই শীর্ষ নেতা৷ সুদীন্ত সেনের দ্বিতীয় চিঠি-ও কিছুদিন পরে প্রকাশ্যে আসবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি৷ গৌতম দেবের কথায়, 'সুদীপ্ত সেনের যে চিঠি বেরিয়েছে সেখানে ২২ জনের নাম আছে৷ কিন্ত্ত সুদীন্ত সেন একটি চিঠি দিয়েছেন না আরও একটি চিঠি দিয়েছে তা-ও বেরোবে৷' সুদীপ্ত সেন একটি না দুটি চিঠি সিবিআইকে দিয়েছেন তা নিয়ে ইতিমধ্যে কানাঘুসো চলছে গৌতম দেবের এই বক্তব্য সেই জল্পনাকে আরও জোরদার করল বলেই মনে করা হচ্ছে৷

শ্যামবাজারে মুখ্যমন্ত্রী সভা করার পর কলকাতা সিপিএম সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারও পালটা সভা করবে ভূপেন বোস অ্যাভেনিউতে৷ কিন্ত্ত পুলিশ সেই অনুমতি দেয়নি৷ ফলে তা নিয়ে এ দিন দুপুর পর্যন্ত সিপিএমের কলকাতা জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে চাপানউতোর চলে লালবাজারের পুলিশ কর্তাদের৷ অনুমতি না দিলেও তাঁরা যে সভা করবেন তা স্পষ্ট ঘোষণা করেন মানব মুখোপাধ্যায়, রঘুনাথ কুশারীর মতো জেলা নেতারা৷ প্রবল চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত পুলিশ বিধানসরণিতে শ্যামবাজার ট্রাম ডিপোর সামনে সভা করার অনুমতি দেয়৷ তড়িঘড়ি সেখানে ছোট্ট মঞ্চ করেন সিপিএম নেতৃত্ব৷ পোস্টে মাইক লাগানোর সুযোগ না মেলায় একাধিক টেম্পোতে গুচ্ছকারে মাইক লাগিয়ে দেন সিপিএম নেতারা৷ ক্ষুব্ধ সিপিএম নেতৃত্ব তাই এ দিন সভার শুরু থেকেই পুলিশের উদ্দেশ্যে তোপ দেগেছেন৷ গৌতম দেবের কথায়, 'এটা অসভ্যতা হচ্ছে৷ এই ভাবে সভা হয়৷ কোনও বসার জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না৷ মানুষ বক্তৃতা শুনতে পাচ্ছে না৷' শাসক দলের চাপ ছাড়াও সভার অনুমতি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত যদি পুলিশ কর্তারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নিজেরা নিয়ে থাকেন তা হলে ভবিষ্যতে তাঁরা বামেদের কোপে পড়তে পারেন তার-ও ইঙ্গিত এ দিন দিয়েছেন গৌতম দেব৷ তাঁর হুঁশিয়ারি, 'কোনও অফিসার যদি নিজের দায়িত্বে এই সব করেন তা হলে চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর পেনশন আটকে যাবে৷' অন্য ঢঙে পুলিশকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অপর সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিমও৷ তাঁর কথায়, 'সভার অনুমতি পাওয়া না পাওয়ার আমরা পরোয়া করি না৷' পুলিশকে কাঠগড়ায় তোলা ছাড়াও মুখ্যমন্ত্রীর দিল্লি সফর এবং চার্টার্ড ফ্লাইটে কলকাতায় ফেরা নিয়ে এ দিন ফের প্রশ্ন তুলেছেন গৌতম দেব, রবীন দেবের মতো সিপিএম নেতারা৷ মুখ্যমন্ত্রী যেদিন ফেরেন সেই দিন এয়ারপোর্টে কে তাঁকে বিদায় জানাতে গিয়েছিলেন সেই প্রশ্ন তুলেছেন গৌতম দেব৷ ৭-১০ এপ্রিল পর্যন্ত দিল্লির অশোকা হোটেলে যে চারজন অতিথি ছিলেন তাঁদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক হয়েছিল কিনা সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি৷ কলকাতাগামী মুখ্যমন্ত্রীর চার্টার্ড ফ্লাইকে কারা কারা ছিলেন তারও একটি তালিকা এ দিন সভায় পেশ করেছেন রবীন দেব৷

ফুটবল ক্লাব কিনতে চেয়েছিলেন সুদীপ্ত


ফুটবল  ক্লাব কিনতে চেয়েছিলেন সুদীপ্ত
দেশপ্রিয় পার্কের একটি গাড়ি থেকে বাজেয়াপ্ত হয়েছ এই মার্সিডিজটি।-----নিজস্ব ছবি।
চিত্রদীপ চক্রবর্তী

কোনও একটি নিদিষ্ট ক্লাবের স্পনসর নয়, আস্ত একটা ফুটবল ক্লাবই কিনে ফেলার চেষ্টায় ছিলেন সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন৷ এবিষয়ে তাঁর উত্সাহ বাড়িয়ে দিয়েছিল প্রয়াগ ইউনাইটেড ক্লাব৷ নিজের ঘনিষ্ঠ মহলে সুদীপ্তবাবু জানিয়ে দিয়েছিলেন ময়দানের একটি ক্লাবের স্পনসর হওয়ার পর তাঁর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে তার চেয়ে নিজের একটি ক্লাব থাকলে মন্দ হত না৷ ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের স্পনসর হিসেবে যে তিক্ত অভিজ্ঞতা তাঁর হয়েছিল সেটাই সারদার অনেক সহকর্মীকে জানিয়েছিলেন তিনি৷

কলকাতার ময়দানে প্রায় ২০/২৫ টি ক্লাব চিটফাণ্ডের টাকাতেই চলে৷ ময়দানের দুই বড়ক্লাবের কর্তাদের সঙ্গে মেলামেশা করে সারদা কর্তা বুঝেছিলেন নিজের একটি ক্লাব থাকলে সমাজের বিভিন্ন স্তরে প্রভাব বিস্তার করার কাজ অনেক সহজে করা যায়৷ কারণ, প্রতিটি ক্লাবের সঙ্গেই রাজনৈতিক নেতাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে৷ কলকাতার ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কর্তা দেবব্রত সরকারকে যে নিয়মিত টাকা দেওয়া হোত সেকথা সিবিআইকে লেখা চিঠিতেই তিনি লিখে গিয়েছেন৷ সেই টাকা পয়সা লেনদেনের বিষয়েই জানতে মঙ্গলবারও ইস্টবেঙ্গল কর্তা দেবব্রত সরকারকে ফের ডেকে পাঠান কমিশনারেটের কর্তারা৷ সেখানে দীর্ঘসময় তাদের জেরা করা হয়৷ ডেকে পাঠানো হয় সজ্জন আগরওয়াল নামে এক ব্যবসায়ীকেও৷ এর আগেও দুজনকে ডেকে জেরা করা হয়েছিল৷

বিধাননগরের গোয়েন্দা প্রধান অর্ণব ঘোষ জানান, দেবব্রত সরকারের মাধ্যমেই সজ্জন আগরওয়ালের সঙ্গে সুদীপ্ত সেনের পরিচয় হয়৷ উত্তরবঙ্গে সজ্জনের একটি চা বাগান রয়েছে৷ নিজের ব্যবসার পরিধি বাড়াবার জন্য উত্তরবঙ্গে চা বাগান করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন৷ এদিন দুপুরে জেরা করা হয় সারদা গোষ্ঠীর অন্যতম ডিরেক্টর দেবিকা দাশগুপ্তকে৷ ২০০৮ সালে সামান্য একজন প্রোগ্রাম অ্যানালিস্ট হিসেবে মাত্র ৬ হাজার টাকার চাকুরে হিসেবে তিনি সারদা গোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছিলেন৷ বর্তমানে মাইনে পেতেন ২০ হাজার টাকা৷ দেবিকা ছিলেন প্রিন্ট এবং পাবলিকেশন বিভাগের ডিরেক্টর৷ পুলিশকে জেরায় তিনি জানিয়েছেন, সুদীপ্ত সেন চাকরিতে যোগ দেওয়ার সময় তাঁকে একটি কাগজে সই করতে বলেন৷ সেসময় তাকে বলা হয়েছিল তাঁর প্রমোশন হবে, সে কারণে সই করানো হচ্ছে৷ পরে দেখা যায় তাকে ডিরেক্টর পদে বসানো হয়েছে৷

এদিন দক্ষিণ কলকাতার দেশপ্রিয় পার্কের তাপস সেনের গ্যারাজ থেকে একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ৷ ধৃতদের জেরা করে এই গাড়িটির বিষয়ে খোঁজ পাওয়া যায়৷ ওই গাড়িটি ব্যবহার করতেন সুদীপ্ত সেনের ছেলে শুভজিত্‍৷ গোয়েন্দা প্রধান বলেন,' ই-৩৫০ মডেলের গাড়িটির বাজার দর ৯৫ লক্ষ টাকা৷ এবছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তা কেনা হয়৷ সম্ভবত বিক্রি করার জন্য গাড়িটি রাখা হয়েছিল ওই গ্যারাজে৷ হরিয়ানার নম্বর প্লেট যুক্ত দামি গাড়িটি বাজেয়াপ্ত করার পর ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানায় তা রাখা হয়েছে৷'

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সুদীপ্ত সেনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মধ্যে আরও প্রায় ১০০টি অ্যাকাউন্টের ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট পুলিশের হাতে এসেছে৷ তবে সব অ্যাকাউন্টেই টাকা খুব একটা বেশি নেই৷ পাশাপাশি এটাও জানা গিয়েছে শুধুমাত্র নিজের নামেই নয়, সুদীপ্ত সেন নিজের আত্মীয়স্বজনের নামেও একাধিক অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন৷ পুলিশ কর্তারা জানাচ্ছেন, বৃহস্পতিবার আমানতকারিদের করা একটি অভিযোগের মামলায় সুদীপ্ত সেনকে আবার আদালতে তোলা হবে৷ এদিকে, সি বি আইকে যে চিঠি সুদীপ্ত সেন লিখেছেন তা যে কোনও নেতার উপস্থিতিতে লেখা হয়েছে সে বিষয়ে পুলিশ নিশ্চিত৷ এবং তাতে যে আইনজীবীর সাহায্য নেওয়া হয়েছিল তার সঙ্গেও পুলিশ কর্তারা কথা বলেছেন৷

গুচ্ছের মামলায় মহাফাঁপরে এখন পুলিশই

অমিত চক্রবর্তী

জেলায় জেলায় সারদার বিরুদ্ধে মামলার পাহাড় জমছে৷ সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত শ'দুয়েক মামলা রুজু হয়েছে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন থানায়৷ প্রতি দিনই সংখ্যাটা বাড়ছে৷ আর পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মামলা নিয়ে জটিলতাও৷ মামলার সংখ্যা বাড়তে থাকায় শেষমেশ পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে রাজ্য পুলিশের শীর্ষস্তরেও৷ সুদীপ্ত সেন ও দেবযানী মুখোপাধ্যায়দের প্রথম দফা পুলিশি হেফাজতের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামিকাল, বৃহস্পতিবার৷ ফের তাঁদের হেফাজতে নিতে চায় বিধাননগর সিটি পুলিশ৷ কিন্ত্ত রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে দায়ের গুচ্ছের মামলার তদন্তে সারদাকর্তাকে হেফাজতে চাইছে জেলা পুলিশও৷

এত মামলায় মূল অভিযুক্তদের সারা রাজ্যে ঘোরানো হলে কয়েক বছর সুদীপ্তদের পুলিশ হেফাজতেই থাকতে হবে৷ আইনজীবীরা বলছেন, এমন জটিল অবস্থায় অভিযুক্তদের আইনজীবীরা অবশ্য হাইকোর্টের কাছে সব মামলা একত্র করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করতে পারেন৷ কিন্ত্ত সে ক্ষেত্রেও প্রশ্ন, মূলত প্রতারণার অভিযোগ হলেও অন্যান্য মামলায় জেলাগুলির পুলিশ তাঁদের হেফাজতে পাবে কি না৷ আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ যদিও বলছেন, 'মাওবাদীদের ক্ষেত্রে যেমন হয়, এ ক্ষেত্রেও তেমন হতে পারে৷ মাওবাদীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ থাকে৷ সে ক্ষেত্রে এক মামলায় জামিন পেলে অন্য থানার পুলিশ পৃথক মামলায় গ্রেপ্তার করে ফের হেফাজতে নেয়৷ তবে এ ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে আবেদন করলে একটি মূল-মামলা ধরে অন্য মামলাগুলি জুড়ে দেওয়া হতে পারে৷' এর পরেও অবশ্য মামলার গতিপ্রকৃতি কী হবে তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন প্রবীণ এই আইনজ্ঞও৷

মামলা নিয়ে পরিস্থিতি জটিল বলে মনে করছেন আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চ‌ট্টোপাধ্যায়ও৷ তাঁর ব্যাখ্যা, আদালত নির্দেশ দিলে ধৃতদের 'শোন অ্যারেস্ট' দেখিয়ে সব মামলা এক জায়গায় করা যেতে পারে৷ সে ক্ষেত্রে প্রথম মামলায় পুলিশ হেফাজতের পর ধৃতদের জেল হেফাজত হলে তাঁদের নতুন করে আর গ্রেপ্তার করা যাবে না৷ আবার উচ্চ আদালত যদি সব মামলা একটি কোর্টে চালানোর অনুমতি না দেয়, সে ক্ষেত্রে ট্রায়াল চলাকালীন সব জেলাতেই ধৃতদের নিয়ে যেতে হবে৷

আইনজীবীরা পাশাপাশি এটাও বলছেন, এমন জটিল মামলায় অনেক ক্ষেত্রে আইনের ফাঁক গলে অভিযুক্তরা বেরিয়েও যায়৷ সারদা-মামলায় তাঁরা মনে করছেন, বাস্তব পরিস্থিতি এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ীই মামলা এগোতে পারে৷ তবে সব মামলা একসঙ্গে যুক্ত হলেও, পৃথক মামলায় পৃথক চার্জশিট দিতে হবে পুলিশকে৷ 

এই অবস্থায় সুদীপ্তবাবুর আইনজীবী সমীর দাসের বক্তব্য, 'আর দু'দিন গোটা পরিস্থিতি দেখে নিয়েই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে৷ সব মামলা এক জায়গায় করার জন্য উচ্চ আদালতেও যেতে পারি৷' দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতাও ইঙ্গিত দিচ্ছেন, মক্কেলের টানাহ্যাঁচড়া ঠেকাতে আদালতেই আবেদন করবেন৷ 

জেলায়-জেলায় সারদা মামলা
উত্তর চব্বিশ পরগনা ২৮
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা ৩০
বিধাননগর কমিশনারেট ৭
ব্যারাকপুর কমিশনারেট ৭
হাওড়া কমিশনারেট ১
আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেট ২
বর্ধমান ৬
বাঁকুড়া ৪
বীরভূম ৮
পূর্ব মেদিনীপুর ৮
মুর্শিদাবাদ ১০
নদিয়া ৬
মালদহ ৭
কোচবিহার ৫
উত্তর দিনাজপুর ৪
দক্ষিণ দিনাজপুর ২৮
জলপাইগুড়ি ১০
শিলিগুড়ি কমিশনারেট ৬
পশ্চিম মেদিনীপুর, হুগলিতেও বেশ কয়েকটি অভিযোগ রয়েছে

সারদার আমানতকারী, এজেন্টদের টাকা 
ফেরতের ব্যবস্থা না করলে মহাকরণ অভিযান 
কনভেনশন থেকে হুঁশিয়ারি ছাত্র-যুব-মহিলাদের

নিজস্ব প্রতিনিধি

কলকাতা, ৭ই মে— এখনই সারদা কাণ্ডে সমস্ত অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে আমানতকারী ও এজেন্টদের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা না করলে মহাকরণ অভিযানে শামিল হবেন রাজ্যের বামপন্থী ছাত্র-যুব-মহিলা সংগঠনের কর্মী সদস্যরা। সেই দিন 'কিছুই জানতাম না বলে দাবি করা' মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য মন্ত্রীদের কাছে সরাসরি চাওয়া হবে সমস্ত প্রশ্নের জবাব। রাজ্যের গরিব মানুষের স্বার্থ রক্ষা নাকি কোটি কোটি টাকা লুণ্ঠনকারী ও তাদের মদতদাতাদের আড়াল করার চেষ্টা, রাজ্য সরকারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ কোন্‌টা—জানতে চাওয়া হবে এর উত্তর। জানতে চাওয়া হবে ছাত্রনেতা সুদীপ্ত গুপ্তর হত্যাকাণ্ডের মতো এক ঘৃণ্য কাজের কী প্রতিবিধান করলো শাসক দল। সাধারণ মানুষের এইসব প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলে ক্ষমতায় থাকার অধিকার থাকে না এই সরকারের। মঙ্গলবার কলেজ স্ট্রিটের অবস্থান বিক্ষোভ মঞ্চ থেকে রাজ্য সরকারকে স্পষ্ট ভাষায় এই হুঁশিয়ারিই দিল ১৬টি বামপন্থী ছাত্র-যুব- মহিলা সংগঠন। 

সারদা জালিয়াতি কাণ্ডে একের পর এক বেরিয়ে আসছে নানা বিস্ফোরক তথ্য। ক্রমশই ফাঁসছেন তৃণমূলের শাসক দলের মন্ত্রী, বিধায়ক, সাংসদ, আমলারা। একদিকে রাজ্যজুড়ে আমানতকারী ও এজেন্টদের আত্মহত্যা বাড়ছে, অন্যদিকে পুলিসী তদন্তকে নিজেদের অনুকূলে নিয়ে আসতে চাইছে রাজ্য সরকার। সব জেনে বুঝেও চুপ করে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এইভাবে দোষীদের আড়াল করা চলবে না বলে এদিন স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন ছাত্র-যুব-মহিলা সংগঠনের কর্মী সদস্য ও নেতা-নেত্রীরা। তাঁরা বলেন, রাজ্যের গরিব মানুষের সর্বনাশ করে পার পাবে না কেউই। ভণ্ডামির মুখোশ পরা লুটের ভাগিদার এই সরকারকে সাধারণ মানুষের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। না হলে অচিরেই সরে যেতে হবে ক্ষমতা থেকে। তাদের টেনে নামাবে সাধারণ মানুষই।

এদিন কলেজ স্ট্রিটে এক গণ-অবস্থানে শামিল হন ১৬টি বামপন্থী ছাত্র-যুব-মহিলা সংগঠনের কর্মী সদস্যরা। অবস্থান চলবে বুধবার পর্যন্ত। ডি ওয়াই এফ আই, এস এফ আই, পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি ছাড়াও সমাবেশে যোগ দেয় এ আই ওয়াই এফ, এ আই ওয়াই এল, আর ওয়াই এফ, এস ওয়াই এস, আর ওয়াই বি, ওয়াই ডি এস পি, পি ওয়াই এফ আই, এ আই এস এফ, এ আই এস বি, পি এস ইউ, পশ্চিমবঙ্গ মহিলা সমিতি, অগ্রগামী মহিলা সমিতি ও নিখিলবঙ্গ মহিলা সমিতি। সভা পরিচালনা করেন সাবিত্রী মজুমদার, আভাস রায়চৌধুরী, মধুজা সেনরায়, অজয় অগ্নিহোত্রী, শশী অগ্নিহোত্রী, বন্দনা রায়চৌধুরী, সব্যসাচী ভট্টাচার্য, মৌসুমী ঘোষ, তারা দে, সমীর ঘোষকে নিয়ে গঠিত এক সভাপতিমণ্ডলী। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন মিনতি ঘোষ, দেবজ্যোতি দাস সহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন চন্দনা ঘোষদস্তিদার, দেবজ্যোতি দাস, তাপস সিনহা, অপরাজিতা গোপ্পী, জয়ন্ত দাসমহাপাত্র, মৃন্ময় সেনগুপ্ত প্রমুখ।

অবস্থান মঞ্চে দাঁড়িয়ে তাঁরা বলেন, গোটা রাজ্যজুড়েই চলছে এক চরম বিশৃঙ্খলা। শিক্ষাক্ষেত্র থেকে শুরু করে সামাজিক ক্ষেত্র—সমস্ত ক্ষেত্রেই নৈরাজ্য ও সন্ত্রাস। রাজ্যজুড়ে ব্যাপকভাবে বেড়েছে ধর্ষণের ঘটনা, বেড়েছে বামপন্থীদের ওপর আক্রমণ। আক্রান্ত অসংখ্য পার্টি অফিস। শিক্ষাক্ষেত্রে আক্রমণ ঘটেছে দিনের পর দিন। ছাত্ররা এর প্রতিবাদ জানালে জোর করে দমিয়ে দেওয়া হচ্ছে মারধর করে। সুদীপ্ত গুপ্তকে হত্যা করা হয়েছে এভাবেই। কিন্তু সব কিছুকে ছাপিয়ে গেছে অর্থলোলুপদের উল্লাসধ্বনি। লক্ষ লক্ষ গরিব মানুষের টাকা আত্মসাৎ করা এক চিটফান্ডের মদত দিয়েছে তৃণমূল সরকার। টাকা নেওয়ার প্রমাণ মিলছে শাসক দলের নেতা মন্ত্রীদের মধ্যেই। মুখ্যমন্ত্রী নাকি এসবের কিছুই জানতেন না। অথচ সমস্ত ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা করছেন। এর আগে বামফ্রন্ট সরকার চিট ফান্ডের প্রতারণা রুখতে যে বিল এনেছিল রাষ্ট্রপতির সই না হওয়ায় তা আইনে পরিণত হয়নি। অথচ এখন পুরানো বিলটি বাতিল করে নতুন বিল এনেছে রাজ্য সরকার। এর ফলে চিট ফান্ড কেলেঙ্কারির মূল অভিযুক্ত ও মদতদাতাদের কতটা শাস্তি হবে তা নিয়ে সংশয় থেকে যাচ্ছে। এসবের বিরুদ্ধেই পথে নেমেছে ১৬টি বামপন্থী ছাত্র-যুব-মহিলা সংগঠন। লাগাতার এই আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনগুলির নেতৃবৃন্দ।

http://ganashakti.com/bengali/news_details.php?newsid=40224


অসমের পথেই এগোল ত্রিপুরা
রাজ্য: সিবিআই রাজি সারদায়, চাপে তৃণমূল
সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত নিয়ে ক্রমেই চাপ বাড়ছে রাজ্য সরকারের উপর। প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক, দু'ভাবেই। 
মঙ্গলবারই কলকাতা হাইকোর্টে হলফনামা দাখিল করে সিবিআই জানিয়ে দিয়েছে, আদালত নির্দেশ দিলে তদন্ত করতে তাদের কোনও আপত্তি নেই। এই হলফনামা পাওয়ার পরে আজ, বুধবারই হাইকোর্ট এই সংক্রান্ত জনস্বার্থ মামলার রায় দিয়ে দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই সিবিআই তদন্ত চেয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে অসম সরকার। এ দিন রাজ্যে অভিযুক্ত লগ্নি সংস্থাগুলির কাজকর্ম নিয়ে তদন্তের ভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ত্রিপুরাও। সমস্ত তথ্য দু'এক দিনের মধ্যেই সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। 
একের পর এক রাজ্য সরকার সিবিআইয়ের দ্বারস্থ হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই চাপ বাড়ছে মমতার সরকারের উপরে। সেই চাপ আরও বাড়াতে আগামিকাল, বৃহস্পতিবার দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে যাচ্ছে বাম প্রতিনিধিদল। সারদা কাণ্ডের সিবিআই তদন্ত-সহ এক গুচ্ছ দাবিতে। মঙ্গলবার বামফ্রন্টের বৈঠকে আদালতের নজরদারিতে সিবিআই তদন্তের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলার সিদ্ধান্তও হয়েছে।
সিবিআই তদন্তের দাবিতে সরব সিপিএম। মঙ্গলবার শ্যামবাজারের জনসভায়।—নিজস্ব চিত্র।
সারদা কাণ্ডে সিবিআই মামলা চেয়ে জনস্বার্থের মামলায় রাজ্য সরকার যে হলফনামা জমা দিয়েছে, তাতে অবশ্য বলা হয়েছে, পুলিশি তদন্ত যে ভাবে চলছে তাতে এখন সিবিআই তদন্তের কোনও প্রয়োজন নেই। এ ব্যাপারে সিবিআইয়ের বক্তব্যও জানতে চেয়েছিল আদালত। সিবিআইয়ের তরফে আগেই বলা হয়েছিল, আদালত চাইলে তাদের তদন্ত করতে কোনও আপত্তি নেই। এ দিন প্রধান বিচারপতি অরুণকুমার মিশ্র এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর এজলাসে জমা দেওয়া হলফনামায় সিবিআইয়ের অর্থনৈতিক অপরাধ শাখার এসপি রঞ্জন বিশ্বাস জানিয়েছেন, 'মহামান্য আদালত সারদা-কাণ্ডের তদন্তভার তাদের উপরে অর্পণ করলে সিবিআইয়ের কোনও আপত্তি নেই। তবে তদন্তের সময়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং সংশ্লিষ্ট অন্য রাজ্য সরকার যাতে যথেষ্ট সংখ্যক কর্মী (সিবিআই যা চাইবে) ও অন্য পরিকাঠামো (তদন্তের স্বার্থে) সরবরাহ করে, সে বিষয়ে হাইকোর্টকে নির্দেশিকা জারি করতে হবে'।
টাকা ফেরতের আশায়। নথি জমা দিতে ভিড় কমিশনে। —নিজস্ব চিত্র।
সিবিআই সূত্র জানাচ্ছে, অসমে তদন্তের প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই শুরু করে দেওয়া হয়েছে। এক সিবিআই কর্তার কথায়, "অসমে তদন্ত শুরু করার আগে গুয়াহাটির কোনও একটি থানায় আমরা মামলা দায়ের করব। সেখানে সুদীপ্ত সেনকেই মূল অভিযুক্ত দেখানো হবে। যে হেতু সারদার সদর দফতর কলকাতায়, তাই তদন্তের কাজে অসমের সিবিআই দলকে কলকাতায় আসতেই হবে। এ রাজ্যের তদন্তকারী সংস্থা সাহায্য না করলে আমরা গুয়াহাটি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হব।" 
তৃণমূল এবং রাজ্য সরকার অবশ্য এখনও সিবিআই-বিরোধিতার অবস্থানে অনড়। তৃণমূল মহাসচিব তথা শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, নন্দীগ্রাম বা নেতাই কাণ্ডের পরে কেন বাম সরকার সিবিআই তদন্তে রাজি হয়নি? যার জবাবে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেছেন, "নন্দীগ্রাম বা নেতাইয়ের ঘটনা ছিল আইনশৃঙ্খলার বিষয়। আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত। সেই কারণেই রাজ্য সিবিআই চায়নি।"এ দিনই উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগরে (দু'দিন আগে যে মাঠে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, গৌতম দেবরা সভা করেছিলেন, সেখানেই) সভা করে মুকুল রায় ও সুব্রত বক্সী বলেন, "আত্মরক্ষার জন্য কংগ্রেস এবং সিপিএম সিবিআই চাইছে! কারণ, ওদের দলের অনেক নেতাই এই চিট ফান্ড কাণ্ডে জড়িত। মানুষ জানেন, সিবিআইয়ের নিরপেক্ষতা কোথায়? যেখানে সিবিআই প্রধান নিজেই বলছেন, তাঁরা সরকারি নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন, সেই সিবিআই-কেই ওঁরা চাইছেন!" 
আবার শ্যামবাজারে মমতার পাল্টা সভায় সিবিআই তদন্তের পাশাপাশি সর্বদল বৈঠক ডাকারও দাবি তুলেছে সিপিএম। কলকাতা পুরসভার অনুষ্ঠান রয়েছে, এই যুক্তিতে মমতা ঠিক যেখানে সভা করেছিলেন, সেখানে সিপিএম-কে সভা করার অনুমতি দেয়নি পুলিশ। শ্যামবাজার ট্রাম ডিপোর সামনে ম্যাটাডোরকে মঞ্চ করে সভা করে তারা। সেখানে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দেব বলেন, "আমরা সারদা কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত দাবি করছি। প্রতিদিন বহু মানুষ আত্মহত্যা করছেন। এই অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রী বাংলার স্বার্থে সর্বদল বৈঠক ডাকুন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, অশোক ঘোষ, কংগ্রেসের প্রদীপ ভট্টাচার্য সকলকে ডেকে পরামর্শ নিন।" 
সিপিএম সূত্রের বক্তব্য, তারা কেবল সারদা-কাণ্ডের রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চায় না। ক্ষতিগ্রস্ত আমানতকারী এবং এজেন্টদের পাশেও দাঁড়াতে চায়। সেই কারণেই সর্বদল বৈঠকের প্রস্তাব। গৌতমবাবুর কথায়, "সর্বদল বৈঠক ডাকলে মানুষের কাছে একটা বার্তা যাবে। রাজনীতি তো হচ্ছেই! কিন্তু মানুষের কথাও ভাবুন।" এ কথা বললেও তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গারও কিছু কম করেননি সিপিএম নেতারা। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মহম্মদ সেলিম যেমন বলেন, "পরিবর্তনের মুখ হিসেবে যাঁরা বামফ্রন্টকে হঠাতে নেমেছিলেন, তাঁদের বাড়িতে তল্লাশি করতে হবে। তা হলেও সারদার টাকা উদ্ধার করা যাবে।" 
সারদা কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের পাশাপাশি ছাত্র নেতা সুদীপ্ত গুপ্তের মৃত্যুর বিচারবিভাগীয় তদন্ত, আইনশৃঙ্খলার অবনতি-সহ ৭ দফা দাবিতে এক গুচ্ছ আন্দোলনের কথা ঘোষণা করেছে বামফ্রন্ট। ২৭-২৯ মে জেলার কেন্দ্রীয় সরকারি অফিস, ডাকঘরের সামনে ৪ ঘণ্টা করে অবস্থান করা হবে। কলকাতায় ৩১ মে কেন্দ্রীয় ভাবে আইন-অমান্য হবে। যেখানে অংশ নেবেন রাজ্যের বাম নেতারা। 
বামেদের পাশাপাশি আসরে নেমেছে বিজেপি-ও। সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত এবং সেবি-র পাঠানো তালিকাভুক্ত ৭৩টি সংস্থা গুটিয়ে না-দিয়ে কেবল তাদের আর্থিক অন্যায় বন্ধ করার দাবিতে এ দিন রাজ্যপালের দ্বারস্থ হয়েছে তারা। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের বক্তব্য, ওই ৭৩টি সংস্থা বন্ধ হয়ে গেলে রাজ্যে নতুন করে বিরাট বেকার বাহিনী তৈরি হবে। আত্মহত্যা বাড়বে এবং আইনশৃঙ্খলার আরও অবনতি হবে। তাই ওই সংস্থাগুলির কর্মীদের চাকরি বাঁচিয়ে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা দরকার।

http://www.anandabazar.com/8raj1.html

No comments:

Post a Comment