পূর্ব পাকিস্তানের উদ্বাস্তু – সংস্কৃতির সংঘাত
Posted by bangalnama on December 22, 2010
http://bangalnama.wordpress.com/2010/12/22/purba-pakistaner-udbastu-sanskritir-sanghat/
- লিখেছেন সরজিৎ মজুমদার
"দিদি, এক বাটি আটা দিতে পারেন? কাইল সক্কালে গম ভাঙ্গাইয়া আনলে ফিরত দিয়া দিমু।" পাশের বাড়ির মাসিমার কাছে আটা ধার নিয়ে এক রাত্রির খাওয়া। মাসিমাও তাঁর প্রয়োজনে কোন জিনিস ধার নিয়ে কাজ চালাতেন। এই দেওয়া নেওয়া চলত ১৯৪৭-এর পর পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত সহায় সম্বলহীন উদ্বাস্তু কলোনির বাসিন্দাদের মধ্যে। এরাই বাঙ্গাল। সবারই অবস্থা সমান। সকলেরই জবর দখল করা জমিতে বসবাস। তাই নাম উপনিবেশ বা কলোনি। প্রতিবেশীর কাছে এই ধরণের গৃহস্থালী প্রয়োজনীয় বস্তু ধার নেওয়ার চল ছিল পশ্চিম পাকিস্থান থেকে উচ্ছিন্ন পাঞ্জাবী শরণার্থী পরিবারদের মধ্যেও। হিন্দি সিনেমায় ছিন্নমূল পাঞ্জাবীদের এই ধরণের আটা, চিনি ধার করা ব্যঙ্গাত্মক চরিত্রে দেখানো হয় অপাঞ্জাবীদের মনোরঞ্জনের জন্য। এর পিছনে যে একদল মানুষের সমূলে উচ্ছেদের, জাতি-দাঙ্গার করুণ কাহিনী আছে তা কেউ জানাল না, জানল না। দেশছাড়াদের যন্ত্রণা কেই বা তেমন করে বোঝে? প্রখর বুদ্ধি বা অনুভবি মন থাকলেই এই যন্ত্রণা বোঝা যাবে না। পরের প্রজন্ম, আমাদেরই ছেলেমেয়েরা, আমাদের অতীতের ভয়াবহ সামাজিক সংঘাত, নতুন দেশে বাস, নতুন পরিবেশ, ভিন্ন সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে দারিদ্র্যের সঙ্গে সংগ্রামের কষ্ট বোঝে না। দূরের মানুষ বুঝবে সে আশা কোথায়?
১৯৪৬-এর নোয়াখালির দাঙ্গা পরবর্তী সময়ে অনেক মানুষ বিষয় সম্পত্তি বিক্রি করে পূর্ব পাকিস্তানের পাট চুকিয়ে কলকাতা ও অন্যান্য জেলায় নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছিল। যারা সেখানেই পড়েছিল ১৯৪৭-এ নেহরু-জিন্নার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দেশ ভাগাভাগি তাদের আচমকা ধাক্কা দিল। শুরু হল অনিশ্চয়তা এবং আবার দাঙ্গার আশঙ্কা। পশ্চিমবঙ্গে স্থিতু মানুষরা হয়ত ১৯৪৭-এর ১৫ই অগাস্ট স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করেছে। যারা জাতি-দাঙ্গার রক্তরূপ দেখেছে তাদের পূর্ববাংলার ত্রস্ত দিনগুলোতে স্বাধীনতার স্বাদ নেওয়া হয় নি। ১৯৪৯-এ আবার দাঙ্গা শুরু। এবার দাঙ্গা লাগল খুলনা, ঢাকা, রাজশাহী, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ জেলাগুলোতে। ভীতি-আচ্ছন্ন মানুষ দেশভাগের পর যেদিকে "আমাদের লোক" সেদিকে যাওয়াই নিরাপদ মনে করে হাজারে হাজারে শরণার্থী হয়ে চলেছিল পশ্চিমবঙ্গ অভিমুখে। কেউ এসে উঠল আত্মীয়ের বাড়ি, কেউ শরণার্থী ক্যাম্পে, কেউ জায়গা না পেয়ে শিয়ালদহ স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম-এ। অনেকে পশ্চিম দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি, কুচবিহারের দিকেও গিয়েছিল। বেশ কিছু উদ্বাস্তুকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল আন্দামান ও দন্ডকারণ্যে। সেই ১৯৪৭-এ শরণার্থীদের ভারতে আসার স্রোত কিন্তু আজও বন্ধ হয় নি, যদিও সরকার ইদানীং কালে আসা মানুষদের উদ্বাস্তু বলে স্বীকার করে না।
কলকাতার উপকন্ঠে কলোনিগুলো তৈরি হয়েছিল ১৯৪৯-৫০ নাগাদ। টালিগঞ্জ, যাদবপুর, বাঘাযতীন, অঞ্চলে বিভিন্ন জমিদারের অব্যবহৃত-উদ্বৃত্ত জমি দখল করে শুরু হল কলোনিতে বসবাস। আমরা কলোনিতে ঠাঁই নিলাম ১৯৫৪ সালে।
১৯৫০-এ পূর্ব পাকিস্তান থেকে যখন কলকাতা আসি আমি তখন খুবই ছোট। বয়স তিন কী চার বছর। টুকরো টুকরো স্মৃতি জড়িয়ে আছে পূর্ব পাকিস্তান ও শহর কলকাতার। মনে পড়ে গরুর গাড়ি করে নোয়াখালির এক গ্রাম ছেড়ে চলে আসার সময় বাড়ির নেড়ী কুকুর, ভুলু, অনেকটা পথ পেছনে পেছন এসেছিল। ভুলুর অনুসরণ দেখতে ভাল লাগছিল বটে। শিশু ছিলাম, জানতাম না ভুলুকে আর কোনদিন দেখতে পাব না। এসে আশ্রয় নিলাম চারঘর আত্মীয় পরিবার একসঙ্গে খিদিরপুরে এক ভাড়া বাড়িতে। মোট ৬০০ বর্গ ফুটের দুই ঘর এক বারান্দায় চার পরিবারের ২১ জন মানুষের বাসস্থান। পূর্ব পাকিস্তানে তুলনায় অপ্রতুল জায়গা।
আত্মীয় পরিজনদের দাদা-স্থানীয় প্রায় সকলেই শিক্ষা শেষ করে এদেশে এসেছিলেন এবং ১৯৫৩ সালের মধ্যে চাকরি জোগাড় করে অন্যত্র ভাড়া বাড়িতে চলে যান। আমার অগ্রজদের তখনও স্কুলশিক্ষা শেষ হয় নি। তাঁদের শিক্ষার পাট চুকতেই অবশেষে আমরা উদ্বাস্তু কলোনিতে ঠাঁই নিলাম। কলোনিতে আসার আগে আমার স্কুলে যাওয়া শুরু হয় নি। কারণ কোথায় গিয়ে স্থায়ী হব তা অনিশ্চিত ছিল। পশ্চিমবঙ্গে এসে দেখতাম পিতৃদেবের সম্পত্তি-হারানো ইংরেজ-সরকারের-৬৬-টাকা-পেনশন-সম্বল অসহায় মুখ, আর মাতৃদেবীর কঠিন মুখ – অভাবী বাস্তবের মোকাবিলায় সর্বদা প্রস্তুত। ছয় জনের পরিবারের বোঝা কম নয়। বাড়িতে দুই বেকার দাদা, স্কুলে পাঠরত দুজন – দিদি ও আমি। উদ্বাস্তুদের বরাদ্দ সরকারি স্টাইপেন্ড না পেলে কতদূর পড়াশুনা করতে পারতাম জানি না।
উদ্বাস্তু কলোনির মানুষদের ছিল অনেকটা গোষ্ঠীবদ্ধ জীবন। কলোনিবাসীদের মধ্যে অনেকেই ছিল ছোট এবং মাঝারি চাষী পরিবারের, যারা পূর্ব পাকিস্তানে ভিটেমাটি ছেড়ে এই বাংলায় আশ্রয় নিয়েছিল। আবার অজস্র ভূমিহীন উদ্বাস্তুও এসেছিল সেই সময়। দেশের কৃষক এবং ভূমিহীন পরিবারের পার্থক্য কলোনিতে এসে বরাবর। সব পরিবারেই শোনা যেত ফুল্লরার বারোমাস্যা। প্রতিবেশীর মধ্যে এটা সেটা ধার করা যেমন ছিল, তেমনি ছিল ব্যতিক্রমী কিছু খাবার তৈরি হলে প্রতিবেশীকে ভাগ দেওয়া। সবার বাড়িতে ঘড়ির মত প্রয়োজনীয় যন্ত্রও ছিল না। পাশে যার বাড়িতে ঘড়ি ছিল তার কাছে সময় জেনে নিতে হত। এক বাড়ির খবরের কাগজ তিন চার বাড়ির লোকে পড়ত। খেলায় উৎসাহী ছোটরা বড়দের কাছে খবর জেনে নিত ইস্টবেঙ্গল ক'টা গোল দিয়েছে। রেডিও ছিল বিলাসিতা। রবিবার অনুরোধের আসরের গান শুনতে যেতে হত অন্য পাড়ায়। যে বাড়িতে রেডিও ছিল সেই বাড়ির রাস্তার ধারে বসে একদল ছেলে গান শুনতাম।
এছাড়াও জমি দখলের সংগ্রাম ভেদাভেদমুক্ত পরিবারগুলোকে নিবিড়ভাবে জুড়ে দিয়েছিল। যেসব জমিদারিতে কলোনি গড়ে উঠল সেই জমিদারও ছাড়বার পাত্র নন। তারা রাতে লেঠেল পাঠাত বসতি উৎখাতের জন্য। কলোনিবাসীরা লেঠেল বাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য সকলে একসাথে লড়াই করত। সবারই উদ্দেশ্য এক – আশ্রয়টুকু ধরে রাখা।
কলোনির পরিবেশ পূর্ব পাকিস্তানে ফেলে আসা পরিবেশ থেকে খুব একটা আলাদা ছিল না। অন্তত খিদিরপুরের রুক্ষ কংক্রিট-সর্বস্ব পরিবেশের থেকে অনেক বেশি সহনীয় ছিল। গাছ গাছালি, মাঠ, পুকুর, টিনের চালার বেড়ার বাড়ি, মাটির মেঝে, সবই ছিল পরিচিত। ছিল না শুধু চাষের জমি এবং খাদ্য নিশ্চয়তা। সামর্থ্য অনুযায়ী অল্পেই সন্তুষ্ট থাকার অভ্যাস তৈরি হয়েছিল মায়ের কঠিন শৃঙ্খলায়, অনুশাসনে। ঘরে, বাইরে পিতৃস্থানীয়রা কলোনির ছেলেমেয়েদের ভালভাবে বড় হয়ে ওঠার এবং জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার "প্রাথমিক সূত্র" ধরিয়ে দিয়েছিলেন – "পড়াশুনা করে বৃহত্তর সমাজের দরবারে নিজেদের তুলে ধর"। কলোনির ঘরে ঘরে পড়াশুনার চল ছিল। "প্রাথমিক সূত্রের" জোরে আজ অনেকেই পৃথিবীর নানা দেশে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের নাম উজ্জ্বল করেছে।
সকলের বেশিদূর পড়াশুনা সম্ভব হয় নি। আর্থিক অনটনের দরুণ বৃদ্ধ বাবা-মা'র ১৫ বছরের জ্যেষ্ঠ পুত্রকে স্কুলের পড়া ছেড়ে আই.টি.আই-তে কারিগরি শিক্ষা নিয়ে চাকরিতে যোগ দিতে হয়েছে। ১৯৫০-৬০-এর দশকে পশ্চিমবঙ্গ ছিল সারা ভারতের বৃহত্তম শিল্প কেন্দ্র। কারিগরি শিক্ষা শেষে চাকরি পেতে কারুর অসুবিধা হয় নি। স্কুলছুট হলেও উদ্বাস্তু প্রতিবেশীদের মধ্যে জোরালো সদ্ভাব অটুট ছিল। সদ্ভাবে ভাটা পড়েছে ১৯৮০-এর দশকের পরে।
কলোনির ভিতরে সবাই আমরা সমান ছিলাম, দু একটা পরিবার বাদে। কলোনি তৈরি হওয়ার আগেই ঐসব অঞ্চলে কিছু কিছু ব্যক্তিমালিকানার ঘর বাড়ি ছিল। সেসব বাড়ির ছেলেমেয়েরা আমাদের সঙ্গে বিশেষ মিশত না। তারা কলোনির স্কুলে – গরিবী চেতনার আতুরঘরে – পড়তে আসত না। তারা পড়ত সাউথ পয়েন্ট, তীর্থপতি ইন্সটিট্যুশনের মত স্কুলে। ছোট ছিলাম, এই বিভেদ বোঝার বুদ্ধি হয় নি। তাছাড়া এই সামান্য দু'একটা পরিবারের উন্নাসিকতা মনে কোন দাগও কাটেনি। এখন ফিরে তাকালে বুঝতে পারি এটা ছিল সংস্কৃতির বিভেদ।
কিন্তু কলেজ জীবনে কলোনির বাইরে যখন পা বাড়ালাম তখন বুঝলাম বাঙ্গাল উদ্বাস্তুরা কলকাতার বনেদি মানুষের কাছে এক আজব প্রাণী। রানীকুঠিতে সরকারি আবাসনের পাশেই কলকাতার বনেদি কিছু পরিবারের ব্যক্তিগত বাড়ি আছে। সেই আবাসন ও বাড়িগুলো ১৯৭০-এর দশকে দেওয়াল ঘেরা এক বাদা জমিতে গড়ে ওঠে। সেই বাড়িগুলোর দুই মালিকের কথোপকথনে পার্শ্ববর্তী উদ্বাস্তুদের সম্বন্ধে তাঁদের দৃষ্টিকোণ পরিষ্কার বুঝতে পেরেছিলাম। এক মালিক রানীকুঠি অঞ্চলে বাড়ি তৈরি করতে সাহস পাচ্ছিলেন না। তাঁর ধারণা একে কলোনি অঞ্চল, তার ওপর কচুবন, ঝোপঝাড়ে ভরা জায়গা নিশ্চয়ই শহুরে বাবুদের পক্ষে ভাল হবে না। তাকে আর এক মালিক অভয় দিয়ে বললেন "কচুবন কোথায়? সে তো বাঙ্গালরা খেয়েই সাফ করে দিয়েছে।" বাঙ্গালরা জঞ্জাল খেয়ে সাফ করে দিলে কলকাতার বাবুদের থাকতে আর বাধা কোথায়? কলকাতার উপকন্ঠে আমরা যেন কিছু অবমানব।
তারও আগে ১৯৬৯ সালে যখন এম.এ পড়ি তখন আরও মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা হয়েছিল। প্রেসিডেন্সি কলেজের এক বন্ধুকে বাক্য গঠনের মাধ্যমে পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন জেলার dialect-এর সূক্ষ্ম পার্থক্যগুলো বলেছিলাম। বন্ধুটি মজা পেয়ে সম্ভবত আমার অন্য সহপাঠীদের এবিষয়ে কিছু বলেছিল। একদিন উত্তর কলকাতার ফটফটিয়ে-ইংরাজি-বলা বনেদি বসু পরিবারের এক সহপাঠী আমাকে মাঠে বসিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিল, "এই তুই না কী অনেক খিস্তি জানিস! আমাদের একটু শোনাবি?" প্রথমে বুঝতে অসুবিধা হলেও খানিক্ষণ পরে বুঝেছিলাম সে পূর্ববঙ্গের dialect, যা তার ভাষায় "খিস্তি", শুনতে চায়। একে বাঙ্গাল, তাহে উদ্বাস্তু। তাদের মাতৃভাষা অন্য সংস্কৃতির দৃষ্টিতে হয়ে দাঁড়ায় "খিস্তি।" এখানেই তৈরি হয় একটা দূরত্ব। অবশ্য কলকাতার সব স্থানীয় মানুষই একরকম নয়। আমার অনেক বন্ধু ছিল, এবং এখনও আছে যারা আমার সহমর্মী, সমব্যথী। এমনই এক শ্রমিকদরদী, পরিবেশপ্রেমী বন্ধু বাংলাদেশী বা বাঙ্গালদের অতিথি পরায়ণতার কথা প্রায়ই উল্লেখ করেন। মানব গঠন প্রক্রিয়া এবং দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য হয়ত কলকাতার স্থানীয় মানুষদের দু'দলে বিভক্ত করে দিয়েছে। তাই সবাইকে একই চোখে দেখা সম্ভব নয়, উচিতও নয়।
তবুও একটা ভয় – আমার সংস্কৃতিকে খাটো হতে দেখার ভয় – সব সময় পিছু তাড়া করেছে একটা সময়। এখনও "হ্যাঁ", "দাঁড়িয়ে" প্রভৃতি বানান লিখতে গেলে চন্দ্রবিন্দু দিতে ভুলে যাই। অতীতের মাতৃভাষা-খিস্তির সাংস্কৃতিক সংঘাত ভুলতে পারি নি। সন্দেহ হয় কোন অস্তিত্বটা আমার। আমি কোন উচ্চারণে কথা বলব? আমার বাঙ্গাল উচ্চারণে কথা বললে কেউ বুঝে নেবে না কেন? আমি কী পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা বাঙাল-উদ্বাস্তু না কী কলকাতারই একজন?
যৌবনে এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতেই মনে পড়ে যেত গুরুজনদের উপদেশাত্মক "প্রাথমিক সূত্র।" সঙ্গে যোগ করে নিয়েছিলাম উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং জীবনে বন্ধুর পথ অতিক্রম করার সঙ্কল্প। এটা আমার একার নয়, প্রায় সকলেই জানত পরভূমে শিরদাঁড়া শক্ত করে না দাঁড়ালে ছাগলে মুড়ে খাবে। তাই একদিকে লেঠেল তাড়িয়ে আশ্রয় সুনিশ্চিত করার সংগ্রাম, আর এক দিকে বৃহত্তর সমাজের মোকাবিলার জন্য উদ্বাস্তুদের গোষ্ঠীবদ্ধ জীবনের বিকল্প ছিল না।
উদ্বাস্তুদের সমষ্টিগত সংগ্রামের মাধ্যমেই ১৯৫০ সালে গড়ে উঠেছিল বাস্তুহারা পরিষদ। এই পরিষদেরই পরবর্তী রূপান্তর ইউনাইটেড সেন্ট্রাল রিফিউজি কাউন্সিল (ইউ.সি.আর.সি)। কলকাতা ও ২৪-পরগনার বিভিন্ন বাস্তুহারা সংগঠন – নিখিল বঙ্গ বাস্তুহারা কর্ম পরিষদ, দক্ষিণ কলিকাতা শহরতলী বাস্তুহারা সমিতি, উত্তর কলিকাতা বাস্তুহারা সমিতি ইত্যাদি – একত্র করে এই কাউন্সিল গঠিত হয়। ইউ.সি.আর.সি-র আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে কলোনিবাসীর জমির অধিকার স্বীকৃত হতে সময় লেগেছিল প্রায় ৩৫ বছর। ১৯৮৫ সালে উদ্বাস্তুদের রিলিফ এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন দফতর থেকে জমি অধিকারের অর্পণপত্র দেওয়া হয়েছিল। পরে সেই জমির মালিকানাও দেওয়া হয়। তখন থেকেই উদ্বাস্তুদের গোষ্ঠী বাঁধুনিটা অনেক আলগা হয়ে এল। কারণ, এতগুলো বছরে উদ্বাস্তু পরিবারের অনেক যুবক উচ্চশিক্ষা বা কারিগরিবিদ্যা অর্জন করে নিজেদের ভবিষ্যত সুনিশ্চিত করে ফেলেছিল। তখন আর পাশের বাড়ির মাসিমার কাছে আটা ধার করার প্রয়োজন নেই। আর যারা এভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে নি, তারা জমির মালিকানার সুযোগ নিয়ে নিজেদের জমির ওপর পাঁচতলা বাড়ি প্রমোট করে দেদার টাকা আয় করতে লাগল। এইসব বাড়িতে যেসব নতুন মানুষ এল, তারা কলোনির অতীত সংগ্রামী দিনগুলোর কথা জানে না। তারা কেউ কারুর সমব্যথী নয়।
উদ্বাস্তু হয়ে পূর্ব পাকিস্তান থেকে যারা এলাম তারা একাধিক অর্থে ছিন্নমূল চরিত্র। জন্মভূমি থেকে ছিন্ন। স্থাবর সম্পত্তি, কৃষি জমি থেকে উচ্ছিন্ন। পূর্ববঙ্গের সমাজ সংস্কৃতি বিসর্জন। জন্মভূমি, পুরনো সংস্কৃতি ছেড়ে যখন এলাম তখন কলকাতায় খুঁটি গাড়লাম কী গুজরাতে বা কর্ণাটকে, তাতে কী এসে যেত? সব জায়গাতেই সংস্কৃতির সংঘাত হত। আমাদের মাতৃভাষার জায়গা কলকাতাতেই আমাদের সবচেয়ে বড় ব্যথার জায়গা পরিচয় সঙ্কট। আমরা কোথাকার মানুষ? ১৯৪৭-এর আগে ছিলাম ভারতবর্ষে। ১৯৫০–এ আবার এলাম ভারতবর্ষে। এটা প্রহসন ছাড়া আর কী?
- Share this:
-
পূর্ব-পাকিস্তান থেকে উদ্বাস্তু হিসাবে এসে ভারতে পুনর্বাসনের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা
Posted by bangalnama on December 22, 2010
6 Votes- লিখেছেন প্রভাস চন্দ্র মজুমদার
আমার জন্ম ১৯৩৪ সালে অবিভক্ত বাংলার মৈমনসিংহ জেলার এক অজ পাড়াগাঁয়ে। দেশে তখন ইংরেজ শাসন চলছে। সুতরাং জন্মসূত্রে আমি বৃটিশ ভারতীয়। ইংরেজ শাসন-মুক্ত হয়ে দেশের স্বাধীনতা লাভ ঘটে ১৯৪৭ সালে। তখন আমার বয়স তেরো বছর। তবে স্বাধীনতা লাভের সঙ্গে দেশভাগের মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা জড়িয়ে থাকায় আনন্দের চেয়ে বেদনা-বোধ বেশী হয়েছিল। ইংরেজ ভারত ছেড়ে যাবার সময়ে শাসন ক্ষমতা ভাগ করে মুসলমানদের জন্য পাকিস্তানের দাবীর স্বীকৃতি দিয়ে যায়। সুতরাং বৃটিশ ভারত দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রে বিভক্ত হয় – ভারত ও পাকিস্তান। পাকিস্তানও আবার দুই অংশে – পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানে বিভক্ত হয়ে থাকে। অবশ্য পূর্ব-পাকিস্থান শেষ পর্যন্ত পশ্চিম-পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে 'বাংলাদেশ' নামে নতুন স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। সেটা ১৯৭০-৭১ সালের ঘটনা।
দেশভাগের ফলে যে সব জটিল সমস্যার উদ্ভব হয়েছিল, তাদের মধ্যে সর্বপ্রধান উদ্বাস্তু সমস্যা। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় কয়েক লক্ষ লোক প্রাণ হারায় আর প্রায় দু'কোটি মানুষ বাসভূমি থেকে উৎখাত হয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। এই উদ্বাস্তু-স্রোত বহুদিন অব্যাহত ছিল। পূর্ব ও পশ্চিম উভয় পাকিস্তান থেকেই অ-মুসলমানরা নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ভারতে চলে আসে। আবার কিছু মুসলমানও ভারত থেকে পাকিস্তানে চলে যায়। তবে সংখ্যার বিচারে ভারতে আগত উদ্বাস্তুরা ছিল অনেক বেশী।
উদ্বাস্তু হিসাবে দেশত্যাগের পেছনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অনেক কারণ ছিল। প্রথম ও প্রধান কারণ ধন-প্রাণের নিরাপত্তার অভাব। অ-মুসলমানরা পাকিস্তানে নিরাপদে বসবাস করতে পারবে না – এই ধারণা ক্রমশ ব্যাপক হয়ে উঠছিল। পর পর কয়েকটি ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রবল আতঙ্কের সৃষ্টি করে। যে সব অঞ্চলে হিংসাত্মক কার্য্যকলাপ প্রবল হয়ে উঠেছিল, সেখান থেকেই বেশী সংখ্যায় উদ্বাস্তুরা দেশত্যাগ করে। যারা অনেক দুঃখ-দুর্দশা সহ্য করেও থেকে যাবে বলে ভেবেছিল, তারা শেষে নিরুপায় হয়ে ভিটে মাটি ছাড়া হল।
উদ্বাস্তুদের মধ্যে আর্থ-সামাজিক(socio-economic) পার্থক্যজনিত কারণে শ্রেণী-বিভাগ ছিল। শিক্ষিত ও সঙ্গতিপন্নরা সরকারী সাহায্য ছাড়াই নিজেদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে নেয়। এদের সংখ্যা ছিল অল্প। যারা হিংসা, হানাহানি, অত্যাচার ও উৎপীড়নে ধন, প্রাণ হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়ে দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছিল, তারাই ছিল সংখ্যায় বেশী। এরা রিফিউজি ক্যাম্প(Refugee Camp) ও জবরদখল কলোনীতে(Squatter's Colony) অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে কোনোমতে টিঁকে ছিল। সরকারী সাহায্য ছিল প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। তার থেকেও অনেকটাই দুর্নীতিগ্রস্ত আমলা ও রাজনৈতিক দাদারা লুটে-পুটে খেয়েছে। অনাহার, অপুষ্টি ও নানা ব্যাধিতে ভুগে মারা গিয়েছে বহুসংখ্যক।
নানারকম সরকারী নিয়মকানুনের মারপ্যাঁচে অনেকের পক্ষেই উদ্বাস্তু হিসাবে পুনর্বাসনের সাহায্য পাওয়া সহজ ছিল না। পূর্ব-পাকিস্তান থেকে আগত উদ্বাস্তুদের প্রতি ভারত সরকারের বৈষম্যমূলক আচরণেরও অভিযোগ আছে। উদ্বাস্তু আগমন বন্ধ করা সম্ভব না হলেও যথেষ্ট হ্রাস করার জন্য নেহরু-লিয়াকত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান এই চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তিতে দুই দেশেরই সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার, জীবন ও জীবিকার গ্যারান্টী-সহ অনেক ভালো কথা বলা হয়। কিন্তু কাজের বেলায় বিশেষ কিছু হয়নি। তার পরেও পূর্ব-পাকিস্তানে অনেক বার দাঙ্গা হয়েছে। বিপন্ন সংখ্যালঘুরা দলে দলে ভারতে উদ্বাস্তু হয়ে এসেছে।
কলকাতা অবিভক্ত বাংলা এবং একসময় বৃটিশ ভারতের রাজধানী ছিল বলে কর্মসূত্রে ও নানা প্রয়োজনে পূর্ব বাংলার বেশ কিছু লোক দেশভাগের আগে থেকেই এদিকে বসবাস করছিলেন। তাঁদের আত্মীয় ও বন্ধুবর্গ দেশত্যাগে মনস্থির করে তাঁদের সাহায্যের আশায় এদিকে চলে আসেন। তাঁরা সাহায্য তেমন কিছু পান নি। তবু মনে কিছু বল-ভরসা পেয়েছেন। দেশভাগের সময়ে যে সব পরিবারের ঘনিষ্ঠ কেউ পশ্চিমবঙ্গে কিংবা ভারতের অন্যত্র বসবাস করত না, তারা দলবদ্ধভাবে একসঙ্গে এদিকে আসেনি। যার যখন যেমন প্রয়োজন বা সুবিধা হয়েছে সে সেইভাবেই এসে বহু উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে কম-বেশী থিতু হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের পরিবারের অবস্থাটা ছিল একটু ভিন্ন রকম। শৈশবে আমার পিতৃ বিয়োগ হয়। জীবনযাত্রা ছিল কৃষিভিত্তিক। কিছু জোতজমির উৎপন্ন ফসলেই কায়ক্লেশে সংসার চলত। আমার বড় দাদা ছিলেন পরিবারের অভিভাবক। পোষ্য সংখ্যা নিতান্ত কম নয়। পাঁচ ভাই, বিধবা মা, এক ভ্রাতৃ-বধু, চারটি ভাইপো-ভাইঝি। সব মিলিয়ে এগারো জন। আমার দুই দিদি ছিলেন। আমার অত্যন্ত শৈশবেই তাঁদের বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। আমাদের জীবিকার উৎস পূর্ব-পাকিস্তানের চাষজমি। ভারতে কোনো আয়ের পথ ছিল না। সুতরাং দেশত্যাগের কথা প্রথমে ভাবিনি।
আমার বড়দাদার লেখাপড়া ইংরেজ আমলের। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বি.এ. পাশ করার পর বহুকাল কোনো চাকরী পান নি। সামান্য পৈতৃক বিষয় সম্পত্তি দেখা শোনার কাজ করে কাটিয়েছেন। আমার এবং অন্য ভাইদের স্কুলের লেখাপড়া পূর্ব-পাকিস্তানে। আমার ছোটভাই ১৯৫৩ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় খুবই ভাল ফল করে উচ্চশিক্ষার জন্য কলকাতায় চলে আসে। মেধা ও কর্মশক্তির সাহায্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে। সে ঢাকার ভারতীয় দূতাবাস থেকে Migration Certificate নিয়ে এসেছিল বলে পড়াশোনা করার সময় Refugee Stipend পেয়েছিল। আমি জেলা শহরে দিদির বাড়ীতে থেকে পড়াশোনা করেছি। ওঁরা দেশ ছেড়ে চলে আসার কথা ভাবছিলেন না বলে আমিও আরো কয়েক বছর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বি.এ. পরীক্ষাটাও পাশ করে এসেছিলাম। আমি প্রায় নয় বছর পূর্ব-পাকিস্তানে বসবাস করে ১৯৫৬ সালে স্থায়ীভাবে সে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে আসি। ততদিনে আমাদের পরিবারের বেশ কয়েকজন ভারতে এসে বসবাস শুরু করেছে, যদিও তাদের প্রায় সবাই আর্থিক দূরবস্থায় দিন কাটাচ্ছিল। আমার বড়দাদাও চব্বিশ পরগনার একটি স্কুলে শিক্ষকতা কাজ পেয়ে এদেশে সপরিবারে চলে আসেন। তার পর অল্পদিনের মধ্যেই পূর্ব-পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক একরকম চুকে যায়। ঘনিষ্ঠ আপনজন ঐ দেশে আর কেউ থাকল না।
আমি পূর্ব-পাকিস্তানে স্কুল-কলেজে লেখাপড়া করেছি। দুটো স্কুলে শিক্ষকতাও করেছি। কখনও উপদ্রব বা উৎপীড়ন সহ্য করতে হয় নি। 'কাফের' বলে কেউ কখনও কটুক্তি করেনি। সাধারণভাবে সকলের কাছে ভদ্র ব্যবহারই পেয়েছি। এ সব সত্ত্বেও জন্মভূমি ছেড়ে চলে এলাম ভবিষ্যতের কথা ভেবে। ইসলামী রাষ্ট্র পাকিস্তানে অ-মুসলমানরা সম্মান ও মর্যাদা নিয়ে বসবাস করতে পারবে না এবং সুবিচার পাবে না – এই ধারণা বদ্ধমূল হতে থাকায় দেশ ত্যাগী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হল। কম বয়সের ভাগ্যান্বেষণের প্রবল আকাঙ্খাও এর সঙ্গে যুক্ত হয়।
Migration Certificate নিয়ে আসার কথাই প্রথমে ভেবেছিলাম, কিন্তু বহু চেষ্টা করেও সংগ্রহ করা গেল না বলে অগত্যা পাকিস্তানী পাসপোর্ট ও ভারতীয় ভিসা নিয়েই এ দেশে আসি। এর ফলে আমি Refugee Status পাইনি এবং Rehabilitation benefits অধরাই থেকে যায়। নিজের শক্তি সামর্থ্যর ওপর ভরসা করেই জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে হয়েছিল। পাসপোর্ট সারেন্ডার করে রেজিস্ট্রেশানের মাধ্যমে ভারতের নাগরিকত্ব অর্জন করি। তাতে বছর দুই সময় লেগেছিল।
পূর্ব-পাকিস্তান থেকে বি.এ. পাশ করে এসেছিলাম বলে কলকাতায় এম.এ. পড়ব বলে আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম। University College of Arts and Commerce-এ ইংরেজী ও ইকনমিক্সে এম.এ. পড়ার জন্য দরখাস্ত করি। ইকনমিক্সে পড়ার চান্স পাইনি, ইংরেজীতে পেয়েছিলাম। আহার ও বাসস্থানের ব্যবস্থা হল যাদবপুর বিজয়গড়ের রিফিউজি কলোনীতে এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের বাড়ীতে। সেখানে রিফিউজি কলোনীর জীবন যাত্রার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা হল। জায়গাটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মিলিটারি ক্যাম্প ছিল। দলে দলে উদ্বাস্তু এসে জায়গাটা দখল করে নেয়। তাড়াতাড়ি একটা সংগঠন তৈরী করে সরকারের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা শুরু হয়। পল্লীর সদস্যারা প্রত্যেকেই দেড়-দু'কাঠা জমির প্লট পায় আর তার ওপর বাঁশ, বাঁশের চাটাই ও টালি দিয়ে ঘর তৈরী হয়। বেশীর ভাগেরই কাঁচা ভিত। অল্পসংখ্যক, যাদের কিছু পুঁজি ছিল, তারা মেঝেটা পাকা করে নেয়। ঘিঞ্জি বসতি হওয়ায় আর নিকাশি ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষাকালে জল জমে দুর্দশার অন্ত ছিল না। এক কথায় ওখানকার জীবন যাত্রা ছিল প্রায় আদিম। জলের উৎস ছিল ব্যক্তিগতভাবে করা টিউবওয়েল ও পাতকুয়ো। কোনো পৌরসভা জল-সরবরাহ ও আবর্জনা পরিস্কারের দায়িত্ব নেয় নি। জমির ওপর আইনি অধিকার না থাকায় কেউই নিজের অর্থ ব্যয় করে উন্নয়নের চেষ্টা করেনি। অধিবাসীদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ যথেষ্ট না হলেও সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির অভাব ছিল না। পরস্পরের বিপদে-আপদে সাহায্য করার লোকাভাব হয়নি। ক্রমে নানা রাজনৈতিক দলের ক্ষমতার দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ায় উদ্বাস্তুদের মধ্যে পারস্পরিক হিংসা ও হানাহানি শুরু হয়। এতে সামাজিক পরিবেশ খারাপ হয়ে ওঠে। সামগ্রিকভাবে উদ্বাস্তুদের ওপর বাম-রাজনীতির প্রভাব ছিল বিশেষ প্রবল। CPI(M) বহুকাল উদ্বাস্তুদের ভোট ব্যাঙ্ক হিসাবে কাজে লাগিয়েছে।
আমি বিজয়গড়ে যাঁর বাড়ীতে এসে উঠেছিলাম তাঁর সঙ্গে অনেকটা পেয়িং গেস্টের মত বন্দোবস্ত ছিল। বাড়ীর উঠোনে একটা ফাঁকা টালির ঘর ছিল, সেটাতে থাকতাম, আর খাবার জন্য মাসে চল্লিশ টাকা করে দিতাম। পূর্ব-পাকিস্তান থেকে আসার সময় কিছু সঞ্চিত টাকা-পয়সা এনেছিলাম। তাতে কয়েক মাস চলেছিল। কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম বলে যাতায়াত ও টিফিনের খরচ ছিল। তার পর খাতা-পত্র, টুকিটাকি নানা জিনিসের পেছনেও খরচ ছিল। সব শুদ্ধ আরো গোটা পঞ্চাশেক টাকা প্রতি মাসে লাগত।
তখন ভারতীয় টাকার বিনিময় মূল্য পাকিস্তানী টাকার চেয়ে বেশী ছিল বলে। একটু কম বেশী হাজার খানেক ভারতীয় টাকা ওখান থেকে যা এনেছিলাম তার বিনিময়ে পেয়েছিলাম। হিসাব করে দেখলাম, এই টাকাতে আমার আট-ন'মাস চলতে পারে। ইংরেজী নিয়ে পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট পড়ছিলাম বলে ভাল ট্যুইশান পাব আশা করেছিলাম। তাহলে দু-একশো টাকা মাসে অনায়াসেই রোজগার করা যাবে। কিন্তু যেমন আশা করেছিলা তেমন হল না। খুব কম মাইনের দু-একটার বেশী ট্যুইশান পাইনি। এতে বড় রকম আর্থিক সঙ্কটে পড়ে গেলাম। বিজয়গড়ে যাঁর ওখানে থাকতাম তাঁর খুব টানাটানির সংসার ছিল। এই কারণে প্রতি মাসের গোড়াতেই আমার দেয় টাকাটা তাঁকে দিয়ে দিতাম। যখন পুঁজি প্রায় নিঃশেষ হয়ে আসছিল তখন একটা গুরুতর সিদ্ধান্ত নিতে হল। পল্লী অঞ্চলে অনেক নতুন স্কুল খোলার দরুণ স্কুল শিক্ষকের চাহিদা খুবই বেড়ে যায়। গ্র্যাজুয়েট হলে সেই কারণে সহজেই গ্রামের স্কুলে শিক্ষকের চাকরী পাওয়া যেত। আর্থিক দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির আর কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে অগত্যা হুগলি জেলার এক গ্রামে শিক্ষকের চাকরী নিয়ে চলে গেলাম। University College of Arts and Commerce-এর সঙ্গে সম্পর্ক সাময়িকভাবে ছিন্ন হয়ে গেল। স্কুলে মাসিক বেতন পেতাম একশো কুড়ি টাকা। স্কুল হস্টেলে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা। তার জন্য মাসে পঁচিশ-ত্রিশ টাকার বেশী খরচা হত না। মাসে সত্তর-আশি টাকা সঞ্চয় হত। সাত মাস স্কুলে চাকতি করেছিলাম। শ'-পাঁচেক টাকা পুঁজি নিয়ে স্কুলের চাকরী ছেড়ে দিয়ে ফিরে গেলাম কলকাতায়। আবার লেখাপড়া শুরু করলাম। এর মধ্যে আমার ছোট জামাইবাবু ভারত সরকারের চাকরীতে বদলী হয়ে কলকাতায় চলে এলেন ও উত্তর কলকাতার বেলগাছিয়ায় বাসা নিলেন। বিজয়গড়ে আর ফিরে গেলাম না। দিদির ওখানে ফ্রী থাকা-খাওয়ার সুবিধা পেয়ে গেলাম বলে আর্থিক দায় অনেকটা কমে গেল। সাত আট মাস মরিয়া হয়ে চেষ্টা করে এম.এ. পরীক্ষাটা দিলাম এবং ভাগ্যগুণে একটা সেকেন্ড-ক্লাস ডিগ্রী পেয়ে গেলাম।
এই ডিগ্রীটাই আমার জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবার মূলধন ছিল। আমি এম.এ. পাশ করেছি ১৯৫৮-এ। এই সময়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার ফলের তিনটি ক্লাস ছিল – ফার্স্ট, সেকেন্ড ও থার্ড ক্লাস। ৪৫%-এর কম নম্বর পেলে থার্ড ক্লাস দেওয়া হত। সব থেকে বেশী সংখ্যক পরীক্ষার্থীর কপালে ঐ থার্ড ক্লাসই জুটত। এই জন্য একে বলা হত 'জনতা ক্লাস'। আর থার্ড ক্লাস পেয়ে পাশ করলে কলেজে পড়ানোর অযোগ্য বিবেচিত হত। নিয়মিত পড়াশোনায় ছেদ পড়া সত্ত্বেও আমার পক্ষে এম.এ.-তে সেকেন্ড ক্লাস পাওয়া ছিল পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার। ফলটা বেরুনোর পর মনে হয়েছিল – "Too good to be true!"
পরীক্ষার ফলটা বেরুনোর পর আমার আর কর্মসংস্থান নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা রইল না। প্রথমে ছ'-সাত মাস আমার বড়দাদার কর্মস্থল গোবরডাঙ্গা খাঁটুরা স্কুলে শিক্ষকতা করেছিলাম। সেখান থেকে টেলিগ্রাফিকালি Appointment Letter পেয়ে চলে গেলাম আসামের কামরূপ জেলার নলবাড়ী কলেজে। ওখানে বছর খানেক অধ্যাপনা করে ফিরে এলাম পশ্চিমবঙ্গে। এসে ইংরেজীর অধ্যাপক হিসাবে যোগ দিলাম বীরভূমের রামপুরহাট কলেজে। এখানে কাজে যোগ দিই ১৯৬০ সালে। পঁয়ত্রিশ বছর কাজ করে ১৯৯৫-এ কর্মজীবন থেকে অবসর নিই। এখন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পেনশান পাচ্ছি আর তা দিয়েই খাওয়া-পরা চলছে।
এই হল সংক্ষেপে আমার কর্মপঞ্জী, Curriculum Vitae।
জীবনে প্রতিষ্ঠিত নিজের চেষ্টাতেই হয়েছি। কোনো সরকারী সাহায্য পাইনি।___________________________________________________
প্রভাস চন্দ্র মজুমদার রামপুরহাট কলেজ (পশ্চিমবঙ্গ) থেকে অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক- Share this:
-
দেশভাগের সাম্প্রতিক ইতিহাস চর্চার আলোকে 'দ্যা মার্জিনাল মেন'
Posted by bangalnama on December 22, 2010
3 Votes- লিখেছেন ত্রিদিব সন্তপা কুণ্ডু
১৯৯৭ সালে যখন দেশভাগ নিয়ে গবেষণা করব মনস্থির করলাম তখন আমার পাঠ্য তালিকায় স্বাভাবিকভাবেই প্রথমে ছিল শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক প্রফুল্ল চক্রবর্তীর বহু আলোচিত/ সমালোচিত বইটি, 'দ্যা মার্জিনাল মেন' (The Marginal Men)।১বস্তুতপক্ষে এটি কোনো ব্যতিক্রমি ঘটনা নয়। কারণ আমাদের প্রজন্মে যারা দেশভাগ নিয়ে কাজ করছেন এবং আগামী দিনে করবেন তাদের কাছে এটি একেবারে প্রাথমিক বই, যাকে বাদ দিয়ে পূর্বভারতে দেশভাগ সংক্রান্ত আলোচনা শুরু করা শক্ত। ১৯৯০ সালে ঐ বইটি প্রকাশিত হবার পর থেকেই তা গবেষকমহলে এবং সাধারণ পাঠকমহলে অত্যন্ত আদৃত। অধ্যাপক চক্রবর্তীর বক্তব্যের সঙ্গে একমত হন বা না হন তাঁকে উপেক্ষা করা শক্ত – 'দ্যা মার্জিন্যাল মেন' বইটির সবচেয়ে বড় সাফল্য বোধহয় এটাই। বিগত সহস্রাব্দের শেষ দিক থেকে দেশভাগের ইতিহাস নিয়ে যে ব্যাপক চর্চা পশ্চিমবঙ্গে শুরু হয় তার অন্যতম পথিকৃত ছিলেন অধ্যাপক প্রফুল্ল চক্রবর্তী। 'দ্যা মার্জিনাল মেন' তাঁর দীর্ঘ গবেষণার ফসল। মৃত্যুর কিছুকাল আগে তাঁর সঙ্গে তাঁর কল্যাণীর বাসভবনে বেশ কিছুক্ষণ দেশভাগের ইতিহাসের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনার সৌভাগ্য হয়েছিল। বইটি লিখতে গিয়ে তিনি যে কতটা গভীর ভাবে ঐ বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছিলেন তা অকল্পনীয়। কারণ দেশভাগ, উদ্বাস্তু সমস্যা বা উদ্বাস্তু আন্দোলন নিছকই তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল না, বা কোন intellectual exercise ছিল না, গোটা বিষয়টি তাঁর জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে ছিল।
পশ্চিমবঙ্গে দেশভাগ নিয়ে চর্চা যে অধ্যাপক চক্রবর্তীর হাত ধরে শুরু হয়েছিল এমনটা নয়। বিক্ষিপ্ত চর্চা শুরু হয়েছিল কিছুকাল আগে থেকেই। উদ্বাস্তু সমস্যায় জর্জরিত পশ্চিমবঙ্গ সরকার চল্লিশের দশকের শেষ দিকেই ইন্ডিয়ান স্টাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটকে দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে আগত উদ্বাস্তুদের উপর একটি সমীক্ষা করায় যা থেকে প্রথম পর্বে আগত উদ্বাস্তুদের আর্থ-সামাজিক অবস্থানটি ধরা পরে। পরবর্তীকালে ঐ সমীক্ষার উপর ভিত্তি করে কান্তি পাকড়াশি তাঁর The Uprooted: A Sociological Survey of the Refugees in West Bengal (1971) বইটি লেখেন। এ-প্রসঙ্গে আর একটি সমীক্ষার কথা উল্লেখ না করলেই নয়। ১৯৫০ এর দশকের শেষে প্রকাশিত হয় বি.এস. গুহ-র Studies in Social Tension among the Refugees from East Pakistan (1959)। এর পর ১৯৮০-র দশকেCentre for Studies in Social Sciences এর উদ্যোগে বেশ কিছু গবেষণা পরিচালিত হয়। অশোক সেন, অলোক ব্যানার্জী, প্রণতি চৌধুরী প্রমূখ বেশ কিছু কাজ করেন মূলত CMD-ভূক্ত এলাকায় উদ্বাস্তু আগমন ও তাঁদের বসবাসের ধরণ নিয়ে। এই বিক্ষিপ্ত কাজগুলি উদ্বাস্তু আগমন এবং তার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন ইস্যুর উপর আলোকপাত করলেও দেশভাগ এবং উদ্বাস্তু সমস্যাকে একটি বড় ইতিহাসের ক্যানভাসে ধরার চেষ্টা করা হয়নি। সেই চেষ্টা প্রথম লক্ষ্য করা যায় প্রফুল্ল চক্রবর্তীর The Marginal Men-এ। অনেক দিন পর্যন্ত পেশাদার ভারতীয় ঐতিহাসিকরা স্বাধীনোত্তর পর্বের ইতিহাস চর্চা থেকে নিজেদের সচেতন ভাবে সরিয়ে রাখতেই অভ্যস্ত ছিলেন। স্বাধীনতা প্রাপ্তির পঞ্চাশ বছর পর ১৯৪৭ এর লক্ষণরেখা অতিক্রম করার প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। কিন্তু অধ্যাপক চক্রবর্তী ছিলেন সেই বিরল প্রজাতির ঐতিহাসিকদের একজন যিনি সেই লক্ষণরেখা তাঁর সমসাময়িকদের থেকে অনেক আগেই অতিক্রম করে দেশভাগের ইতিহাস চর্চা শুরু করেছিলেন।২
'দ্যা মার্জিনাল মেন'-এর প্রকাশ দেশভাগের ইতিহাস চর্চার ইতিহাসে নিঃসন্দেহে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। দীর্ঘদিনের গবেষণালব্ধ তথ্যের উপর ভিত্তি করে অধ্যাপক চক্রবর্তী পূর্ববঙ্গ থেকে আগত উদ্বাস্তুদের নিদারুণ দুর্ভোগ, অকল্পনীয় সংগ্রাম এবং বদলে যাওয়া পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির আদলটিকে ধরার চেষ্টা করেছেন অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে। 'দ্যা মার্জিনাল মেন'-এর কাঠামোটি গড়ে উঠেছে মূলতঃ তিনটি বিষয়কে আশ্রয় করে–
* তিনি অত্যন্ত নিখুঁত ভাবে পূর্ববঙ্গ থেকে আগত উদ্বাস্তুদের নিদারুণ দুর্ভোগের কাহিনী লিপিবদ্ধ করেছেন- বিভিন্ন পর্যায়ে তাঁদের আগমন, রেলওয়ে প্লাটফর্মে, ক্যাম্পে, কলোনীতে তাঁদের নরকযন্ত্রণা ভোগ, উদাস্তু পুনর্বাসনে সরকারী উদাসীনতা ইত্যাদি তাঁর লেখাতে দারুণভাবে এসেছে।
* তিনি উদ্বাস্তুদের প্রতিরোধ আন্দোলনের একটি নির্ভরযোগ্য আলেখ্য রচনা করেছেন যার নেতৃত্বে ছিল UCRC (United Central Refugee Council) এবং পিছন থেকে তাকে সাহায্য করে বামপন্থী দলগুলি।
* এর উপর ভিত্তি করে বইটির তৃতীয় এবং শেষ অংশে তিনি পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পালাবদলের এক নতুন ভাষ্য হাজির করেন যা নিয়ে প্রচুর বিতর্ক বাঁধে। অধ্যাপক প্রফুল্ল চক্রবর্তী দেখানোর চেষ্টা করেছেন যে ভাগ্য বিড়ম্বিত উদ্বাস্তুরা ক্রমশঃ পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় পরিবর্তনের শক্তিতে পরিণত হয়। ১৯৫০-৬০ এর দশকে উদ্বাস্তুরা তাই রাজ্য রাজনীতিতে বামপন্থীদের ক্রমবর্ধমান শক্তিবৃদ্ধির অন্যতম উপাদান হিসাবে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। উদ্বাস্তু এবং বামপন্থীদের এই বোঝাপড়াই পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির চেহারাটিকে দ্রুত বদলে দেয়। প্রথমদিকে পূর্ববঙ্গ থেকে আগত উদ্বাস্তুরা বামপন্থীদের প্রতি বিশেষ আগ্রহী ছিল না। বরং ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের প্রতিই তারা অধিকতর আস্থাশীল ছিল। তারা আশা করেছিল যে কংগ্রেস তাদের পুনর্বাসনের যথাযথ ব্যবস্থা করবে। কিন্তু কংগ্রেস সরকারের কাজকর্মে তারা আশাহত হয় এবং বামপন্থীদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ গড়ে ওঠে। বামপন্থী দলগুলি দ্রুত উদ্বাস্তুদের মধ্যে তাদের সংগঠন বাড়াতে থাকে। ১৯৫৯ সালেই UCRC-র নেতৃত্ব CPI এর হাতে চলে যায়। পরবর্তীকালে CPI(M) ঐ সংগঠনের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। তারা যেমন বামপন্থী দলগুলির নেতৃত্বে পরিচালিত গণ আন্দোলনগুলিতে বিপুল সংখ্যায় অংশগ্রহণ করেন তেমনি তাদের নিজস্ব আন্দোলন সংগ্রামগুলিতেও তারা বামপন্থীদের সক্রিয় সমর্থন লাভ করেন। অধ্যাপক চক্রবর্তীর মতে পশ্চিমবঙ্গে CPIবা CPI(M) যথার্থ অর্থে শ্রমিকশ্রেণীর অগ্রগণ্য বাহিনী ছিল না। কারণ পশ্চিমবঙ্গে সেই অর্থে কোন শ্রমিকশ্রেণীর অস্তিত্ব ছিল না। তাঁর মতে উদ্বাস্তুদের সমর্থন লাভই পশ্চিমবঙ্গে বামেদের ক্ষমতায় এনেছিল। বামদলগুলি কার্যতঃ উদ্বাস্তুদের ব্যবহার করেছিল তাদের ক্ষমতায় উত্তরণের মই হিসাবে।
অধ্যাপক চক্রবর্তীর এই তত্ত্ব নিঃসন্দেহে যথেষ্ট বিতর্কিত। এটা বিশ্বাস করা খুব শক্ত যে বামদলগুলি উদ্বাস্তুদের নিছক ব্যবহার করেছিল ক্ষমতায় পৌঁছনোর মই হিসাবে। এছাড়াও refugee syndrome দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পালাবদলকে সম্পূর্ণভাবে ব্যাখ্যা করা কতটা যুক্তিযুক্ত সে নিয়ে যথেষ্ট সংশয় থেকে যায়। তবে এসব সত্ত্বেও মার্জিনাল মেন-এর গুরুত্বকে কোনভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। বস্তুতপক্ষে এই বইটির মধ্য দিয়েই দেশভাগের ইতিহাস চর্চা এক নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করে।
১৯৯০ এর দশকের শেষ দিক থেকেই পশ্চিমবঙ্গে দেশভাগ নিয়ে ব্যাপক চর্চা শুরু হয়, যার পিছনে মার্জিনাল মেন-এর একটি প্রচ্ছন্ন প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। দেশভাগের রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে অধ্যাপক চক্রবর্তীর কাজ দেশভাগের ইতিহাস চর্চার ঘাটতি কিছুটা হলেও পূরণ করে। ঐ কাজের কথা মাথায় রেখে অনেকেই দেশভাগের সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রভাব নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। ১৯৯৬ সালে দীপেশ চক্রবর্তী "ছেড়ে আসা গ্রাম" এর উপর ভিত্তি করে একটি অসাধারণ প্রবন্ধ লিখলেন ("Remembered Villages: Representation of Hindu-Bengali Memories in the Aftermath of the Partition", Economic and Political Weekly, vol.31, no.32, August 10, 1996)। রণবীর সমাদ্দার ১৯৯৭ সালে একটি সংকলন প্রকাশ করেন (Reflections on Partition in the East, New Delhi, Vikash, 1997) যেখানে বেশকিছু উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ সংকলিত হয় যেগুলিতে বাংলায় দেশভাগের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়। এর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তিনি লেখেন The Marginal Nation (1999) যেখানে দেশভাগের অন্তঃসারশূন্যতাকে তুলে ধরেন তাঁর পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী কয়েকটি জেলায় ক্ষেত্রসমীক্ষার উপর ভিত্তি করে।
প্রফুল্ল চক্রবর্তীর মার্জিনাল মেন প্রকাশের ঠিক এক দশক পরে প্রকাশিত হল আর একটি বিশেষ উপযোগী বই, প্রদীপ কুমার বোস সম্পাদিত 'রিফিউজিস ইন ওয়েস্ট বেঙ্গল'। এই বইটিতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় যেগুলি দেশভাগের ইতিহাস চর্চাকে সমৃদ্ধ করে। প্রফুল্ল চক্রবর্তী যে কাজ শুরু করেন তাকে অনেকটাই এগিয়ে নিয়ে যান পরবর্তী গবেষকরা। মার্জিনাল মেন-পরবর্তী দেশভাগের ইতিহাস চর্চায় এটি একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন সন্দেহ নাই।
উদ্বাস্তু-বামরাজনীতির গাঁটছড়া, যাকে আশ্রয় করে প্রফুল্ল চক্রবর্তী পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পালাবদলের ভাষ্য রচনা করেছিলেন, তার রূপান্তর নিয়ে আলোচনা করেছেন অভিজিৎ দাশগুপ্ত।৩ তিনি দেখান যে আশির দশক থেকে বিজেপি এবং নব্বই এর দশক থেকে তৃণমূল কংগ্রেস উদ্বাস্তু-অধ্যুষিত অঞ্চলগুলিতে দ্রুত তাদের প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভাবে উদ্বাস্তুরা তাদের প্রান্তিক অবস্থান কাটিয়ে উঠতে পারেননি যা ঐ অঞ্চলগুলিকে বামবিরোধী রাজনীতির উর্বর ক্ষেত্রে পরিণত করে। কলকাতা ও শহরতলির হকার উচ্ছেদ অভিযান (অপারেশন সানশাইন নামে যা খ্যাত বা কুখ্যাত) উদ্বাস্তুদের বামরাজনীতি থেকে ক্রমশ দূরে ঠেলে দেয়। যে উদ্বাস্তুরা এক কালে বামফ্রন্টের ভোট ব্যাংক হিসাবে পরিচিত ছিলেন তাদের একটি বড় অংশ বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে ঢলে পরে। ১৯৮৯ এর লোকসভা নির্বাচন থেকেই এই প্রবণতা ক্রমশ পরিষ্কার হতে থাকে। ১৯৯৮ সালে দমদম লোকসভা কেন্দ্র বামফ্রন্টের হাতছাড়া হয় এবং পরের বছর নদীয়ার কৃষ্ণনগরেও বিজেপি জয় লাভ করে। তিনি উদ্বাস্তুদের এই রাজনৈতিক আনুগত্য পরিবর্তনের তিনটি পর্যায় দেখিয়েছেন। প্রথমে তারা ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন। পরে তারা কংগ্রেসের প্রতি আস্থা হারিয়ে বামপন্থীদের পাশে এসে দাঁড়ান। আশির দশকের শেষ দিক থেকে তারাই আবার এক অন্য ধরনের রাজনীতির প্রতি আনুগত্য দেখাতে শুরু করেন যাকে তিনি কনফেশনের রাজনীতি বলে অভিহিত করেছেন। উদ্বাস্তু রাজনৈতিক আনুগত্যের এই সতত পরিবর্তনশীল দিকটি বিশেষ আকর্ষণীয়। এই বিষয়টিকে মাথায় রেখে প্রফুল্ল চক্রবর্তীর তত্ত্বটিকে নতুন করে মূল্যায়ন করা যেতে পারে। উদ্বাস্তুরা বামেদের দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছিল না তারা বামেদের ব্যবহার করেছিল তাদের নিজেদের স্বার্থে সে প্রশ্ন উঠতেই পারে।
পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পালাবদলের প্রফুল্ল চক্রবর্তীকৃত ভাষ্যে উদ্বাস্তু-বাম জোটের উপরই মূল জোর দেওয়া হয়েছে। রাজ্য কংগ্রেস রাজনীতির দুর্বলতা, গোষ্ঠিদ্বন্দ ইত্যাদি সেভাবে আলোচনায় আসেনি। এই বিষয়গুলির উপর আলোকপাত করেছেন জয়া চ্যাটার্জী (The Spoils of Partition: Bengal and India, 1947-1967, CUP, 2007) এবং শেখর বন্দ্যোপাধ্যায় (Decolonization in South Asia: Meanings of freedom in post-independence West Bengal, Routledge, 2009), তাঁদের সাম্প্রতিক কালে প্রকাশিত দুটি বই-এ ।এই বই দু'টিকে যদি আমরা মার্জিনাল মেন এর পরিপূরক হিসাবে নিই তাহলে আমরা পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের একটি অধিকতর পরিষ্কার ছবি পেতে পারি।
মার্জিনাল মেন এর মূল জোর উদ্বাস্তু আন্দোলন, উদ্বাস্তু-বামরাজনীতির জোটবন্ধন এবং তার সূত্র ধরে বামেদের ক্ষমতায় উত্তরণ হলেও তার পটভূমিকা হিসাবে তিনি দেশভাগজনিত দুর্ভোগের একটি প্রাথমিক বিবরণ তুলে ধরেন প্রথম তিনটি অধ্যায়ে যা পরবর্তীকালে ঐ বিষয় নিয়ে নতুন গবেষণাকে উৎসাহিত করে। নব্বই এর শেষদিক থেকে উদ্বাস্তুদের শারীরিক ও মনঃস্ত্বাতিক দুর্ভোগ নিয়ে নতুন নতুন গবেষণা শুরু হয়। উদ্বাস্তুদের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে ঐ সময়ের ইতিহাসের পুনর্গঠনের প্রচেষ্টা শুরু হয়। দেশভাগের অভিজ্ঞতা মেয়েদের কাছে যে অনেকটাই আলাদা ছিল তা বলাই বাহুল্য। লিঙ্গ দৃষ্টিকোণ থেকে মেয়েদের অভিজ্ঞতাকে বোঝার চেষ্টা করা হচ্ছে বিভিন্ন লেখাপত্রের মধ্য দিয়ে। যশোধরা বাগচী, শুভরঞ্জন দাশগুপ্ত, গার্গী চক্রবর্তী প্রমুখের কাজ এক্ষেত্রে বিশেষ উল্লেখযোগ্য সংযোজন বলা যেতে পারে।
মার্জিনাল মেন প্রকাশের পর দু'দশক পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গে দেশভাগের ইতিহাস চর্চার তালিকায় বহু নতুন গ্রন্থের সংযোজন ঘটেছে, বহু নতুন বিষয়ের সংযোজন ঘটেছে। কিন্তু দেশভাগের ইতিহাস চর্চায় এখনও অনেক কিছু বাকী আছে বলেই আমার মনে হয়। দুই বাংলার অভিজ্ঞতাকে এক জায়গায় মেলাতে না পারলে একটি অখণ্ড চিত্র পাওয়া সম্ভব নয়। কিছু বিক্ষিপ্ত উদ্যোগ ছাড়া সেধরনের বড় আকারের উদ্যোগ এখনও তেমন চোখে পরে না। আশা করা যায় অদূর ভবিষ্যতেই সেই উদ্যোগ নেওয়া হবে এবং সেটিই হবে আমার মতে প্রয়াত ঐতিহাসিক প্রফুল্ল চক্রবর্তীর কাজের প্রতি যোগ্য সম্মান প্রদর্শন।
তথ্যপঞ্জী :১) Prafulla K. Chakrabarti, The Marginal Men: The Refugees and the Left Political Syndrome in West Bengal, Kalyani, Lumiere Books, 1990
২) দেশভাগের ইতিহাসচর্চার ধারা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য দেখতে পারেন "The Aftermath of the Partition of Bengal, 1947: A Historiographical Survey" http://bengalpartitionstudies.blogspot.com/2006/08/aftermath-of-partition-of-bengal-1947.html
৩) Avijit Dasgupta, "The politics of agitation and confession: displaced Bengalis in West Bengal" in Roy, Sanjay K. (ed.), Refugees and Human Rights, Jaipur and Delhi, Rawat Publications, 2001পশ্চিমবঙ্গে অঞ্চলভিত্তিক জবরদখল (স্কোয়াটার্স) কলোনীর তালিকা
Posted by bangalnama on December 22, 2010
1 Votes১৯৫১-পূর্ববর্তী জবরদখল কলোনী তালিকা
(সূত্র ঃ অনিল সিংহের 'পশ্চিম বাংলার জবরদখল উদ্বাস্তু উপনিবেশ')
যাদবপুর১) আদর্শনগর ২) আদর্শ পল্লী ৩) আমাদের বাস্তুহারা পঞ্চায়েত ৪) অরবিন্দ নগর ৫) অশোক নগর ৬) আশুতোষ ৭) আশুতোষ পল্লী ৮) আজাদ গড় ৯) বিধান (সন্তোষপুর) ১০) বিধান পল্লী (কামদাহারি) ১১) বাঘা যতীন ১২) বাপুজী নগর সোসাইটি ১৩) বাপুজী (ঢাকুরিয়া) ১৪) বাস্তুহারা সমিতি ১৫) বিজয়গড় ১৬) বিধান পল্লী (ইব্রাহিমপুর) ১৭) বিজয় নগর (কসবা) ১৮) বিক্রমনগর ১৯) বঙ্গশ্রী ২০) চিত্তরঞ্জন ২১) দাস নগর ২২) গান্ধী ২৩) যাদবগড় ২৪) কাটজু নগর ২৫) ক্ষুদিরাম নগর ২৬) লক্ষী নারায়ণ ২৭) মিত্রাবাস ২৮) নব নগর ২৯) নয়া বরিশাল ৩০) নেহেরু ৩১) নেল্লী নগর ৩২) নেতাজি নগর ৩৩) নিঃস্ব ৩৪) পল্লীশ্রী ৩৫) প্রতাপগড় ৩৬) পোদ্দার নগর ৩৭) রাজেন্দ্র নগর ৩৮) রামকৃষ্ণ উপনিবেশ ৩৯) রামগড় ৪০) রিজেন্ট ৪১) শহীদ নগর ৪২) শহীদ সুনীল নগর ৪৩) সমাজগড় ৪৪) সংহতি ৪৫) শান্তি পল্লী (অর্কপুর) ৪৬) শান্তি পল্লী (যাদবপুর) ৪৭) শান্তিগড় ৪৮) শান্তি নগর ৪৯) শক্তি পল্লী মঙ্গল সমিতি ৫০) শরৎ বোস যৌথ ৫১) শ্যাম ৫২) শ্রী ৫৩) সূর্য নগর ৫৪) তিলক নগর ৫৫) সুচেতা নগর ৫৬) বিদ্যাসাগর ৫৭) বিবেক নগর ৫৮) বিবেকানন্দ নগর
বেহালা৫৯) অরবিন্দ পল্লী ৬০) বাটোয়ারা বিধ্বস্ত উপনিবেশ ৬১) সমরগড় ৬২) ঠাকুর পুকুর পল্লী মঙ্গল সমিতি
বালি৬৩) বেলগাছিয়া কিসমত
হাবড়া৬৪) সুভাষ পল্লী ৬৫) অাশুতোষ
হুগলী৬৬) মহেশ উদ্বাস্তু শিবির ৬৭) নেহেরু নগর ৬৮) শ্রীরামপুর বাস্তুহারা উপনিবেশ
নোয়াপাড়া৬৯) চুনারি পাড়া ৭০) জওয়াহর ৭১) বাপুজী বাস্তুহারা ৭২) সেবাগ্রাম
নৈহাটি৭৩) বিজয় নগর ৭৪) প্রতাপ নগর ৭৫) কেশব
খড়দা৭৬) ক) মহাজাতি নগর (মেইন) খ) মাজাতি নগর (মেইন) ৭৭) দাসবন্ধু নগর ১ নং ৭৮) দাসবন্ধু নগর ২ নং ৭৯) দাসবন্ধু নগর ৩ নং ৮০) দাস নগর ৮১) স্বস্তি নগর ৮২) শরৎ বোস ৮৩) টাউন ৮৪) বিবেকানন্দ ২ নং ৮৫) উসুমপুর উদ্বাস্তু পল্লী ৮৬) দেশবন্ধু নগর ৩ নং ৮৭) শহীদ নগর ৮৮) দেশবন্ধু নগর ৮৯) সূর্যসেন নগর
বিজপুর৯০) দেশবন্ধু পল্লী ৯১) শহীদ নগর ৯২) নব নগর ৯৩) রামপ্রসাদ
টিটাগড়৯৪) সুভাষ পল্লী ৯৫) সুরেন বাগ ৯৬) হরকালী ৯৭) শীল ৯৮) রায় মল্লিক ৯৯) মল্লিক ১০০) তানওয়ার ১০১) বহিরাগত হিন্দু ১০২) শেঠ ১০৩) মহাজাতি নগর ১০৪) মনোহর ১০৫) হরেন্দ্র ১০৬) কুঞ্জ মল্লিক বাগ ১০৭) শ্যামা প্রসাদ ১০৮) জলগড় ১০৯) মাইকেল মধুসূদন ১১০) লখনৌ নগর ১১১) প্রফুল্ল নগর ১১২) রাজা দেবেন্দ্র ১১৩) দূর্গাবাটি ১১৪) প্যাটেল নগর ১১৫) শরৎ চন্দ্র ১১৬) ক্ষুদিরাম ১১৭) বাপুজী ১১৮) দাগা ১১৯) ভগবতী ১২০) পূর্ব বঙ্গ ১২১) মতিলাল ১২২) লাহা ১২৩) হিন্দ ১২৪) অমর পল্লী ১২৫) নেহেরু ১২৬) কমলপুর ১২৭) আজাদগড় ১২৮) গোষ্ঠ বিহারী ১২৯) ভারতী ১৩০) ব্রহ্মচারী ১৩১) হরিহর নগর ১৩২) বান্ধব নগর ১৩৩) পল্লীশ্রী
জগদ্দল১৩৪) হিন্দুস্থান ১৩৫) গান্ধী নগর ১৩৬) ক্ষুদিরাম নগর ১৩৭) রাম নগর
বেলঘরিয়া১৩৮) প্রফুল্ল নগর ১৩৯) শহীদ যতীনদাস নগর ১৪০) দেশপ্রিয় নগর
বরানগর১৪১) উদ্বাস্তু বান্ধব সমিতি ১৪২) ফরোয়ার্ড ১৪৩) নেতাজী ১৪৪) দেশপ্রিয় নগর ১৪৫) প্রতাপাদিত্য ১৪৬) সুভাষ পল্লী ১৪৭) মল্লিক (বি টি রোড) ১৪৮) দেশপ্রিয় নগর
____________________________________________________________
১৯৫০-পরবর্তী জবরদখল কলোনীর (squatters' colony) তালিকা
[ সি এম ডি (আর্বান) সূত্রে প্রাপ্ত। WG Report Appendix XVI এর অন্তর্গত ]
কলকাতা১) শহীদ কলোনী ২) নিউ বিক্রমগড় কলোনী, যাদবপুর ৩) যোগেন্দ্র কলোনী ৪) শহীদ কলোনী, চিৎপুর ৫) দেশবন্ধুনগর কলোনী নং ২, দমদম ৬) সিদ্ধেশ্বরী কলোনী, দমদম ক্যান্টনমেন্ট ৭) শ্যামাপ্রসাদ পল্লী, যাদবপুর ৮) ইন্ডিয়ান ন্যাশানাল ইয়ুথ কংগ্রেস (রিফিউজি কলোনী), হেস্টিংস ৯) যোগীন্দ্র নগর কলোনী ১০) বেদিয়াপাড়া ত্রিনাথ কলোনী ১১) সতীসেন কলোনী ১২) মধুসূদন পল্লী ১৩) নিউ গোষ্ঠ বিহারী কলোনী, ২৪/এ বরদা কান্ত রোড, দমদম কল-২৮ ১৪) অরবিন্দনগর ১৫) নতুনপল্লী বাস্তুহারা সমিতি ১৬) জজ বাগান জনকল্যাণ সমিতি ১৭) শাস্ত্রীজি কলোনী ১৮) শ্যামনগর উদ্বাস্তু কলোনী ১৯) রবীন্দ্র পল্লী ২০) নিউ নোয়াপাড়া কলোনী ২১) সুকান্তনগর ২২) বিধানপল্লী রিফিউজি কলোনী ২৩) রামকৃষ্ণপল্লী ২৪) কালীমাতা রিফিউজি কলোনী ২৫) দূর্গা কলোনী কমিটি ২৬) সাহাপুর কলোনী কমিটি ২৭) জ্যোতিনগর কলোনী
জেলা ঃ ২৪ পরগণা (আলিপুর সাব-ডিভিশন)২৮) কৈবল্য নগর সেবা সমিতি ২৯) শহীদ পর্ণানন্দ নগর ৩০) প্রফুল্ল সেন কলোনী ৩১) ক্ষুদিরাম বোস কলোনী ৩২) বিবেকানন্দ কলোনী ৩৩) এস এস ধাওয়ান কলোনী ৩৪) সুভাষ পার্ক ৩৫) হরিদেবপুর জনকল্যাণ সমিতি ৩৬) নেতাজীনগর পল্লী পঞ্চায়েত
(ব্যারাকপুর সাব-ডিভিশন)৩৭) নেহেরু কলোনী ৩৮) স্বাধীন পল্লী ৩৯) নিউ মল্লিক কলোনী ৪০) সারদা পল্লী ৪১) এঞ্জেলস নগর ৪২) বিজয় কৃষ্ণ পল্লী ৪৩) অজয় নগর ৪৪) তরুণ নগর কলোনী ৪৫) বাস্তুহারা গণমঙ্গল সমিতি ৪৬) নেহেরু কলোনী ৪৭) ঢাকা উদ্বাস্তু তাঁত শিল্প সংগঠন ৪৮) রামগড় কলোনী (ফায়ার ব্রিগেড) ৪৯) বিধান কলোনী (পাতিপুকুর) ৫০) সূর্য সেন কলোনী ৫১) সুভাষ পল্লী, বেলঘরিয়া ৫২) নেতাজী পল্লী, বেলঘরিয়া ৫৩) রামকৃষ্ণ পল্লী, বেলঘরিয়া ৫৪) সাথীপাড়া জগন্নাথ কলোনী ৫৫) নিরঞ্জন সেন পল্লী ৫৬) আদর্শপল্লী, আগরপাড়া ৫৭) নবপল্লী, পলতা ৫৮) পলতা আমবাগান কলোনী ৫৯) মতিনগর কলোনী ৬০) নিউ কলোনী, সোদপুর ৬১) সরকার বাগান স্কোয়াটার্স কলোনী ৬২) নিরঞ্জন নগর কলোনী ৬৩) বনকপুর নগর ৬৪) ইন্দিরা নগর ৬৫) ধর্ম বীর কলোনী ৬৬) বিজয় পল্লী, কাঁচরাপাড়া ৬৭) সুকান্তপল্লী, ইছাপুর ৬৮) দেগাছিয়া নিরঞ্জন পাড়া ৬৯) নবীন পল্লী, শুকচর ৭০) সুভাষ নগর ১ নং, শুকচর ৭১) সুভাষ নগর ২ নং, শুকচর ৭২) রাজা রাধাকান্ত দেব বাহাদুর, খড়দা ৭৩) অগ্নিশিখা কলোনী, খড়দা ৭৪) পাটনা কলোনী, খড়দা ৭৫) বিক্রমজিত কলোনী, দমদম ৭৬) নিরঞ্জন পল্লী, কাঁচরাপাড়া ৭৭) মাতৃপল্লী, নন্দননগর ৭৮) ক্ষুদিরাম পল্লী, নন্দননগর ৭৯) রামকৃষ্ণ পল্লী, ব্লক-২, নন্দননগর ৮০) উত্তর পাটনা উদ্বাস্তু পল্লী, নিমতা ৮১) ব্যারাকপুর নগর কলোনী ৮২) বি-হাইভ কলোনী, বেলঘরিয়া ৮৩) উসুমপুর শিবির, আগরপাড়া ৮৪) নেতাজীপল্লী, পলতা ৮৫) উদ্বাস্তু বান্ধব সমিতি, বেলঘরিয়া ৮৬) বহিরাগত ভারতীয় বাস্তুহারা সমিতি, দমদম ৮৭) বিশ্বনাথ কলোনী, বেলঘরিয়া ৮৮) লক্ষ্মীনগর কলোনী, দমদম লিচুবাগান ৮৯) ঝিল কলোনী, বেদিয়াপাড়া, দমদম
(বারাসত সাব-ডিভিশন)৯০) জ্যোতিনগর, হৃদয়পুর
জেলা ঃ নদীয়া৯১) বিক্রমপুর কলোনী, কল্যাণী ৯২) চাঁদমারি কলোনী, কল্যাণী
জেলা ঃ হাওড়া৯৩) সরোজিনী নাইডু স্মৃতিপল্লী ৯৪) কুমার বিষ্ণু প্রসাদ রায় উদ্বাস্তু কলোনী ৯৫) নরসিংহ কলোনী, চকপাড়া, ব্লক-৬ ৯৬) শ্রীপল্লী কলোনী ৬নং ৯৭) ঋষি অরবিন্দ পল্লী ৯৮) শ্যামাপ্রসাদ পল্লী, বালি ৯৯) চকপাড়া কলোনী ব্লক-৫ ১০০) বিধান পল্লী ব্লক-এ ১০১) মহাদেব কলোনী, ব্লক-৯, চকপাড়া ১০২) তারকেশ্বর কলোনী, ব্লক-৩, চকপাড়া ১০৩) শিবশক্তি কলোনী, ব্লক-২, চকপাড়া ১০৪) শক্তিনগর কলোনী, উত্তর উনসানি ১০৫) রামকৃষ্ণ সারদা পল্লী ১০৬) চকপাড়া কলোনী ব্লক নং১, চকপাড়া ১০৭) প্রফুল্ল চন্দ্র সেন কলোনী ১০৮) চকপাড়া কলোনী ব্লক নং ৮, চকপাড়া ১০৯) সুভাষ পল্লী, বীরাডিঙা, হাওড়া-৫ ১১০) ললিত মোহন কলোনী ১১১) সুভাষ কলোনী ১১২) নারায়ণ পল্লী, সাঁতরাগাছি, হাওড়া-৪ ১১৩) বিধান পল্লী ব্লক-বি ১১৪) পদ্মজা নাইডু কলোনী, বালি ১১৫) হরিশ হোর কলোনী, লিলুয়া ১১৬) আরামবাগ গান্ধী প্রফুল্ল সেন কলোনী, লিলুয়া ১১৭) কুঞ্জপাড়া কলোনী, লিলুয়া ১১৮) চকপাড়া কলোনী, চকপাড়া, ব্লক-৭ ১১৯) বাস্তুহারা কলোনী ১২০) বিষ্টু প্রসাদ কলোনী, বালি ১২১) দুলিয়া কেন্দ্র বাগান ১২২) বিবেকানন্দ কলোনী, বালি ১২৩) বেলগাছিয়া রিফিউজি কলোনী, ৪৯ কে রোড ১২৪) ভদ্রকালী কলোনী, আপার হরমঠপুর রোড ১২৫) রবীন্দ্রনগর কলোনী নং ৩, চুঁচুড়া ১২৬) কালীতলা কলোনী, উত্তরপাড়া ১২৭) বিবেকানন্দ কলোনী, উত্তরপাড়া ১২৮) নিরঞ্জন নগর, চন্দননগর
_____________________________________________________________
সি এম ডি (আর্বান)-এর বাইরে ১৯৫০-পরবর্তী জবরদখল কলোনী তালিকা
জেলা ঃ পশ্চিম দিনাজপুর১) ইন্দিরা কলোনী, নিউ কলেজ পাড়া, রায়গঞ্জ
জেলা ঃ ২৪-পরগণা, বারাসাত সাব-ডিভিশন২) সুভাষনগর কলোনী ৩) শহীদ-বন্ধু-নগর কলোনী ৪) নবপল্লী সমিতি, হাবড়া ৫) মায়াপ্রভু কলোনী, হাবড়া ৬) শ্রী রামপ্রসাদ কলোনী, গুমা ৭) নেতাজী নগর কলোনী, কালীপাড়া নং-১ ৮) কাদিহাটি নেতাজী-গড় কলোনী ৯) নিরঞ্জন পল্লী, নং-১ ১০) আজাদ হিন্দ গড় ১১) শরৎ পল্লী, গঙ্গানগর ১২) নোয়াপাড়া শাল বাগান ১৩) নেহরুবাগ, হাবড়া ১৪) বনবিহারী কলোনী, বারাসাত ১৫) সুভাষগড় কলোনী ১৬) মহাপ্রভু কলোনী, হাবড়া ১৭) বারাসাত স্টেশনপাড়া উদ্বাস্তু কলোনী ১৮) বিধান কলোনী, বেলাডাঙা ১৯) লেনিন নগর উদ্বাস্তু কলোনী ২০) মহাত্মা শিশির পল্লী, অশোকনগর ২১) নবজীবন পল্লী, অশোকনগর ২২) তরুণ পল্লী কল্যাণ সমিতি, অশোকনগর
জেলা ঃ নদীয়া২৩) গোঁসাই কলোনী, রানাঘাট
জেলা ঃ হুগলী২৪) বি পি আর কলোনী, ত্রিবেণী ২৫) বীর ক্ষুদিরাম কলোনী, ত্রিবেণী ২৬) শিব সোহাগিনী কলোনী (বাস্তুহারা সমিতি), ত্রিবেণী ২৭) নেতাজীনগর কলোনী, ত্রিবেণী
জেলা ঃ বর্ধমান২৮) শ্রমিকনগর কলোনী, বাঁকুড়া মোড়, দুর্গাপুর-১ ২৯) বিধান পল্লী, দুর্গাপুর-৬ ৩০) সুকুমারনগর, বাঁকুড়া রোড, দুর্গাপুর-১ ৩১) নেতাজী কলোনী, দুর্গাপুর-১৩ ৩২) ইন্দিরা নগর কলোনী, দুর্গাপুর
_____________________________________________________
১৯৫০-পরবর্তী উদ্বাস্তু জবরদখল কলোনী, ১লা জানুয়ারী, ১৯৫১ এবং ২৫শে মার্র্চ, ১৯৭১ এর মধ্যবর্তী সময়ে স্থাপিত।
জেলা ঃ বীরভূম১) পাহাড়পুর ২) চন্দ্রপুর ৩) বালিতা ৪) শম্ভুনগর ৫) চারর ৬) মুক্তিনগর ৭) বসন্তপুর ৮) চাপলা ৯) দইপুর ১০) পলাশডাঙা ১১) নীলডাঙা ১২) ক্ষুদ্রপুর ১৩) লক্ষণপুর ১৪) সন্তোষপুর ১৫) নেতাজীনগর ১৬) খয়েরবুনি ১৭) শ্রীচন্দপুর ১৮) হলসিডাঙা ১৯) তেকেদ্দাঘাট ২০) ছোট শিমুলিয়া ২১) টিকুরি ২২) রামনগর
জেলা ঃ মুর্শিদাবাদ২৩) বারোদুয়ারী ও বারোদুয়ারী ২৪) কুসুমখোলা কলোনী ২৫) বিবেকানন্দ কলোনী ২৬) পরশপুর লেনিন কলোনী ২৭) বাবলাবনা কলোনী ২৮) বিধাননগর কলোনী ২৯) সেকেন্দি পাহাড় কলোনী ৩০) সিংহপাড়া কলোনী ৩১) নয়া পল্লী ৩২) সূর্যনগর কলোনী ৩৩) সুভাষ কলোনী ৩৪) ইছাগঞ্জ গঙ্গাধর ৩৫) রামেশ্বরপুর মল্লিকপাড়া ৩৬) পিলখানা ৩৭) নিরঞ্জন নগর-২ ৩৮) গান্ধী নগর কলোনী ৩৯) নিচুপট্টি ধানকল কলোনী ৪০) মিলন পল্লী, চন্দরনগর (জানুয়ারি ১৯৭০) ৪১) নিরঞ্জন কলোনী (ডিসেম্বর ১৯৬৯) ৪২) লাহানগর ৪৩) মাইকেল পল্লী ৪৪) সারদা পল্লী ৪৫) রাজাবাগান ৪৬) নারায়ণ পল্লী ৪৭) বি.বি.ডি. কলোনী ৪৮) শান্তি কলোনী ৪৯) দাস কলোনী ৫০) ত্রিবেণী রেলওয়ে ঘাট ৫১) কানচাটি ৫২) বিমলা ব্যানার্জী ৫৩) নিরঞ্জন পল্লী ৫৪) নেতাজী সুভাষ কলোনী ৫৫) কৃষ্ণদাস ৫৬) মিতালি পল্লী ৫৭) সরস্বতী ৫৮) হৃষিকেশ পল্লী ৫৯) অমল পল্লী ৬০) ক্ষুদিরাম পল্লী ৬১) তিন্না জবরদখল ৬২) ইঁটভাঁটা কলোনী ৬৩) নারিকেলবাগান কলোনী ৬৪) নব পল্লী ৬৫) স্বামিজী পল্লী ৬৬) রেলগেট কলোনী ৬৭) সুকান্ত কলোনী ৬৮) জ্যোতি কলোনী ৬৯) দাদপুর কলোনী ৭০) দক্ষিণগোপাল তারা-মালিক কলোনী ৭১) পরমেশ্বরী গিরিধারী কলোনী ৭২) অমল পল্লী নং-২ ৭৩) নেতাজী নগর নং-২ ৭৩(ক) সুবোধ পল্লী নং-২, মহানডাঙা
জেলা ঃ নদীয়া৭৪) বঙ্কিমনগর কলোনী ৭৫) রামকৃষ্ণ পল্লী (কুমুদনগর কলোনী) ৭৬) নবীনপল্লী (নূতনপল্লী) ৭৭) মুক্তিনগর (সুভাষপল্লী) ৭৮) রাজা রাম মোহন পল্লী ৭৯) সুভাষ পল্লী ৮০) বীরনগর চক্রবর্তী পাড়া কলোনী ৮১) হরিতলা স্কোয়াটার্স কলোনী ৮২) করুণাময় নং-১ ৮৩) করুণাময় নং-২ ৮৪) বিধাননগর কলোনী ৮৫) মুক্তিনগর কলোনী ৮৬) নিরঞ্জনপল্লী ৮৭) বিধানপল্লী উন্নয়ন সমিতি ৮৮) পাঁচের পল্লী (নেতাজী, বিধান কলোনী এবং উদয়গড়ের সঙ্গে যুক্ত) ৮৯) তালতলা কলোনী ৯০) কাঁঠাল তলা ৯১) ঘোষপাড়া উদ্বাস্তু কলোনী ৯২) চাঁদমারি নূতনপল্লী ৯৩) যোগেন্দ্রনাথ কলোনী ৯৪) কল্যাণী সীমান্ত কলোনী ৯৫) বারোহাট কলোনী ৯৬) ঝিলপার কলোনী ৯৭) নং-২, মিত্র কলোনী ৯৮) ১৪ নং সাঁওতালপাড়া ৯৯) ফাঁড়িপাড়া ১০০) সীড ফার্ম (আদিবাসী) ১০২) আই.টি.আই. কলোনী ১০৩) বীর সিধু কানু নগর ১০৪) পুকুরপার কলোনী, অামবাগান কলোনী ১০৫) মাঝেরচর কোনারনগর, মাঝেরচর ব্লক-৩, মাঝেরচর নূতনপল্লী ১০৬) বিধান পল্লী ১০৭) রবীন্দ্র কলোনী ১০৮) বিবেকানন্দ কলোনী ১০৯) পূর্ব চাঁদমারি নতুননগর কলোনী, চাঁদমারি, কল্যাণী ১১০) মাঝেরচর কাছারিপাড়া ১১১) শহীদ পল্লী (রথতলার কাছে), কল্যাণী রথতলা ১১২) দক্ষিণ চাঁদমারি কলোনী ১১৩) ল্যান্ড লেস কলোনী ১১৪) ধরমবীর কলোনী ১১৫) বিধান পল্লী ১১৬) কে.বি.এম. বাস্তুহারা কলোনী ১১৭) নেতাজী জবরদখল কলোনী ১১৮) বিধানপল্লী ১১৯) সুকান্তনগর ১২০) আনন্দপল্লী ১২১) লেনিন পল্লী ১২২) সুকান্ত পল্লী ১২৩) হরেকৃষ্ণ কোঙার পল্লী ১২৪) কানপুর ১২৫) জোড়াকুঠি ১২৬) শিমুলতলা/অমৃতেন্দু কলোনী ১২৭) ধুবুলিয়া নূতনবাজার ১২৮) ধুবুলিয়া বিশ্বাস, বালি/গবুরকুলি কলোনী ১২৯) ফাঁসিতলা কলোনী ১৩০) রামকৃষ্ণ কলোনী ১৩১) উঁচুপাড়া কলোনী ১৩২) লেনিন কলোনী/নেহরু নগর কলোনী ১৩৩) স্তালিন কলোনী/ভূপেশ দে কলোনী ১৩৪) স্তালিন কলোনী/সুহাস কলোনী ১৩৫) বিপ্রনগর কলোনী/কানাইনগর কলোনী ১৩৬) নেতাজী কলোনী ১৩৭) মুজফফর নগর কলোনী ১৩৮) শহীদ বাদল দত্ত কলোনী
জেলা ঃ বাঁকুড়া১৩৯) রাঙামাটি-কনেটি কলোনী ১৪০) শান্তিপুর কলোনী ১৪১) দৌলিসুহাসপল্লী ১৪২) ভিতসায়র-হুরকুন্ডা চর কলোনী ১৪৩) পাঁখাইচন্ডীপল্লী ১৪৪) মথুরা রণচক গৌর মিলন পল্লী ১৪৫) সরিসাডিহি কৌতুলপুর কলোনী ১৪৬) আমডাহি কলোনী ১৪৭) চুয়াডাঙা কলোনী ১৪৮) বেতালান মহামায়া কলোনী ১৪৯) বঙাল চক-কলা পত্রাই পল্লী ১৫০) সাঁপুড়া তন্তুলমুড়ি কলোনী ১৫১) খাটনগর কলোনী ১৫২) নিত্যানন্দপুর বালুয়া পল্লী ১৫৩) অমৃতপাড়া-বসিয়া রামপুর কলোনী ১৫৪) কুরুমপুর ভাটপাড়া মুনুই সংযুক্ত কলোনী ১৫৫) বড়-পালসুরা কলোনী ১৫৬) উত্তর পটাশপুর বারাসাত মুড়াপাড়া কলোনী ১৫৭) পারুলিয়া কোষাতপুর ১৫৮) পাঁচপাড়া তাসুলি চর গোবিন্দপুর কলোনী ১৫৯) দক্ষিণ গোবিন্দপুর কলোনী ১৬০) উদয় পল্লী ১৬১) বারামানা কলোনী ১৬২) রামকৃষ্ণ পল্লী ১৬৩) পল্লীশ্রী কলোনী ১৬৪) সীতারামপুর মানা কলোনী ১৬৫) শ্রী নগর কলোনী ১৬৬) তেলেন্দা বিবেকানন্দ পল্লী ১৬৭) চর দামোদর মোহানা কলোনী
জেলা ঃ হাওড়া১৬৮) শান্তি কলোনী ১৬৯) নেতাজী নগর (চাঁদমারি) ১৭০) রাজচন্দ্রপুর ১৭১) বলানন্দ নগর উপনিবেশ ১৭২) শ্রীনগর (২-নং) কলোনী ১৭৩) শ্রীনগর কলোনী (৩-নং) ১৭৪) শ্রীনগর ১৭৫) মা সারদা পল্লী ১৭৬) মাট্টিনগর (উপনিবেশ) ১৭৭) মাটিগড় ১৭৮) নৃপেন্দ্র পল্লী ১৭৯) রবীন্দ্র নগর ১৮০) বিনয় বাদল দীনেশ স্মৃতি পল্লী ১৮১) সূর্য সেন উদ্বাস্তু কলোনী ১৮২) উদ্বাস্তু কলোনী ১৮৩) পশ্চিম পাড়া কলোনী ১৮৪) আতর আলি বিশ্বাস কলোনী ১৮৫) ঋষি দাস কলোনী ১৮৬) ঋষি দাস কলোনী (নং-২) ১৮৭) সূর্য নগর কলোনী ১৮৮) সুকান্তপল্লী কলোনী ১৮৯) ভারত মাতা কলোনী নং-১ ১৯০) বিবেকানন্দ পল্লী ১৯০(ক) নতুন নগর কলোনী ১৯১) পশ্চিম দাস নগর (নব জীবন সমিতি) ১৯২) রামকৃষ্ণ পল্লী ১৯২(ক) ভারত মাতা- ২ এবং ৩ নং ১৯৩) চন্দ্রপুর কলোনী ১৯৪) চর ওরফুলি কলোনী ১৯৫) কঁাটা পুকুর কলোনী ১৯৬) খানজাদাপুর কলোনী
জেলা ঃ মালদা১৯৭) মঙ্গলবাড়ি কলোনী ১৯৮) খইহাটা কলোনী ১৯৯) গান্ধী কলোনী ২০০) চরলক্ষ্মীপুর কলোনী ২০১) খানপুর কলোনী ২০২) বগলাবগি কলোনী (রানীর গড়) ২০৩) বিলবাড়ি নাজির-খানি কলোনী ২০৪) বুড়োবুড়িতলা কৃষ্ণপল্লী কলোনী ২০৫) পশ্চিম সর্বমঙ্গলা পল্লী কলোনী ২০৬) আদিনা কলোনী ২০৭) উত্তর মহিমনগর ও কাঞ্চননগর কলোনী ২০৮) গোবিন্দপুর কলোনী ২০৯) ডুবা খোকসন কলোনী ২১০) কাদুবাড়ি কলোনী ২১১) চন্দ্রাইল কলোনী ২১২) বোলবাড়ি কলোনী ২১৩) কুতুবশহর-গোলঘর কলোনী ২১৪) ঘোষানী বাগ কলোনী ২১৫) কুতুবশহর কলোনী ২১৬) দাল্লা কলোনী ২১৭) পার্বতীডাঙা কলোনী ২১৮) আগ্রা কলোনী ২১৯) তেলনাই কলোনী ২২০) হরিশচন্দ্রপুর ও আরাগাছি কলোনী ২২১) নন্দগড় ও পোয়ালি কলোনী ২২২) পাথর সাসুলি কলোনী ২২৩) ধারন্দা ও যুগি-পাথর কলোনী ২২৪) কুচিয়ামোড় কলোনী ২২৫) কেন্দুয়া কলোনী ২২৬) ছৈতানগাছি মধ্যম কেন্দুয়া (ডেয়ারি ফার্ম) কলোনী ২২৭) বুলবুলচন্ডী রাইস মিল (কেন্দুয়া) কলোনী ২২৮) বক্সীনগর কলোনী ২২৯) জয়দেবপুর কলোনী ২৩০) দিগলবাড়ি কলোনী ২৩১) বারওয়াডাঙা কলোনী ২৩২) ভাঙাতলা কলোনী ২৩৩) ফুলডাঙা কলোনী ২৩৪) চিনিদানা কলোনী
জেলা ঃ মেদিনীপুর২৩৫) দীনেশ নগর ২৩৬) বরিশাল কলোনী (মেদিনীপুর টাউন) ২৩৭) বেলদা ২৩৮) বামুনপাড়া ২৩৯) বালিচক ২৪০) টোরিপাড়া স্কোয়াটার্স কলোনী ২৪১) গোপালী স্কোয়াটার্স কলোনী ২৪২) বুলবুলচটি স্কোয়াটর্াস কলোনী, বুলবুলচটি ২৪৩) ঝাড়গ্রাম বনাগড়িয়া, বামদা, জঙ্গল খাস ইত্যাদি ২৪৪) উদয়পল্লী ক্যান্টনমেন্ট বড়পাথরা ও তেন্তিগড়িয়া
জেলা ঃ কলকাতা২৪৫) রেলওয়ে কলোনী ২৪৬) ক্ষুদিরাম কলোনী (এই কলোনীর অন্তর্ভুক্ত ক্ষুদিরাম ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি) ২৪৭) সত্যেন বোস নগর কলোনী ২৪৮) পূর্ব বঙ্গ বাস্তুহারা রিলিফ কমিটি ২৪৯) স্যালভেশন স্টোর ডিপো কলোনী ২৫০) মাঝেরহাট কলোনী ২৫১) শহীদ নগর কলোনী ২৫২) পুর বস্তি কলোনী ২৫৩) অরবিন্দ কলোনী ২৫৪) বিপ্লবী ক্ষুদিরাম পল্লী ২৫৫) সরকার বাগান বাস্তুহারা সমিতি ২৫৬) চাঁদপুর কলোনী (পুরনো নাম শ্রীদুর্গা কলোনী-১) ২৫৭) গভর্নমেন্ট কলোনী (বস্তি)
জেলা ঃ বর্ধমান২৫৮) নূতন পল্লী কলোনী ২৫৯) লেনিন নগর কলোনী ২৬০) আদর্শ পল্লী ২৬১) সেলিমাবাদ নং-১ ২৬২) সুকান্তপল্লী ২৬৩) রসুলপুর নতুন কলোনী ২৬৪) হরেকৃষ্ণ কোঙার কলোনী ২৬৫) বিষ্ণুপুর কলোনী ২৬৬) পাল্লা চন্ডাই জবরদখল কলোনী ২৬৭) মহেশ ডাঙা জবরদখল কলোনী ২৬৮) মন্টেশ্বর তলা ক্যানালপুর কলোনী ২৬৯) চাপুই কলোনী ২৭০) পল্লী শ্রী কলোনী ২৭১) সাগুন বাগান কলোনী (বরসুল) ২৭২) জিতেন নগর কলোনী ডি.টি.পি.এস. (দুর্গাপুর) ২৭৩) ছোড়া কলোনী ২৭৪) ডঃ আম্বেদকর কলোনী (নিউ গমেন ব্রিজ দুর্গাপুর) ২৭৫) রতিবাটি চন্দ্র জবর দখল কলোনী ২৭৬) রায়ডাঙা কলোনী ২৭৭) রবীন্দ্র কলোনী (উদয় পল্লী) ২৭৮) গণতন্ত্র কলোনী ২৭৯) রথতলা ওল্ড কলোনী ২৮০) তাজগঞ্জ গনলপুর ২৮১) বারদুয়ারি কলোনী (কাঞ্চনগড়) ২৮২) সদরঘাট ক্যানালপুর কলোনী ২৮৩) বামুনপুকুর কলোনী ২৮৪) সুকান্ত কলোনী (বরসুল) ২৮৫) হরিপল্লী কলোনী (বরসুল) ২৮৬) পাতাল পাড়া কলোনী (বরসুল) ২৮৭) তাতুলতলা কলোনী ২৮৮) দেশবন্ধুনগর কলোনী দুর্গাপুর-৩ ২৮৯) পানাগড়বাজার কলোনী ২৯০) সুকান্তপল্লী কলোনী ২৯১) শ্রীমা কলোনী (পুলিশ লাইন) ২৯২) শিবশঙ্কর কলোনী ২৯৩) খানপুকুর কলোনী (কালনা গেট) ২৯৪) সুকান্তপল্লী কলোনী ২৯৫) আমবাগান কলোনী ২৯৬) সুভাষ পল্লী ২৯৭) বিধানপল্লী বিদ্যাসাগর কলোনী পোঃ শ্রীপল্লী ২৯৮) নিয়ামতপুর ক্যাম্পিং গ্রাউন্ড (সীতারামপুর রেলওয়ে স্টেশন রোড) ২৯৯) গোবিন্দ কলোনী ৩০০) শরৎপল্লী কলোনী ৩০১) রবীন্দ্রপল্লী ৩০২) বাম মসজিদ কলোনী ৩০৩) রায়নগর কলোনী ৩০৪) আদর্শ কলোনী ৩০৫) সুভাষ পল্লী ৩০৬) রসুলপুর কলোনী ৩০৭) দলুই বাজার কলোনী ৩০৮) বিহার নতুন পল্লী ৩০৯) হরকৃষ্ণ নগর কলোনী ৩১০) দীনেশনগর, শিয়ালডাঙা জবর দখল কলোনীর পরিবর্তে ৩১১) শাঁখরি পুকুর নং-৪ ৩১২) আশিসনগর কলোনী ৩১৩) মিলকি আদর্শ পল্লী কলোনী ৩১৪) নেতাজীপল্লী কলোনী ৩১৫) জ্যোতিপল্লী কলোনী ৩১৬) শহীদ ক্ষুদিরাম কলোনী নং-৫, ইছালাবাদ ৩১৭) স্বস্তি পল্লী কলোনী ৩১৮) রামুদি কলোনী (সদরঘাট) ৩১৯) শ্যামপুর এস. এস. কলোনী ৩২০) ডাঙাপাড়া, পাথরকুচি কলোনী ৩২১) ডেকুরি কলোনী ৩২২) সুকান্ত পল্লী কলোনী (ভূত বাগান) ৩২৩) দাসপাড়া কলোনী
জেলা ঃ দার্জিলিং৩২৪) মহাকাল স্কোয়াটার্স কলোনী ৩২৫) দুর্গাদাস কলোনী ৩২৬) ডাবগ্রাম উন্নয়ন-১ ৩২৭) ডাবগ্রাম উন্নয়ন-২ ৩২৮) দেশবন্ধু পাড়া স্কোয়াটার্স কলোনী ৩২৯) দেবাশিস ক্সোয়াটার্স কলোনী ৩৩০) দাস স্কোয়াটার্স কলোনী ৩৩১) শ্রমিকনগর স্কোয়াটার্স কলোনী ৩৩২) উদয়ন উন্নয়ন কলোনী ৩৩৩) বাঘাযতীন কলোনী ৩৩৪) সুহাস নগর ৩৩৫) বি.বি.ডি. কলোনী ৩৩৬) আদর্শনগর ৩৩৭) নতুন পাড়া ৩৩৮) প্রান্তিক পল্লী ৩৩৯) জ্যোতিনগর নং-২ ৩৪০) পাতি কলোনী
জেলা ঃ কুচবিহার৩৪১) পাতলাখোয়া (কৃৃষি) ৩৪২) রাসমণি কলোনী (কৃষি) ৩৪৩) পুঁটিমারি বক্সীরবেশ (অ-কৃষি) কলোনী ৩৪৪) বিধান উপনিবেশ (অ-কৃষি) ৩৪৫) নিউ পাতাকুড়া কলোনী (অ-কৃষি) ৩৪৬) ইন্দ্রজিৎ, নেহেরু নগর, চন্দননগর (অ-কৃষি) ৩৪৭) শ্যাম সুন্দর কলোনী (অ-কৃষি) ৩৪৮) খাগরিয়ারি কলোনী (অ-কৃষি) ৩৪৯) গড়হাঙা ও ছাতওয়ালেকা কলোনী (কৃষি) ৩৫০) গান্ধীনগর কলোনী গুড়িয়াহাটি (অ-কৃষি) ৩৫১) প্রিয়গঞ্জ কলোনী ৩৫২) ডাকেশ্বরী নং-১ ৩৫৩) আশুতোষ পল্লী নং-১ ৩৫৪) নেতাজী কলোনী ৩৫৫) আশুতোষ পল্লী নং-২ ৩৫৬) রামকৃষ্ণ পল্লী ৩৫৭) ধুবি ব্লক কলোনী ৩৫৮) শ্যাম সুন্দর কলোনী নং-২ ৩৫৯) চকচকা গভর্নমেন্ট জায়গীর ল্যান্ড ৩৬০) নাটুয়ারপুর কলোনী (কৃষি) ৩৬১) বানেশ্বর কলোনী ৩৬২) সাজেরপাড়া ঘরমারা (কৃষি) ৩৬৩) গোপালনগর কলোনী ৩৬৪) দরিবেশ কলোনী ৩৬৫) মিডল ক্লাস কলোনী হলদিবাড়ি মেখলিগঞ্জ ৩৬৬) কোদালধোয়া নং-২
জেলা ঃ জলপাইগুড়ি৩৬৭) ভক্তিনগর স্কোয়াটার্স কলোনী (১ ও ২), ডাবগ্রাম ৩৬৮) হরেকৃষ্ণ স্কোয়াটার্স কলোনী ৩৬৯) শরৎ পল্লী স্কোয়াটার্স কলোনী ৩৭০) বঙ্কিমনগর স্কোয়াটার্স কলোনী ৩৭১) শীতলপাড়া স্কোয়াটার্স কলোনী ৩৭২) ঠাকুরনগর স্কোয়াটার্স কলোনী ৩৭৩) আনন্দনগর স্কোয়াটার্স কলোনী ৩৭৪) মহামায়া স্কোয়াটার্স কলোনী ৩৭৫) ঢাকা উদ্বাস্তু স্কোয়াটার্স কলোনী ৩৭৬) ধুমডাঙি স্কোয়াটার্স কলোনী ৩৭৭) বিজয়নগর স্কোয়াটার্স কলোনী ৩৭৮) ঢাকেশ্বরী স্কোয়াটার্স কলোনী ৩৭৯) সূর্য্যসেন স্কোয়াটার্স কলোনী ৩৮০) নিরঞ্জননগর স্কোয়াটার্স কলোনী (১, ২, ৩, ৪) ৩৮১) নেতাজীনগর স্কোয়াটার্স কলোনী ৩৮২) নোকাঘাট স্কোয়াটার্স কলোনী (নাঘাটা) ৩৮৩) শান্তিনগর স্কোয়াটার্স কলোনী ৩৮৪) অশোকনগর (১ ও ২) ৩৮৫) অজয় ঘোষ পল্লী স্কোয়াটার্স কলোনী ৩৮৬) বানারহাট অাদর্শ পল্লী স্কোয়াটার্স কলোনী ৩৮৭) মাল নেতাজী বাস্তুহারা কলোনী (১ ও ২) ৩৮৮) রামকৃষ্ণ কলোনী ৩৮৯) বাঘা যতীন কলোনী ৩৯০) ইন্দিরা গান্ধী কলোনী ৩৯১) বাঘা যতীন কলোনী ৩৯২) রবীন্দ্র নগর কলোনী ৩৯৩) অরবিন্দ নগর স্কোয়াটার্স কলোনী ৩৯৪) হ্যামিলটনগঞ্জ (রবীন্দ্রনগর) ৩৯৫) বিধানপল্লী ৩৯৬) আনন্দনগর ৩৯৭) ভোলারদাবড়ি ও সুবর্ণপুর ৩৯৮) রবীন্দ্রনগর ৩৯৯) চিত্ত রঞ্জন ৪০০) খড়ডাঙা ৪০১) পূর্ব নগরতলী ৪০২) উত্তর নগরতলী ৪০৩) ছোটো দলদলি ও গোচামারি ৪০৪) সুভাষ কলোনী ৪০৫) কুঞ্জনগর ৪০৬) জীবনমোহিনী ঘোষ পার্ক ৪০৭) কল্যাণনগর কলোনী ৪০৮) রামমোহন কলোনী ৪০৯) শ্রী শ্রী মা সারদা পল্লী ৪১০) রাজা রামমোহন পল্লী ৪১১) জয়হিন্দ পল্লী ৪১২) প্রান্ত পল্লী ৪১৩) সুভাষ পল্লী ৪১৪) নিরঞ্জন সেন পল্লী ৪১৫) রঞ্জন পল্লী ৪১৬) শরৎ পল্লী ৪১৭) দীনেশ পল্লী ৪১৮) কংগ্রেস পল্লী (১ ও ২) ৪১৯) হীরেন সরকার ফার্ম রিফিউজি কলোনী ৪২০) বাদল পল্লী ৪২১) রামকৃষ্ণ নগর কলোনী ৪২২) নজরুল কলোনী ৪২৩) মানিকপুর সুভাষ কলোনী ৪২৪) পূর্ব ফুলবাগান কলোনী ৪২৫) নর্থ ফুলবাগান কলোনী ৪২৬) বীর নগর কলোনী ৪২৭) বাঘাযতীন ইস্ট ব্লক, পূর্ব ৪২৮) বিদ্যাসাগর কলোনী নং-২ ৪২৯) কৃষ্ণকলি কলোনী ৪৩০) হেরোভাঙা স্কীম-২ ৪৩১) নিউ রবীন্দ্রনগর ৪৩২) বাঘাযতীন কলোনী (নিউ) ৪৩৩) নবপল্লী সূর্য্য সেন নগর ৪৩৪) বিনয় পল্লী উন্নয়ন সমিতি ৪৩৫) এইচ.এল. সরকার রোড গ্লাস ফ্যাক্টরি কলোনী ৪৩৬) দীনেশ নগর ৪৩৭) জনতা কলোনী ৪৩৮) আদর্শ নগর কলোনী ৪৩৯) বিনয় বাদল দীনেশ পল্লী ৪৪০) বঙ্কিম পল্লী ৪৪১) নিউ কলোনী ৪৪২) কালীমাতা কলোনী
জেলা ঃ ২৪-পরগণা৪৪৩) ইন্দিরানগর কলোনী ৪৪৪) লেনিনগড় কলোনী ৪৪৫) নয়া কুমারগড় ৪৪৬) চৈতন্য নগর কলোনী ৪৪৭) আনন্দ নগর ৪৪৮) আজাদহিন্দ নগর কলোনী ৪৪৯) ডোমোপুকুর কলোনী (রামকৃষ্ণপুর কলোনী) ৪৫০) মহা শক্তি নগর কলোনী ৪৫১) উসুমপুর পল্লী-৪ ৪৫২) সত্যপ্রিয় নগর ৪৫৩) রবীন্দ্রনগর কলোনী ৪৫৪) মাতঙ্গিনী হাজরা পল্লী ৪৫৫) শতদল পল্লী ৪৫৬) বিবেকনগর কলোনী ৪৫৭) সতীন সেন পল্লী ৪৫৮) শহীদ মহল-২ ৪৫৯) দুলাল নগর কলোনী ৪৬০) দীপক নগর কলোনী-১ ৪৬১) দীপক নগর কলোনী-২ ৪৬২) দীপক নগর কলোনী-৩ ৪৬৩) নিত্যানন্দ পল্লী ৪৬৪) বিবেকানন্দ পল্লী ৪৬৫) হো-চি-মিন নগর ৪৬৬) নবোদয় পল্লী ৪৬৭) নতুন পল্লী (বিজয়গড় কলোনী) ৪৬৮) নেতাজী নগর কলোনী-১ ৪৬৯) নিরঞ্জন পল্লী-২ ৪৭০) অম্বিকা পল্লী ৪৭১) রথতলা কলোনী ৪৭২) কার্তিক মল্লিক কলোনী ৪৭৩) এগারোর পল্লী ৪৭৪) বিধান পল্লী ৪৭৫) ক্রিশ্চিয়ান কলোনী ৪৭৬) কাদিহাটি নেতাজী কলোনী ৪৭৭) কালীধাম কলোনী ৪৭৮) হরেকৃষ্ণ কলোনী ৪৭৯) নারায়ণ পল্লী (সর্বহারা) ৪৮০) হরেকৃষ্ণ পল্লী (সুভাষ পল্লী-২) ৪৮১) কালীমাতা কলোনী-২ ৪৮২) দেশপ্রিয় পল্লী ৪৮৩) বিধান কলোনী ৪৮৪) নিরঞ্জন সেন নগর ৪৮৫) সেবাগ্রাম সাপ্লিমেন্টারি কলোনী ৪৮৬) শান্তি নগর উদ্বাস্তু কলোনী ৪৮৭) নিউ শ্রী পল্লী ৪৮৮) লেনিনগড় ৪৮৯) নিরঞ্জন নগর এ-ব্লক ৪৯০) নিরঞ্জন নগর ৪৯১) ঈশ্বরদয়াল কল্যাণ পল্লী ৪৯২) সুকান্ত পল্লী ৪৯৩) আম্রপল্লী বাসিন্দা কলোনী ৪৯৪) আমবাগান কলোনী ৪৯৫) ভগিনী নিবেদিতা কলোনী ৪৯৬) কালীনগর স্কোয়াটার্স কলোনী ৪৯৭) মাতঙ্গিনী স্কোয়াটার্স কলোনী ৪৯৮) বিবেকানন্দ কলোনী ৪৯৯) শাস্ত্রী পল্লী ৫০০) তরুণ পল্লী ৫০১) সর্বহারা পল্লী-১ ৫০২) রামকৃষ্ণ কলোনী ৫০৩) শ্রী দুর্গা কলোনী ৫০৪) লক্ষ্মী নারায়ণ কলোনী ৫০৫) বিপ্লবী সূর্য্য সেন কলোনী ৫০৬) নিরঞ্জন নগর ব্লক-এ ৫০৭) নিরঞ্জন নগর ব্লক-বি ৫০৮) পানিহাটি জয়প্রকাশ কলোনী ৫০৯) জয়প্রকাশ নগর কলোনী ৫১০) প্রজাতন্ত্র পল্লী ৫১১) নিউ আদর্শ কলোনী ৫১২) নিউ জয়শ্রী পল্লী ৫১৩) উপেন্দ্র পল্লী ৫১৪) দক্ষিণ বন্দীপুর কলোনী ৫১৫) উত্তর বাসুদেবপুর উদ্বাস্তু কলোনী ৫১৬) অরুণোদয় পল্লী ৫১৭) সুকান্ত নগর ৫১৮) অনন্তপুর উদ্বাস্তু কলোনী ৫১৯) সুভাষ নগর কলোনী (পীরগাছা) ৫২০) স্বামিজী নগর কলোনী ৫২১) হৃদয়পুর রেলওয়ে সাইড কলোনী ৫২২) নিরঞ্জন নগর-১,২,৩ ৫২৩)মতিনগর কলোনী ৫২৪) শ্যামাপ্রসাদ পল্লী ৫২৫) আজাদ হিন্দ পল্লী ৫২৬) সুলঙ্গিনী কলোনী ৫২৭) বাগজোলা নিউ ক্যাম্প ৫২৮) নিরঞ্জন পল্লী-২ ৫২৯) নেতজী নগর (নিরঞ্জন পল্লী-২) ৫৩০) নিউ নরেন্দ্র নগর স্কোয়াটার্স কলোনী ৫৩১) নেতাজী পল্লী ৫৩২) মদন মোহন কলোনী ৫৩৩) ১২ নং রেলগেট কলোনী ৫৩৪) রেলওয়ে সাইড কলোনী ৫৩৫) নতুন গ্রাম কলোনী ৫৩৬) কলেজ কর্নার স্কোয়াটার্স কলোনী ৫৩৭) কুমার পল্লী ৫৩৮) কয়রা কদম্বগাছি স্কোয়াটার্স কলোনী ৫৩৯) সিদ্ধার্থ নগর স্কোয়াটার্স কলোনী ৫৪০) চিত্তরঞ্জন উদ্বাস্তু ৫৪১) নিত্যানন্দ পল্লী ৫৪২) ইউনিটি কলোনী-১ ৫৪৩) ইউনিটি কলোনী-২ ৫৪৪) সূর্য্য সেন কলোনী ৫৪৫) পন্ডিতজী কলোনী ৫৪৬) কমলাপুর কলোনী ৫৪৭) তালতলা কলোনী ৫৪৮) বিবেকনগর কলোনী ৫৪৯) সাদিকনগর কলোনী ৫৫০) মণিমারী কলোনী ৫৫১) আড়বেলিয়া কলোনী ৫৫২) নেতাজী পল্লী
জেলা ঃ পশ্চিম দিনাজপুর৫৫৩) পীরপুকুর কলোনী ৫৫৪) হাই রোড কালীতলা কলোনী ৫৫৫) নেতাজী পল্লী কলোনী ৫৫৬) শক্তিনগর কলোনী ৫৫৭) শিল্পীনগর কলোনী ৫৫৮) মালিপাড়া কলোনী ৫৫৯) মা মনসা কলোনী ৫৬০) ১ নং পশ্চিম আপ্তরি কলোনী ৫৬১) সুভাষ কলোনী ৫৬২) দেশবন্ধু কলোনী ৫৬৩) সন্তোষী মা কলোনী ৫৬৪) কারবালা কলোনী ৫৬৫) তেওর বাঘা কলোনী ৫৬৬) ড্রাইভার্স কলোনী ৫৬৭) পার্বতী রাম হালদার কলোনী ৫৬৮) পদ্মপুকুর কলোনী ৫৬৯) এ.কে. গোপালন কলোনী ৫৭০) ছিন্নমস্তা পল্লী কলোনী ৫৭১) পাবনা কলোনী ৫৭২) ধিয়াগড় কলোনী (নয়া দাসপাড়া) ৫৭৩) হপ্তিয়াগাছ উদ্বাস্তু কলোনী ৫৭৪) জিয়াগুড়ি জয়পুরা উদ্বাস্তু কলোনী ৫৭৫) হুলামুগাছ উদ্বাস্তু কলোনী ৫৭৬) মানগাছ উদ্বাস্তু কলোনী ৫৭৭) চাকসুবিদ হেরমেন কলোনী ৫৭৮) সন্ন্যাস কলোনী ৫৭৯) খাদিমপুর মালদেরপাড়া ওয়েস্ট কলোনী ৫৮০) অত্রি কলোনী ৫৮১) ভাটপাড়া কলোনী ৫৮২) ডাঙি দক্ষিণ কলোনী ৫৮৩) ডাঙি পাথরঘাটা কলোনী ৫৮৪) কলমপুর নেতাজী কলোনী ৫৮৫) আতেয়ার কলোনী ৫৮৬) নামডাঙা কলোনী ৫৮৭) দুর্গাপুর বাস্তুহারা কলোনী ৫৮৮) জোড়াপানি উদ্বাস্তু কলোনী ৫৮৯) সুবন্ধীগাছি উদ্বাস্তু কলোনী ৫৯০) রতুগাছ উদ্বাস্তু কলোনী ৫৯১) তিন-মাইল রোড উদ্বাস্তু কলোনী ৫৯২) তিন-মাইল রেল স্টেশন উদ্বাস্তু কলোনী ৫৯৩) আদরাগুড়ি (দক্ষিণ) উদ্বাস্তু কলোনী ৫৯৪) কংগ্রেস কলোনী ৫৯৫) কংগ্রেস কলোনী নং-২ (জ্যোতিনগর কলোনী) ৫৯৬) ছত্রগাছ নিরঞ্জন পল্লী উদ্বাস্তু কলোনী ৫৯৭) আড়িয়াগাঁও-নারায়ণপুর উদ্বাস্তু কলোনী ৫৯৮) অনন্তনগর মিলনপল্লী উদ্বাস্তু কলোনী ৫৯৯) নিরঞ্জন উদ্বাস্তু পল্লী ৬০০) প্রমোদ উদ্বাস্তুনগর ৬০১) দক্ষিণ কসবা রবীন্দ্র উদ্বাস্তু কলোনী ৬০২) হরিচাঁদ কলোনী ৬০৩) শক্তিনগর কলোনী ৬০৪) শিল্পীনগর কলোনী।
________
তথ্যপঞ্জী :
Prafulla K. Chakrabarti, The Marginal Men: The Refugees and the Left Political Syndrome in West Bengal, Kalyani, Lumiere Books, 1990কুপার্স ক্যাম্প – 'বাংলার চম্বল' থেকে শান্ত আবাস
Posted by bangalnama on December 22, 2010
2 Votes- লিখেছেন শঙ্কর রায়
প্রায় তিন দশক আগের কথা। পূর্ব পাকিস্তান (এখন বাংলা দেশ) থেকে উচ্ছিন্ন শরণার্থীদের বহু ঠিকানার একটি রাণাঘাটের কুপার্স ক্যাম্প-এ একজন রাজ্য সরকারী অফিসার হঠাত্ হাজির হলেন, সম্ভবত ১৯৮২ সালের মাঝামাঝি সময়ে। তিনি নিজের পরিচয় দিতেই তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলেন কুপার্স ক্যাম্প-এর অবহেলা-প্রতারণার শিকার মানুষেরা। কেউ কেউ অশ্রাব্য ভাষায় হুঁশিয়ারি দিলেন, প্রাণনাশের হুমকিও দিলেন। কিন্তু অফিসারটি একটুও রাগ দেখালেন না। তর্ক করতে চেষ্টা করলেন না। শুধু বললেন, "আপনাদের প্রতি অবিচার, অন্যায় করা হয়েছে, আমি তা জানি। কিন্তু আমাকে একবার সুযোগ দিন, কিছু না করতে পারলে আমি মাথা নীচু করে চলে যাব"।
তাঁরা কিছুটা নরম হলেন। সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি না দিলেও নীরবে যেন বললেন, "আচ্ছা, দেখা যাক।"
তার পরে যা ঘটল, তা অবিশ্বাস্য। মাত্র সাত মাসে। ৭০০-র কিছু বেশী পরিবারের পুনর্বাসন হয়ে গেল। প্রতেক পরিবারের প্রধানের নামে ৭০০০ টাকার ব্যাঙ্ক একাউন্ট খোলা হ'ল আর আড়াই কাঠা জমি পেলেন। তখন অফিসারটি হয়ে উঠলেন, সকলেরই প্রিয়জন। কেশব সেন, ত্রাণ ও পুনর্বাসন দপ্তরের ডেপুটি সেক্রেটারী।
তিনি যেদিন মহাকরণে স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে বদলি হয়ে ত্রাণ ও পুনর্বাসন দপ্তরে গেলেন, সেদিনই জানতে চান, তাঁর কি কাজ। বলা হ'ল শরণার্থী শিবিরগুলির পুনর্বাসন। মন্ত্রী অমৃতেন্দু মুখার্জি। নদীয়া জেলার সিপি আই (এম) নেতা ও পার্টির পশ্চিম বঙ্গ রাজ্য কমিটির সদস্য। ডেকে পাঠালেন কেশববাবুকে। বললেন, বর্ধমানের ও অনুরূপ নির্ঝঞ্ঝাট শিবির। কেশববাবু জিগ্যেস করেছিলেন, সবচেয়ে জটিল ও সমস্যাকীর্ণ কোন শিবির। মন্ত্রীমশাই বললেন,' কুপার্স ক্যাম্প'। কেশববাবু বললেন ওখানেই যাবেন ও সেখানেই পুনর্বাসনের প্রকল্প রূপায়ন করবেন। অমৃতেন্দুবাবু প্রায় শিউরে উঠলেন, "না না। ওটা বাংলার চম্বল। প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারবেন না"। কেশববাবু অনড়। "ওখানেই যাব এবং পুলিশ-নিরাপত্তা কর্মী ছাড়াই"। এবার অমৃতেন্দুবাবু ভীষণ রেগে বললেন যে, তিনি মন্ত্রী এবং তাঁর কথাই শেষ কথা। উত্তর – ঠিকই, কিন্তু তাঁকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে, কারণ পুনর্বাসন তাঁর কাজ। তা যদি না করতে দেওয়া হয়, তাঁকে যেন হোম(পার্সোনেল)-এ ফেরত্ পাঠানো হয়, যাতে তাঁর অন্য দপ্তরে বদলি হয়। অনেকটা নাচার হয়ে নিমরাজি হলেন কমরেড মন্ত্রী। তার পরের দিনই গেলেন রাণাঘাটের কুপার্স ক্যাম্পে। যা ঘটেছিল, তা তো আগেই বলেছি।
দিনের পর দিন পড়ে থেকে জয় করতে পেরেছিলেন কেশববাবু। তার আগে কংগ্রেস, দু-দুটি যুক্ত ফ্রন্ট সরকার ও প্রথম বাম ফ্রন্ট সরকার কিছু করেন নি, কেবল জনগণের, খেটে-খাওয়া মানুষের সরকার আওয়াজ তুলে বিপ্লবী বুলি আওড়ে গেছেন। কেশববাবু নিজের মাইনে থেকে টাকা দিয়ে অনেকের ব্যাঙ্ক একাউন্ট খুলে দিয়েছেন, বিশেষত যাঁরা হত-দরিদ্র তাঁদের। সে কাজটাও সহজ ছিল না। প্রায় ৮০ জন অথর্ব, অথবা রোগজীর্ণ ছিলেন। নিয়ম অনুসারে এদের পি এল ( পার্মানেন্ট লায়াবিলিটি) ক্যাম্পে পাঠাতে হয়। কেশববাবু তাই সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু মন্ত্রী মশাই ক্ষেপে গেলেন, অনুমোদন করতে চাইলেন না, কারণটা কাপুরুষোচিত। পুনর্বাসনের পুরো টাকা দিত কেন্দ্রীয় সরকার, পি এল ক্যাম্পের খরচ/পরিব্যয় রাজ্য সরকারের। তিনি প্রথমে বললেন, অনুমোদন করবেন না। বিনম্র অথচ ঋজু ভাষায় কেশববাবু উত্তর দিয়েছিলেন, "তাহলে আমি বলতে বাধ্য হব, যে আপনি অনুমোদন করেন নি।" নাচার মন্ত্রী মশাইকে শেষে অনুমোদন দিতেই হ'ল।
আত্ম-প্রচার শুধু নয়, এই অভিজ্ঞতাগুলি (যাদবপুর-বিজয়গড় ও কলকাতা বা তার পরিপার্শ্বে উদ্বাস্তু কলোনীগুলির পাট্টার কাজ ও ওঁরই সুপরিকল্পনায় সুসম্পন্ন হয়েছিল) লেখার প্রস্তাব বারবার প্রত্যাখ্যান করেছেন। যে কথাগুলি লিখলাম, সেগুলিও বলতে চান নি। সখেদে বলেছিলেন, "জানেন, কুপার্স ক্যাম্প-এর মানুষেরা কমিউনিস্ট পার্টির ঘনিষ্ট সমর্থক ছিলেন। তাদের সমিতির সম্পাদক, সভাপতি মাখন সরকার সবাই।"
কেশববাবু অবিভক্ত বাংলার সিপি আই-এর সদস্য ছিলেন। তেভাগা আন্দোলনের সময় (১৯৪৫-৪৭) দিনাজপুর জেলার ছাত্র ফেডারেশনের সম্পাদক। তেভাগা আন্দোলন সবথেকে বিস্তৃত হয়েছিল ওই জেলায়। তাঁর ভগ্নীপতি (মেজদির স্বামী) ছিলেন সুশীল সেন। জেলা সিপি আই-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম সম্পাদক। কেশববাবুও জড়িয়ে পড়েছিলেন। বেশ কিছুদিন পূর্ব পাকিস্তানে কারারুদ্ধ ছিলেন। কথাচ্ছলে বলেছিলেন, "রায়গঞ্জ কলেজে বি-এ ক্লাসে ইংরিজী পড়াতেন সুনীতি কুমার ঘোষ, পরবর্তীকালে বিখ্যাত নকশাল নেতা ও তাত্বিক। সেই সময় তিনি ছিলেন ঘোর কংগ্রেসী এবং কমিউনিস্ট-বিরোধী। জেলা ছাত্র ফেডারেশনের দপ্তর উন্মোচন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ করলে বলেছিলেন, ওটা কমিউনিস্টদের ব্যাপার। তাই তিনি যাবেন না।"
কুপার্স ক্যাম্পের সুষ্ঠু পুনর্বাসনের পর মাখনবাবু ও খগেনবাবু কেশব সেনকে নির্বাচনে দাঁড়াতে বলেছিলেন। বিধায়ক আসনে দাঁড়ালে জিততেনই। তখন কেশব বাবু 'রাম গরুড়ের ছানা/ হাসতে তাদের মানা/হাসির কথা শুনলে বলে হাসব না না না না' গোছের আমলা নন, ততদিনে তিনি 'আমি তোমাদেরি লোক'।- Share this:
-
কুপার্স ক্যাম্প – 'বাংলার চম্বল' থেকে শান্ত আবাস
Posted by bangalnama on December 22, 2010
2 Votes- লিখেছেন শঙ্কর রায়
প্রায় তিন দশক আগের কথা। পূর্ব পাকিস্তান (এখন বাংলা দেশ) থেকে উচ্ছিন্ন শরণার্থীদের বহু ঠিকানার একটি রাণাঘাটের কুপার্স ক্যাম্প-এ একজন রাজ্য সরকারী অফিসার হঠাত্ হাজির হলেন, সম্ভবত ১৯৮২ সালের মাঝামাঝি সময়ে। তিনি নিজের পরিচয় দিতেই তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলেন কুপার্স ক্যাম্প-এর অবহেলা-প্রতারণার শিকার মানুষেরা। কেউ কেউ অশ্রাব্য ভাষায় হুঁশিয়ারি দিলেন, প্রাণনাশের হুমকিও দিলেন। কিন্তু অফিসারটি একটুও রাগ দেখালেন না। তর্ক করতে চেষ্টা করলেন না। শুধু বললেন, "আপনাদের প্রতি অবিচার, অন্যায় করা হয়েছে, আমি তা জানি। কিন্তু আমাকে একবার সুযোগ দিন, কিছু না করতে পারলে আমি মাথা নীচু করে চলে যাব"।
তাঁরা কিছুটা নরম হলেন। সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি না দিলেও নীরবে যেন বললেন, "আচ্ছা, দেখা যাক।"
তার পরে যা ঘটল, তা অবিশ্বাস্য। মাত্র সাত মাসে। ৭০০-র কিছু বেশী পরিবারের পুনর্বাসন হয়ে গেল। প্রতেক পরিবারের প্রধানের নামে ৭০০০ টাকার ব্যাঙ্ক একাউন্ট খোলা হ'ল আর আড়াই কাঠা জমি পেলেন। তখন অফিসারটি হয়ে উঠলেন, সকলেরই প্রিয়জন। কেশব সেন, ত্রাণ ও পুনর্বাসন দপ্তরের ডেপুটি সেক্রেটারী।
তিনি যেদিন মহাকরণে স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে বদলি হয়ে ত্রাণ ও পুনর্বাসন দপ্তরে গেলেন, সেদিনই জানতে চান, তাঁর কি কাজ। বলা হ'ল শরণার্থী শিবিরগুলির পুনর্বাসন। মন্ত্রী অমৃতেন্দু মুখার্জি। নদীয়া জেলার সিপি আই (এম) নেতা ও পার্টির পশ্চিম বঙ্গ রাজ্য কমিটির সদস্য। ডেকে পাঠালেন কেশববাবুকে। বললেন, বর্ধমানের ও অনুরূপ নির্ঝঞ্ঝাট শিবির। কেশববাবু জিগ্যেস করেছিলেন, সবচেয়ে জটিল ও সমস্যাকীর্ণ কোন শিবির। মন্ত্রীমশাই বললেন,' কুপার্স ক্যাম্প'। কেশববাবু বললেন ওখানেই যাবেন ও সেখানেই পুনর্বাসনের প্রকল্প রূপায়ন করবেন। অমৃতেন্দুবাবু প্রায় শিউরে উঠলেন, "না না। ওটা বাংলার চম্বল। প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারবেন না"। কেশববাবু অনড়। "ওখানেই যাব এবং পুলিশ-নিরাপত্তা কর্মী ছাড়াই"। এবার অমৃতেন্দুবাবু ভীষণ রেগে বললেন যে, তিনি মন্ত্রী এবং তাঁর কথাই শেষ কথা। উত্তর – ঠিকই, কিন্তু তাঁকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে, কারণ পুনর্বাসন তাঁর কাজ। তা যদি না করতে দেওয়া হয়, তাঁকে যেন হোম(পার্সোনেল)-এ ফেরত্ পাঠানো হয়, যাতে তাঁর অন্য দপ্তরে বদলি হয়। অনেকটা নাচার হয়ে নিমরাজি হলেন কমরেড মন্ত্রী। তার পরের দিনই গেলেন রাণাঘাটের কুপার্স ক্যাম্পে। যা ঘটেছিল, তা তো আগেই বলেছি।
দিনের পর দিন পড়ে থেকে জয় করতে পেরেছিলেন কেশববাবু। তার আগে কংগ্রেস, দু-দুটি যুক্ত ফ্রন্ট সরকার ও প্রথম বাম ফ্রন্ট সরকার কিছু করেন নি, কেবল জনগণের, খেটে-খাওয়া মানুষের সরকার আওয়াজ তুলে বিপ্লবী বুলি আওড়ে গেছেন। কেশববাবু নিজের মাইনে থেকে টাকা দিয়ে অনেকের ব্যাঙ্ক একাউন্ট খুলে দিয়েছেন, বিশেষত যাঁরা হত-দরিদ্র তাঁদের। সে কাজটাও সহজ ছিল না। প্রায় ৮০ জন অথর্ব, অথবা রোগজীর্ণ ছিলেন। নিয়ম অনুসারে এদের পি এল ( পার্মানেন্ট লায়াবিলিটি) ক্যাম্পে পাঠাতে হয়। কেশববাবু তাই সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু মন্ত্রী মশাই ক্ষেপে গেলেন, অনুমোদন করতে চাইলেন না, কারণটা কাপুরুষোচিত। পুনর্বাসনের পুরো টাকা দিত কেন্দ্রীয় সরকার, পি এল ক্যাম্পের খরচ/পরিব্যয় রাজ্য সরকারের। তিনি প্রথমে বললেন, অনুমোদন করবেন না। বিনম্র অথচ ঋজু ভাষায় কেশববাবু উত্তর দিয়েছিলেন, "তাহলে আমি বলতে বাধ্য হব, যে আপনি অনুমোদন করেন নি।" নাচার মন্ত্রী মশাইকে শেষে অনুমোদন দিতেই হ'ল।
আত্ম-প্রচার শুধু নয়, এই অভিজ্ঞতাগুলি (যাদবপুর-বিজয়গড় ও কলকাতা বা তার পরিপার্শ্বে উদ্বাস্তু কলোনীগুলির পাট্টার কাজ ও ওঁরই সুপরিকল্পনায় সুসম্পন্ন হয়েছিল) লেখার প্রস্তাব বারবার প্রত্যাখ্যান করেছেন। যে কথাগুলি লিখলাম, সেগুলিও বলতে চান নি। সখেদে বলেছিলেন, "জানেন, কুপার্স ক্যাম্প-এর মানুষেরা কমিউনিস্ট পার্টির ঘনিষ্ট সমর্থক ছিলেন। তাদের সমিতির সম্পাদক, সভাপতি মাখন সরকার সবাই।"
কেশববাবু অবিভক্ত বাংলার সিপি আই-এর সদস্য ছিলেন। তেভাগা আন্দোলনের সময় (১৯৪৫-৪৭) দিনাজপুর জেলার ছাত্র ফেডারেশনের সম্পাদক। তেভাগা আন্দোলন সবথেকে বিস্তৃত হয়েছিল ওই জেলায়। তাঁর ভগ্নীপতি (মেজদির স্বামী) ছিলেন সুশীল সেন। জেলা সিপি আই-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম সম্পাদক। কেশববাবুও জড়িয়ে পড়েছিলেন। বেশ কিছুদিন পূর্ব পাকিস্তানে কারারুদ্ধ ছিলেন। কথাচ্ছলে বলেছিলেন, "রায়গঞ্জ কলেজে বি-এ ক্লাসে ইংরিজী পড়াতেন সুনীতি কুমার ঘোষ, পরবর্তীকালে বিখ্যাত নকশাল নেতা ও তাত্বিক। সেই সময় তিনি ছিলেন ঘোর কংগ্রেসী এবং কমিউনিস্ট-বিরোধী। জেলা ছাত্র ফেডারেশনের দপ্তর উন্মোচন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ করলে বলেছিলেন, ওটা কমিউনিস্টদের ব্যাপার। তাই তিনি যাবেন না।"
কুপার্স ক্যাম্পের সুষ্ঠু পুনর্বাসনের পর মাখনবাবু ও খগেনবাবু কেশব সেনকে নির্বাচনে দাঁড়াতে বলেছিলেন। বিধায়ক আসনে দাঁড়ালে জিততেনই। তখন কেশব বাবু 'রাম গরুড়ের ছানা/ হাসতে তাদের মানা/হাসির কথা শুনলে বলে হাসব না না না না' গোছের আমলা নন, ততদিনে তিনি 'আমি তোমাদেরি লোক'।- Share this:
-
বিষয়নামা
-
বঙ্গালাপ
Movies X onBangla Font গৌতম চৌধুরী on পূর্ব-পাকিস্তান থেকে উদ্বাস্তু… গৌতম চৌধুরী on অসমিয়া ভাষা, সিলেটি উপভাষা এবং… Sandeep Sengupta on খলসেকোটার গল্প Sibananda Pal on যে ভাষার জন্যে এমন হন্যে, এমন … Dipanjan Majumdar on পূর্ব পাকিস্তানের উদ্বাস্তু … arunViolin on The Musical Legacy of Bra… Siddhartha Nath onপূর্ব পাকিস্তানের উদ্বাস্তু … Mukhtiar Singh Gill on Memories and Narratives: Intim… Suchandra Ghatak on Partition Experiences of the E… সায়ন on পূর্ব-পাকিস্তান থেকে উদ্বাস্তু… Somnath onখলসেকোটার গল্প সজল on নবগঙ্গা থেকে আদিগঙ্গা, ভুঁইফোঁ… Sandeep Sengupta on খলসেকোটার গল্প . on খলসেকোটার গল্প বঙ্গবন্ধু
লেখার স্বত্ব
© বাঙালনামা ও লেখকগণ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
© All rights reserved by Bangalnama and Authors.
যোগাযোগ
সাম্প্রতিক লেখা
- বাঙালনামা ঃ দ্বিতীয় বর্ষ, তৃতীয় সংখ্যা
- সম্পাদকীয় – দ্বিতীয় বর্ষ, তৃতীয় সংখ্যা
- পূর্ব পাকিস্তানের উদ্বাস্তু – সংস্কৃতির সংঘাত
- পূর্ব-পাকিস্তান থেকে উদ্বাস্তু হিসাবে এসে ভারতে পুনর্বাসনের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা
- নবগঙ্গা থেকে আদিগঙ্গা, ভুঁইফোঁড়দের সুলুক-সন্ধান ঃ পর্ব দুই
- বাঙালবৃত্তান্ত – পর্ব চার
- জীবনের ডায়েরির পাতা থেকে
- দেশভাগের সাম্প্রতিক ইতিহাস চর্চার আলোকে 'দ্যা মার্জিনাল মেন'
- Memories and Narratives: Intimate Glimpses of Partition of India
- রিফিউজির ফুটবল ঃ এও এক বাঙালনামা
- অন্নদাশঙ্করের ছড়া ঃ জব্দিবে কে শব্দীকে?
- পশ্চিমবঙ্গে অঞ্চলভিত্তিক জবরদখল (স্কোয়াটার্স) কলোনীর তালিকা
- কুপার্স ক্যাম্প – 'বাংলার চম্বল' থেকে শান্ত আবাস
- ইতিহাসে 'মরিচঝাঁপি মামলা ১৯৭৯'
- দন্ডকারণ্য, মরিচঝাঁপি ও আমার বিদ্যালয়
পুরনো লেখা
উঁকিঝুঁকি
- 60,998 hits
দন্ডকারণ্য, মরিচঝাঁপি ও আমার বিদ্যালয়
Posted by bangalnama on December 22, 2010
2 Votesদেশভাগের বেদনাদায়ক ইতিহাসের অন্যতম কলঙ্কময় অধ্যায় মরিচঝাঁপি। দীর্ঘকাল ধরে অন্যতম উপেক্ষিত পর্বও বটে। ১৯৭৮-৭৯ সালে সুন্দরবনের দুর্গম জনহীন দ্বীপ মরিচঝাঁপিতে দন্ডকারণ্য থেকে আসা উদ্বাস্তুদের বসতি গড়ার চেষ্টা এবং পূর্বপ্রতিশ্রুতি ভেঙে সরকারের তরফে বিরোধিতা ও উদ্বাস্তু-উৎখাতের ঘটনাকে ঘিরে মরিচঝাঁপির বৃত্তান্ত।
উদ্বাস্তু মানুষের লড়াইয়ের ইতিহাস ধরে রাখতে বাঙালনামা দায়বদ্ধ। ইতিপূর্বে (প্রথম বর্ষের প্রথম, দ্বিতীয় ও চতুর্থ সংখ্যায়) আমরা মরিচঝাঁপির বর্বরতার ইতিহাসে আলো ফেলে দেখেছি। বর্তমান সংখ্যায় তুষার ভট্টাচার্য সম্পাদিত সংকলনগ্রন্থ 'অপ্রকাশিত মরিচঝাঁপি' থেকে কয়েকটি ঐতিহাসিক দলিল ও প্রবন্ধ বাঙালনামায় প্রকাশ করা হল। পুনঃপ্রকাশের অনুমতি দেওয়ার জন্য আমরা তুষার ভট্টাচার্যের কাছে কৃতজ্ঞ।
বর্তমান প্রবন্ধে মরিচঝঁাপিতে উদ্বাস্তু মানুষদের শ্রম দিয়ে তৈরী স্কুলের প্রধান শিক্ষক নির্মলেন্দু ঢালি দন্ডকারণ্যের মানা ক্যাম্প থেকে মরিচঝাঁপিতে তাঁদের আসা ও বসতি নির্মাণ এবং তারপর সেখান থেকে সরকার কর্তৃক তাঁদের উৎখাতের প্রত্যক্ষ বিবরণ দিয়েছেন। সাক্ষাৎকারের আকারে লেখা এই প্রবন্ধটি বারবার উদ্বাস্তু হওয়া মরিচঝাঁপির শরণার্থীদের অভিজ্ঞতার পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনায় সমৃদ্ধ। – সম্পাদক, বাঙালনামা।
_________________________________________________________________This entry was posted on December 22, 2010 at 7:30 pm and is filed under উদ্বাস্তু ও জবরদখলকারী, ক্যাম্প,জাত, পরিযাণ, রাজনীতি, স্মৃতিচারণা. You can follow any responses to this entry through the RSS 2.0 feed. You can skip to the end and leave a response. Pinging is currently not allowed.
Be the first to like this post.Leave a Comment
No comments:
Post a Comment