শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে চলমান আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির ২শ' শিক্ষক।গণজাগরণ মঞ্চে চলমান আন্দোলনের ১৪তম দিনে সোমবার তারা সংহতি প্রকাশ করেন।
এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন বলেন, "আমরা রাজাকারদের ফাঁসি ছাড়া অন্য কিছু চাই না। আপনারা আমাদের যে পথ দেখিয়েছেন সে পথে আমরাও হাঁটব। যতদিন এ আন্দোলন চলবে ততদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আপনাদের সাথে থাকবে।"
এ সময় তিনি, প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে জামায়াতের সকল প্রতিষ্ঠান ও তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
এর আগে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে চলমান আন্দোলনে অংশ নিয়ে রাজীবসহ যে তিনজন শহীদ হয়েছেন তাদের ও মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গণজাগরণ চত্বরে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়।
সোমবার বেলা ১১টায় নির্ধারিত কর্মসূচি অনুসারে কালো পতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাচ ধারণ করা হয়। কালো পতাকা উত্তোলন শেষে আন্দোলনকারীরা দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।
...................
রাজধানী শাহবাগের স্বাধীনতা প্রজন্ম চত্বরের তরুণদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে উপমহাদেশের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী কবীর সুমন 'গণদাবি', 'শাহবাগে রাতভোর' ও 'তিন মিনিট' শিরোনামের গান লিখেছেন। তিনটি গানই শ্রোতামহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
শুক্রবার প্রজন্ম চত্বরের অন্যতম সৈনিক ব্লগার ও স্থপতি আহমেদ রাজীব হায়দার শোভনকে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করেন। এ ঘটনা শোনার পরপরই কবীর সুমন নিহত ব্লগার রাজীবকে নিয়ে 'শহীদ রাজীব' শিরোনামে আরেকটি গান তৈরি করেছেন।
রোববার সকালে গানটি তিনি তার ওয়েবসাইটে পোস্ট করেছেন। এ প্রসঙ্গে সুমন তার ওয়েবসাইটে লিখেছেন, 'বাংলাদেশের স্বাধীনতার শত্রুদের হাতে নিহত শহীদ রাজীব হায়দারের সাহসী কৃতকর্মের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্যই গানটি লিখেছি। রাজীব শাহবাগের গণ-আন্দোলনের অন্যতম সাহসী যোদ্ধা। আমি রাস্তায় পড়ে থাকা তার রক্তাক্ত নিথর মরদেহের ছবি দেখেছি। অত্যন্ত পৈশাচিকভাবে তাকে খুন করা হয়েছে।'
সুমন আরো লিখেছেন, 'এ গানের মধ্য দিয়ে আমার ভেতর জন্ম নেয়া প্রচণ্ড দুঃখ ও ক্ষোভ প্রকাশিত হয়েছে। আমি রাজীবের বাবার বয়সী। আমার সন্তানরা যে স্বপ্ন পূরণের জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দিচ্ছে, সেই স্বপ্নের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছি। সত্যিকারের ধর্মনিরপেক্ষ ও মুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন চিরদিন বেঁচে থাক। আরো বেঁচে থাক সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য তরুণ প্রজন্মের এ সংগ্রাম। জয় বাংলা।'
....................... দেশের বিশিষ্ট গণসঙ্গীতশিল্পী ফকির আলমগীর সর্বদা অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার রয়েছেন। '৭১ সালে মুক্তির গান কণ্ঠে ধারণ করে তিনি বাঙালিদের যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য উজ্জীবিত করেছেন। বাঙালিদের প্রতিটি জাগরণের আন্দোলনের সঙ্গে তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছেন। রাজধানীর শাহবাগের স্বাধীনতা প্রজন্ম চত্ত্বরে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে উদ্বেলিত তরুণদের আন্দোলনের সঙ্গেও তিনি সংহতি প্রকাশ করেছেন। এ আন্দোলনের শুরুর দিন থেকেই তিনি তারুণদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাদের আন্দোলনকে আরো বেগবান করতে নতুন নতুন গান পরিবেশন করে চলছেন। শুক্রবার শাহবাগের আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক ব্লগার ও স্থপতি আহমেদ রাজীব হায়দার শোভনকে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। তার প্রতিবাদ জানিয়ে ঘটনার পরদিনই ফকির আলমগীর নতুন একটি গান তৈরি করেছেন। 'আমরা তো ভুলি নাই রাজীব' শিরোনামের গানটির কথা-সুর করেছেন ফকির আলমগীর নিজেই। গানটি তিনি শনিবার বিকালে প্রজন্ম চত্ত্বরে গগণবিদারী কণ্ঠে পরিবেশন করেন। গানের কথা হচ্ছে- 'আমরা তো ভুলি নাই রাজীব, তোমারে ভুলব না/ তোমার রক্তের খুনে রাঙ্গাইলোকে, এই বাংলা/ তুমি ছিলা মুক্তিযোদ্ধার এই দেশের সন্তান/ হাতে নিলা তাই তোরে বন্ধু, বিজয়ের নিশান/ সেই নিশানের মান রাখিতে, দিলে সাধের জান।' এ প্রসঙ্গে ফকির আলমগীর বিবার্তাকে বলেন, 'রাজীব এ প্রজন্মের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। সে আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবি করে গেছে। তরুণরা এ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবে। আর আমরা তাদের পাশে থেকে প্রেরণা জুগিয়ে যাব।' এর আগে ফকির আলমগীর প্রজন্ম চত্ত্বর নিয়ে আরো দুটি গান গেয়েছেন। প্রথম গানটি লিখেছিলেন ড. তপন বাগচী। গানের কথা হচ্ছে- 'প্রজন্মের এই বন্ধুরা আজ, জেগে আছে আগে-ভাগে/ ভয় নেই কোনো সকলেই আছি, এক সাথে শাহবাগে।' দ্বিতীয় গানটি লিখেছেন ঋদ্ধ রহমান। গানের কথা হচ্ছে- 'লক্ষ প্রাণের জোয়ার এখন শাহবাগে/ রাজাকারের ফাঁসি চাই, এই দাবিটা সবার আগে/ শীতের শেষে আবার এলে লাল ফাগুন/ সবার বুকে জ্বলছে এখন ঘৃণার আগুন।'
জামাত-ই-ইসলামির ডাকা হরতালে হিংসার জেরে বাংলাদেশে সোমবার তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। হরতাল সমর্থকদের আক্রমণ থেকে বাদ যায়নি অ্যাম্বুলেন্সও। শাহবাগের সমাবেশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে আন্দোলনকারীদের সংখ্যা।
জামাত-এ-ইসলামির ডাকা হরতালের বিরুদ্ধে এভাবেই ক্রমশ তীব্রতর হচ্ছে প্রতিবাদের কণ্ঠ। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে এ ভাবেই ঢাকায় শাহবাগে চলছে লাগাতার ধরণা।
আর এই আন্দোলন এখন ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বাংলাদেশে। চুপ করে বসে নেই জাম-এ-ইসলামি সমর্থকরাও। হরতালের সমর্থনে পথে নেমেছে তারাও। আর তার জেরেই হচ্ছে সংঘর্ষ। বিভিন্ন জায়গায় জামাত সমর্থকদের হামলার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। রাস্তায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে যানবাহনে। কক্সবাজারে একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়ফ নামতে গিয়ে মৃত্যু হয় এক ব্যক্তির। হরতাল সমর্থনকারীদের রোষ থেকে বাদ যায়নি অ্যাম্বুলেন্সও। সংঘর্ষ রুখতে পথে নেমেছে পুলিস ও আরএবি লাঠিচার্জ ছাড়াও কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটাতে হয়েছে পুলিসকে।
বাংলাদেশের বিভিন্নপ্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে হিংসার আগুন। কিন্তু, এই হিংসা কোনওভাবেই দমাতে পারেনি আন্দোলনকারীদের। প্রতিনিয়ত বাড়ছে আন্দোলনকারীদের সংখ্যা। জামাতের ডাকা হরতালকে কার্যত তোয়াক্কা না করেই ঢাকা শহরে খোলা ছিল স্কুল, কলেজ এবং সরকারি দফতরগুলি। হরতালকে বানচাল করতে পথে নেমে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। ব্লগার রাজীব হায়দরের খুনের প্রতিবাদেও সরব হয়েছেন আন্দোলনকারীরা। একাত্তরের যুদ্ধপরাধী আজাদের মৃত্যুদণ্ড রদের দাবিতে লাগাতার হরতালের ডাক দিয়েছে জামাত-ই-ইসলামি। অপর অভিযুক্ত আবদুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজারও প্রতিবাদে সোচ্চার তাঁরা। এ নিয়ে তাঁরা পাশে পেয়েছে বিএনপি-কে। কিন্তু, সেই দাবিকে কার্যত উড়িয়ে দিয়ে শাহবাগের আন্দোলনকারাদের পাশে দাঁড়িয়েছে আওয়ামি লিগ।
আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন, 'ইনশাআল্লাহ, আমরা আশা করছি, আগামী সপ্তাহে কাদের মোল্লার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।'
জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আইন প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি এখন গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। আমি মনে করি, এটা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। যথাসময়ে যথাসিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।'
মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে জুডিশিয়াল সার্ভিসের সদস্যদের বেতনকাঠামো বৃদ্ধির বিষয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু প্রমুখ।
আইনমন্ত্রী বলেন, যেসব রাজনৈতিক দল জঙ্গিবাদ বা মানুষের জীবন হরণ বা জনজীবনে অসন্তোষ তৈরি করতে রাস্তায় বেরিয়ে আসছে, সেসব রাজনৈতিক দলের কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনীতি করার অধিকার নেই। এ ব্যাপারে যা করণীয়, তা করার চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনেরও দায়িত্ব রয়েছে।
শফিক আহমেদ আরও বলেন, 'সংবিধানের ৩৮ ধারা বিশ্লেষণ করে দেখলে এবং এর সঙ্গে আরপিও মিলিয়ে দেখলে আমার মনে হয়, এসব রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিলের যথেষ্ট উপাদান রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে ২০০৯ সালের একটি রিট আবেদন আছে। সেটা যদি শুনানিতে আসে, তাহলে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের মাধ্যমেও এসব রাজনৈতিক দলের রাজনীতি করার অধিকার আছে কি না, তা দেখা যাবে।'
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, কোনো দলকে তো আর জরিমানা দেওয়া যায় না। তবে তখন জামায়াতের সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন, তাদের সাজা দেওয়া যায় এবং দলকে নিষিদ্ধ করা যেতে পারে।
ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, 'তবে জামায়াতের মতো যারা উগ্র দল, তাদের নিষিদ্ধ করার বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।'
২১শে ফেব্রুয়ারি মহাসমাবেশের ডাক তরুণদের যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে চলমান আন্দোলনে এ পর্যন্ত যারা শহীদ হয়েছেন তাদের স্মরণে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে 'প্রজন্ম স্তম্ভ' স্থাপন করা হয়েছে। প্রজন্ম চত্বরে ফোয়ারার পাশে এ স্তম্ভটি স্থাপন করা হয়। গতকাল সন্ধ্যায় এ স্তম্ভ উদ্বোধন করেন গণজাগরণ মঞ্চের আহ্বায়ক ডা. ইমরান এইচ সরকার। স্তম্ভটির ভাস্কর মুন্সী নজরুল ইসলাম সুজন বলেন, শহীদ রাজীব আমাদের সহযোদ্ধা ছিলেন। তিনি এখন আর নেই। তার স্মৃতিকে ধরে রাখতে এ স্তম্ভ নির্মাণ করেছি। এতে লাল-সবুজ রঙকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে সাদা-কালোও। সাময়িকভাবে কাঠের তৈরি এ ভাস্কর্য তৈরিতে একদিন সময় লাগে। এ সময় ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার শোভনকে স্মরণ করা হয়। অন্যদিকে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে স্লোগান দিতে-দিতে হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ব্লগার, কার্টুনিস্ট, নাট্যকার ও পরিচালক তারিকুল ইসলাম শান্ত (৩৯)। গতকাল বিকালে সংস্কৃতিকর্মীদের সঙ্গে মিছিল নিয়ে শাহবাগে যান শান্ত। বিকাল ৪টায় স্লোগান দিতে-দিতে একপর্যায়ে হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে সেখানেই ঢলে পড়েন। পরে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নেওয়া হলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। ব্লগার ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেন, আন্দোলনের শুরু থেকে এ পর্যন্ত আমরা ৩ সহকর্মীকে হারিয়েছি। আমরা তাদের ত্যাগ কখনও ভুলব না। এই শোককে শক্তিতে পরিণত করে আমরা আন্দোলনে কাজে লাগাব। শান্তর মৃত্যুর ঘটনায় বিকাল ৫টা ৫৯ মিনিট থেকে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। তারিকুল ইসলাম শান্তর বাড়ি টাঙ্গাইলের বাসাইলে। কার্টুনিস্ট হিসেবে দৈনিক ভোরের কাগজে কর্মজীবন শুরু করেন। পাশাপাশি উন্মাদ পত্রিকার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি। 'কল্পদূত কমিকস' ছিল তার নিজস্ব উদ্যোগ। প্রথম আলোর সিনিয়র সাব-এডিটর শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়ার ছোট ভাই তিনি। শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, সন্ধ্যায় পশ্চিম নাখালপাড়ার বাসায় তার মরদেহ নেওয়া হয়। সেখানে জানাজা শেষে রাতে তার মরদেহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের হিমঘরে রাখার কথা। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার জানাজা হবে। পরে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে। এদিকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে গত রোববার রাতজাগা অনেক আন্দোলনকারী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানা গেছে। এদিকে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে ২১ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৩টায় মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল রাতে প্রজন্ম চত্বর থেকে ওই মহাসমাবেশের ডাক দেওয়া হয়। ব্লগারস অ্যান্ড অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি মহাসমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে আরও কিছু কর্মসূচির সিদ্ধান্ত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে আছে— আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে ব্লগার ও কার্টুনিস্ট তারিকুল ইসলাম শান্তর জানাজা, ২০ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪টা ১৩ মিনিটে একাত্তরের শহীদদের উদ্দেশে চিঠি লিখে বেলুনে ওড়ানো ও একুশের প্রথম প্রহরে গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ। এছাড়া দেশের যেসব স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শাহীদ মিনার নেই একুশে ফেব্রুয়ারির আগেই শহীদ মিনার স্থাপনের আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া গণজাগরণ মঞ্চের নামে কোথাও অর্থ সংগ্রহ না করার আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে বিভিন্ন টেলিভিশনের টক শোতে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী হিসেবে কাউকে নিতে হলে গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। কেননা এমন অনেককে টক শোতে নিয়ে যাওয়া হয় যারা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত নন। প্রজন্ম চত্বরে চলমান আন্দোলনের চতুর্দশ দিনেও ক্লান্তি আর ভয়হীন তরুণরা। গতকাল সকাল ৬টায় জাতীয় সংগীত ও হরতাল প্রতিরোধের শপথের মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। সকাল ১১টায় ব্লগার রাজীবহত্যার প্রতিবাদে কালোব্যাজ ধারণ করেন আন্দোলনকারীরা। এছাড়া রাজীবসহ এ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত নিহতদের স্মরণে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পালন করা হয় নীরবতা। সকাল থেকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে আন্দোলনকারীর সংখ্যা কিছুটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে লোকসমাগমও বাড়তে থাকে। দুপুরের দিকে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা আসতে শুরু করে। একই সময় প্রতিবাদী মানুষ জামায়াতের হরতাল প্রত্যাখ্যান করে প্রজন্ম চত্বরে সমবেত হন। গতকাল শাহবাগে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংহতি জানাতে যান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, দেশে রাজাকার, আলবদরদের কোনও ঠাঁই নেই। আগে তরুণ প্রজন্ম বিকৃত ইতিহাস জেনেছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এতই শক্তিশালী যে, তরুণ প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস আবার ফিরিয়ে এনেছে। তিনি আরও বলেন, তরুণরা জেগেছে। তাদের থামিয়ে রাখা যাবে না। তারা এগিয়ে যাবে। এ জাগরণের মাধ্যমে আমরা আমাদের সামাজিক-অর্থনৈতিক মুক্তি অবশ্যই অর্জন করব। এছাড়া চলমান গণজাগরণের সঙ্গে যোবেদা খাতুনের নেতৃত্বে ১৭ সংসদ সদস্য সংহতি জানান। শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে গতকাল আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির ২০০ শিক্ষক। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন বলেন, আমরা রাজাকারদের ফাঁসি ছাড়া অন্য কিছু চাই না। আরও সংহতি জানান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. প্রাণগোপাল দত্ত, অভিনেতা তারিক আনাম খান রাইসুল ইসলাম আসাদ, নিপুণ ও নীরব এবং ব্যান্ডশিল্পী মাকসুদ। জামায়াতের হরতাল প্রত্যাখ্যান করায় সারা দেশের মানুষকে অভিনন্দন জানান প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলনকারীরা। এছাড়া শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী বিলে অনুমোদন দেওয়ায় অভিনন্দন জানানো হয়। গতকাল বিকালে ট্রাইব্যুনালস বিলে রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করেন। এ খবর শোনার পর আন্দোলনকারীরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। জাতীয় পতাকা, ফুলের তোড়া উঁচিয়ে স্লোগান দেন— 'অভিবাদন অভিবাদন, জয় আমাদের সুনিশ্চিত'। শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছেন টেলিভিশন নাটকের শতাধিক শিল্পী ও কলাকুশলী। সোমবার বিকালে প্রোডিউসার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, ডিরেক্টরস গিল্ড ও অভিনয়শিল্পী সংঘের শতাধিক সদস্যের একটি দল প্রজন্ম চত্বরে গিয়ে সংহতি জানান। শিল্পীরা এ সময় জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক হিসেবে পরিচিত গণমাধ্যম দিগন্ত টেলিভিশন, 'নয়া দিগন্ত' ও 'সংগ্রাম' পত্রিকা বর্জনের ঘোষণা দেন। প্রজন্ম চত্বরে যাওয়ার আগে নির্মাতা অরণ্য আনোয়ারের উদ্যোগে অভিনয়শিল্পী, পরিচালক, প্রযোজক ও কলাকুশলী তথা মিডিয়াকর্মীরা বিকাল ৩টায় শহীদ মিনারে জমায়েত হন। সেখান থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে স্লোগান দিতে-দিতে প্রজন্ম চত্বরে যান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ টেলিভিশন অ্যান্ড ফিল্ম অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুবর্ণা মুস্তাফা, মিতা চৌধুরী, ঝুনা চৌধুরী, আজিজুল হাকিম, ওয়াহিদা মল্লিক জলি, গাজী রাকায়েত, জয়া আহসান, চঞ্চল চৌধুরী, শাহনাজ খুশি, সুমনা সোমা, কুসুম সিকদার, শম্পা রেজা, মোহন খান, শান্তা ইসলাম, রোকেয়া প্রাচী প্রমুখ। অ্যনদিকে জামায়াতের হরতাল থাকায় গতকাল প্রজন্ম চত্বরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। সকালে শাহবাগের গণজাগরণ চত্বর পরিদর্শনকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ বলেন, হরতালে জামায়াত-শিবির যাতে কোনও ধরনের নাশকতা চালাতে না পারে এজন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া গণজাগরণ মঞ্চের প্রবেশপথগুলোতে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আন্দোলনস্থল দিয়ে যাতায়াতকারীদের ব্যাগ তল্লাশি করা হয়।
বরিশাল অফিস জানায়, মানবতা বিরোধী অপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে রাজধানীর শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের ডাকে সাড়া দিয়েছে বরিশালের মানুষ। গতকাল সকাল ১০টা বাজার সাথে সাথেই এখানকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে উত্তোলন করা হয় জাতীয় পতাকা। শিক্ষার্থীরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করে। একাত্মতা প্রকাশ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি ও জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার চলমান আন্দোলনের সাথে।
বাকৃবি সংবাদদাতা জানান, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগ চত্বরের ঘোষণা অনুযায়ী বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল রবিবার সকাল ১০টায় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এতে বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল হক, ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক. ড. সুলতান উদ্দিন ভূঞা, প্রক্টর অধ্যাপক ড. শহীদুর রহমান খানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, রবিবার সকাল দশটায় জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে। উত্তোলন করা হয় জাতীয় পতাকা। তারা কাদের মোল্লাসহ সকল যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দাবি ছাড়াও ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারের হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানায়।
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, রবিবার সকাল ১০টায় চুয়াডাঙ্গা জেলায় জাতীয় সঙ্গীতের তালে তালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন কর্মসূচি পালিত হয়। চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ, চুয়াডাঙ্গা পৌর ডিগ্রি কলেজ, চুয়াডাঙ্গা সরকারি গার্লস কলেজ ও আলমডাঙ্গা উপজেলার আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজসহ জেলার সকল কলেজে উল্লেখিত কর্মসূচি পালিত হয়।
নড়াইল প্রতিনিধি জানান, গতকাল সকাল ১০টায় নড়াইলের সরকারি-বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একযোগে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সাথে সাথে জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হয়। পরে ছাত্র-শিক্ষক সকলে মিলে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতা বিরোধীদের ফাঁসির দাবিতে শপথ গ্রহণ করে।
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানান, শাহবাগের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে মৌলভীবাজারের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।
নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের কর্মসূচির সঙ্গে এতাত্মতা প্রকাশ করে গতকাল রবিবার নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং নোয়াখালী সরকারি কলেজসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। বিকালে নোয়াখালী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে নিহত রাজীবের স্মরণে কালো পতাকা উত্তোলন করেন স্থানীয় এমপি একরামুল করিম চৌধুরী।
শেরপুর প্রতিনিধি জানান, রবিবার শেরপুরের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সকাল ১০টায় জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার মধ্য দিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। শেরপুর সরকারি কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি ভিক্টোরিয়া একাডেমী, জি.কে. পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, দিশা প্রিপারেটরী এন্ড হাই স্কুলসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একযোগে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, প্রজন্ম চত্বরের সাথে সংহতি প্রকাশ করে গতকাল রবিবার সকাল ১০টায় জেলার সকল স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একযোগে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার জন্য শপথ বাক্য পাঠ করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন কর্মসূচি পালন করা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলনরতদের সাথে একত্মতা প্রকাশ করে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ প্রফুল্ল চন্দ্র দেবনাথ। এ সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রজন্ম চত্বরে আন্দোলনরত ব্লগার এবং নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। আন্দোলনরত নতুন মুক্তিযোদ্ধারা স্লোগান দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবির পাশাপাশি আগামীকাল জামায়াত-শিবিরের ডাকা হরতার প্রতিহতের আহবান জানান।
স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর জানান, গতকাল সকাল ১০টায় দিনাজপুরের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। দিনাজপুর জেলা স্কুল, দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সারদেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, দিনাজপুর উচ্চ বিদ্যালয়, দিনাজপুর একাডেমি হাইস্কুল, বাংলা স্কুল, ইকবাল স্কুল, সেন্টফিলিপস স্কুল এন্ড কলেজ, সেন্ট যোসেফ স্কুল, পুলিশ লাইন্স হাইস্কুল, আদর্শ কলেজ, দিনাজপুর সরকারি কলেজ, দিনাজপুর সরকারি মহিলা কলেজ, কেবিএম কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই কর্মসূচি পালিত হয়। জেলার ১৩টি উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও উক্ত কর্মসূচি পালিত হয়।
রংপুর প্রতিনিধি জানান, রবিবার রংপুরের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একযোগে জাতীয় পতাকা উত্তোলনসহ গাওয়া হয় জাতীয় সঙ্গীত। রংপুর জেলার ৮ উপজেলার স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাগুলোতে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি জানান, ময়মনসিংহ জেলায় গতকাল সকাল ১০টায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাবার শপথগ্রহণ করে।
নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, ঢাকার প্রজন্ম চত্বরের সাথে একাত্মতা ঘোষণা প্রকাশ করে গতকাল রবিবার নেত্রকোনার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সকাল ১০টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের সময় পথচারীরাও শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন। এ সময় কোন যানবাহনও চলেনি।
পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, গতকাল রবিবার পটুয়াখালী জেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একযোগে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। সকাল ১০টায় পটুয়াখালী সরকারি কলেজসহ জেলার ১ হাজার ৭৩৭টি স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পালিত হয় এই কর্মসূচি।
জয়পুরহাট প্রতিনিধি জানান, জয়পুরহাটে টিপটিপ বৃষ্টির মধ্যে পতাকা উত্তোলনের সাথে সাথে গেয়ে উঠলো সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জাতীয় সঙ্গীত। সকাল ১০টায় জেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একযোগে উড়ানো হয় জাতীয় পতাকা। সেই সাথে জানানো হলো রাজাকারদের ফাঁসির দাবি।
পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানান, গতকাল সকাল ১০টায় পঞ্চগড়ের সরকারি মহিলা কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন কর্মসূচি পালিত হয়।
রানীশংকৈল সংবাদদাতা জানান, ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে গতকাল সকাল ১০টায় একযোগে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। পৌর শহরের ডিগ্রি কলেজ, মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নেকমরদ বঙ্গবন্ধু কলেজ, কাতিহার উচ্চ বিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একযোগে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
আগৈলঝাড়া (বরিশাল) সংবাদদাতা জানান, গতকাল সকাল ১০টায় উপজেলার সকল বিদ্যালয়ে একযোগে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
দেবীদ্বার (কুমিল্লা) সংবাদদাতা জানান, ব্লগার প্রকৌশলী আহমেদ রাজীব হায়দার শোভনকে হত্যাকারী ও মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি এবং জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিতে রবিবার সকাল ১০টায় দেবীদ্বার উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) সংবাদদাতা জানান, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি ও ব্লগার রাজীব হায়দারের খুনিদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে গতকাল রবিবার রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন কর্মসূচি পালিত হয়।
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, ব্লগার প্রকৌশলী রাজীব হায়দার হত্যার প্রতিবাদে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরের কর্মসূচির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়।
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, গতকাল রবিবার খাগড়াছড়ির সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একযোগে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সকল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ করা হয়।
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সকাল ১০টায় জেলা সদরের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। জেলার সকল উপজেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই অনুরূপ কর্মসূচি পালিত হয়
একুশে ফেব্রুয়ারি মহাসমাবেশ : কান্তিহীন তারুণ্য
একুশে ফেব্রুয়ারি মহাসমাবেশ : প্রজন্ম চত্বরে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি বিকাল ৩টায় মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল সোমবার রাত ৯টায় প্রজন্ম চত্বরের গণজাগরণ মঞ্চে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক ইমরান এইচ সরকার। এর আগে আন্দোলনকারীদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে ওই মহাসমাবেশের ডাক দেয়া হয়েছে। ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেন, আজ (সোমবার) সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টারও বেশি সময় পর্যন্ত চলা বৈঠকে আগামী একুশে ফেব্রুয়ারি মহাসমাবেশের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বৈঠকে আরো কিছু কর্মসূচির সিদ্ধান্ত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে ব্লগার ও কার্টুনিস্ট তারিকুল ইসলাম শান্তর জানাজা, ২০ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪টা ১৩ মিনিটে একাত্তরের শহীদদের উদ্দেশে চিঠি লিখে বেলুনে উড়ানো, ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর ৪টা ১৩ মিনিটে পাকবাহিনী ঠিক একই সময়ে মাথা নুইয়ে আত্মসমর্পণ করেছিল। তার সঙ্গে মিল রেখে এ কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে গণজাগরণ মঞ্চের প থেকে জাতীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ। এছাড়া দেশের যেসব স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই একুশে ফেব্রুয়ারির আগেই শহীদ মিনার নির্মাণ করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। গণজাগরণ মঞ্চের প থেকে আরো দুটি আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রথমত, গণজাগরণ মঞ্চের নামে কেউ যেন কোথাও অর্থ সংগ্রহ না করে, দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন টেলিভিশনের টকশোতে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী হিসেবে এমন অনেককে নিয়ে যাওয়া হয় যারা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত নন। কাউকে টকশোতে নিতে হলে গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
কালো পতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাজ ধারণ : আহমেদ রাজীব হায়দারের মৃত্যুতে প্রকৃতিও যেন শোকাহত। তার মৃত্যুর পরদিন থেকে অধিকাংশ সময় আকাশ ছিল মেঘলা। এক পর্যায়ে গত রোববার বৃষ্টি ঝরেছে। এরপর গতকাল সোমবার সকাল থেকেই বইছিল ঠা-া হাওয়া। এমন আবহাওয়ার মধ্যেই যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে চলমান আন্দোলনে অংশ নিয়ে রাজীবসহ যে তিনজন শহীদ হয়েছেন তাদের ও মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গণজাগরণ চত্বরে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। গতকাল বেলা ১১টায় পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুসারে কালো পতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাজ ধারণ করা হয়। কালো পতাকা উত্তোলন শেষে আন্দোলনকারীরা দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। অন্যান্য দিনের মতো সকাল থেকেই বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিার্থীরা দলে দলে শাহবাগে আসেন। শহীদ রাজীব স্মরণে তাদের অনেকেরই হাতে দেখা যায় কালো কাপড়ের ব্যান্ড, বুকে কালো ব্যাজ।
হরতালবিরোধী মিছিল : জামায়াত-শিবিরের ডাকা হরতাল প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়ে বিােভ মিছিল করেছেন গণজাগরণ মঞ্চের নেতাকর্মীরা। মিছিলের এক পর্যায়ে তারা রাজধানীর পান্থপথ এলাকায় অবস্থিত ইসলামী ব্যাংকের একটি বুথ ভাঙচুর করে। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হরতালবিরোধী এ মিছিলটি শাহবাগ থেকে সায়েন্স ল্যাবরেটরি হয়ে কলাবাগান পেরিয়ে কারওয়ান বাজার হয়ে গণজাগরণ চত্বরের দিকে ফিরে আসে। ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন বাম ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। ছাত্রলীগের সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ, জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি হুসাইন আহমদ তাফসির, ছাত্রমৈত্রী সভাপতি বাপ্পাদিত্য বসু প্রমুখ মিছিলে নেতৃত্ব দেন। এ সময় হরতাল প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়ে মিছিল থেকে জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেয়া হয়।
রাষ্ট্রপতিকে আন্দোলনকারীদের অভিনন্দন : আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী বিলে অনুমোদন দেয়ায় রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলনকারীরা। গতকাল বিকালে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীন ইউসুফ মঞ্চ থেকে এ তথ্য জানান। এ সময় তিনি আন্দোলনকারীদের পে রাষ্ট্রপতিকে অভিনন্দন জানান। প্রজন্ম চত্বরে উপস্থিত জনতাও করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানান রাষ্ট্রপতিকে।
সংহতি জানালেন দুই মন্ত্রী : যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে চলমান আন্দোলনের সঙ্গে গতাকাল অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সংহতি প্রকাশ করেছেন। গতকাল বিকালে গণজাগরণ চত্বরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংহতি জানাতে এসে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, আগে তরুণ প্রজন্ম বিকৃত ইতিহাস জেনেছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এতোই শক্তিশালী যে, তরুণ প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস আবার ফিরিয়ে এনেছে। তরুণদের প্রশংসা করে অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, তরুণরা জেগেছেন। তাদের থামিয়ে রাখা যাবে না। তারা এগিয়ে যাবেন। এ জাগরণের মাধ্যমে আমরা আমাদের সামাজিক অর্থনৈতিক মুক্তি অবশ্যই অর্জন করবো। এদেশে রাজাকার-আলবদরের জায়গা হবে না। শাহবাগের আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে পেরে আনন্দ প্রকাশ করে মুহিত বলেন, আমি এখানে অংশ নিয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছি। আর এ প্রজন্মের প্রতিনিধি লাকি। আমি গত ৭ ফেব্রুয়ারি একাত্মতা ঘোষণা করেছিলাম। কিন্তু সশরীরে উপস্থিত থাকতে পারিনি। আমি বিদেশে ছিলাম। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ইতালিতে থেকে গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছিলাম। আজ সশরীরে উপস্থিত হয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি।
সন্ধ্যায় তরুণদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে আসেন শিামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এ সময় তিনি জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তরুণদের উদ্দেশে বলেন, এখনো সময় আছে, তোমরা এই তরুণদের (শাহবাগের তরুণ) কাছে মা চেয়ে আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করো। তা না হলে এই বাংলার মাটিতে তোমাদের জায়গা হবে না। আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আজ আপনারা আবার যে '৭১-এর চেতনায় জেগে উঠেছেন তা বাংলাদেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে। আমিও এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। স্বাধীনতাযুদ্ধ দেখেছি। কিন্তু ৪০ বছর ধরে স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে পারিনি। রাজাকারদের বিচারের দাবিতে তরুণ প্রজন্ম আজ যেভাবে জেগেছে, তাতে তারা বিজয়ী হবেই। গত রোববার সংসদে যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক আইন সংশোধনের ফলে তরুণদের বিজয় হয়েছে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, গণজাগরণ চত্বরের তরুণদের আজকের দাবি একাত্তরের চেতনার প্রতিধ্বনি। আমরা সবাই যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, তিন দশক ধরে আমাদের দেশে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভুলভাবে শেখানো হয়েছে। আমরা তা পরিবর্তন করে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। এখানে উপস্থিত হয়ে মনে হচ্ছে, একাত্তরের গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে দেশে। যারা মুক্তিযুদ্ধে লুট, হত্যা, ধর্ষণ করেছে, তাদের ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়েই ছাড়বো আমরা। এই আন্দোলনের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ নিশ্চিত হোক।
সংহতি প্রকাশ : প্রজন্ম চত্বরে টানা আন্দোলনের ১৪তম দিনে গতকাল সোমবার বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি সভাপতি শহিদুল ইসলাম খোকন, মহাসচিব মুশফিকুর রহমান, অভিনেত্রী রাশেদা চৌধুরীসহ সংগঠনের নেতারা গণজাগরণ চত্বরে এসে সংহতি জানান।
গতকাল নাট্যব্যক্তিত্ব রাইসুল ইসলাম আসাদ, অভিনেতা আজিজুল হাকিম, হাসান মাসুদ, নাদের চৌধুরী, অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী, জয়া হাসান, কুসুম শিকদারসহ বেশ কয়েকজন অভিনয়শিল্পী সংহতি প্রকাশ করেন। 'গেরিলা' ছবির নায়িকা জয়া হাসান বলেন, আমি আপনাদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করছি। আমরা অভিনয়শিল্পীরা রাজাকারদের ফাঁসির দাবিতে এই প্রজন্ম চত্বরে এসেছি। এ সময় তারা 'জয় বাংলা', 'ওই রাজাকার, তুই রাজাকার' স্লোগান দেন। এদিকে বিকাল ৪টায় কাদের মোল্লার মামলার দ্বিতীয় সাী শহিদুল হক পান্না সংহতি প্রকাশ করেন। এছাড়াও নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন।
ছাত্র সংগঠনগুলোর সংহতি : যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে প্রজন্ম চত্বরের গণজাগরণ মঞ্চে সংহতি জানিয়েছেন মতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, জাসদ ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়নসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সক্রিয় ছাত্র সংগঠনগুলো। গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে হরতালবিরোধী মিছিল নিয়ে সাইন্সল্যাব, পান্থপথ ঘুরে সংগঠনগুলো দুপুর ১২টার দিকে শাহবাগে সংহতি জানায়। সংহতি মঞ্চে ছাত্রনেতারা বলেন, সারাদেশের মানুষ জামায়াত-শিবিরের হরতালকে প্রত্যাখ্যান করেছে। গাড়ির চাকা ঘুরেছে, দোকান-কলকারখানা, অফিস-আদালত খুলেছে। তারা জনগণকে হরতাল প্রত্যাখ্যান করায় ধন্যবাদ জানিয়ে আরো বলেন, শুধু হরতাল প্রত্যাখ্যান করলে চলবে না। রাজপথে থেকে আগামীতে জামায়াতকে নিষিদ্ধের দাবিতে চলমান সংগ্রামকে সফল করতে হবে। সংহতি মঞ্চে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম, জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি হোসাইন তাফসীর, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি এস এম শুভ, ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি বাপ্পাদিত্য বসু, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি সাইফুজ্জামান সাকনসহ বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী, ছাত্র সমিতি ও ছাত্র ফেডারেশনের নেতারা।
নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা প্রজন্ম চত্বর : জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাসহ সব যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দাবিতে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে চলমান আন্দোলনের ১৪ দিনে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। মোতায়েন করা হয় বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ)। গতকাল সোমবার জামায়াত-শিবিরের হরতাল ও নাশকতার আশঙ্কা থাকায় এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয় বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বেনজির আহমেদ। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে প্রজন্ম চত্বর পরিদর্শনকালে তিনি এ কথা জানান।
বেনজির আহমেদ বলেন, আজকের (সোমবার) হরতালে জামায়াত-শিবির যাতে কোনো ধরনের নাশকতা চালাতে না পারে এ জন্য সারা ঢাকায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। এরপর তিনি প্রজন্ম চত্বরে নির্মিত অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। এ ছাড়া গতকাল জামায়াত-শিবিরের হরতালের কারণে গণজাগরণ মঞ্চের প্রবেশপথগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। আন্দোলনস্থল দিয়ে যাতায়াতকারীদের ব্যাগ এমনকি অনেকের দেহ পর্যন্ত তল্লাশি করে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আজিজ সুপার মার্কেট, রূপসী বাংলা মোড় ও মৎস্য ভবন সড়কে বিপুলসংখ্যক পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সদস্যদের দেখা গেছে।
আপনার আমার ইচ্ছাই শাহবাগ আন্দোলনের গন্তব্য
ক্যাটেগরি:
- রাজনীতি
- সমসাময়িক
- চিন্তাভাবনা
- আওয়ামী লীগ
- জামাত-শিবির
- তরুণ প্রজন্ম
- তৃতীয় শক্তি
- বিএনপি
- শাহবাগ আন্দোলন
- সাধারণ মানুষ
- সববয়সী
গত কদিনে বেশ কয়েকজনকে শাহবাগের আন্দোলন নিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করতে দেখলাম।এদের অনেকেই প্রথম থেকে এই আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে আসছিলেন। এখন তারা প্রশ্ন তুলছেন আন্দোলনের লাগাম কার হাতে এবং আন্দোলনে লাভটা হচ্ছে কী, এর গন্তব্য কোথায়?
গুটিকয়েক তরুণের স্লোগানের মাধ্যমে এই আন্দোলন যখন শুরু হয় তখনও অনেকে এই আন্দোলনকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেছিলেন। তারুণ্যের শক্তিকে তারা বিশ্বাস করতে পারেন নি। কিন্তু দিন যতই গেছে তরুনেরা ততোই মানুষকে অবাক করেছে। সবার ভুল ভেঙ্গে এই আন্দোলন রূপ নিয়েছে গণ আন্দোলনে। সুর্নির্দিষ্ট কোন নেতা নেই বলে এই আন্দোলন দুই দিনও টিকবে না বলে যারা রায় দিয়েছিলেন তাদের চোখের সামনেই গত ১৪ দিন ধরে হাজার হাজার মানুষ রোদ বৃষ্টি ঝড় উপেক্ষা করে শাহবাগে আছেতো আছেই।
এইস অভূতপূর্ব ঘটনা কাকে না অবাক করেনি? যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষের দল জামায়াত ইসলাম যারা কোটি কোটি টাকা খরচ করে তাদের নেতাদের রক্ষার ব্লু প্রিন্ট তৈরি করেছে তারা পর্যন্ত স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে যে এমন ঘটনা ঘটতে পারে তা আদৌ তাদের হিসাবের ভেতর ছিল না। তৃতীয় শক্তি যারা রষ্ট্র ক্ষমতা হাতানোর নীল নকশায় ব্যস্ত ছিল এই আন্দোলনে তাদের পাশার দানও উল্টে গেছে। এই আন্দোলন প্রধান বিরোধী দলকে কতোটা বিমূঢ় করে দিয়েছে তা দলটির নেতাদের স্ববিরোধী কথাবার্তা শুনলেই বোঝা যায়। আর ক্ষমতাসীন দলকে এই আন্দোলন বিশাল একে চাপের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।একটু উনিশ বিশ হলেই এই আন্দোলন যে সরকারকে একে ধাক্কা মেরে ফেলে দেবে তা তারা ভালোমতোই জানে।
শাহবাগ আন্দোলনকে যারা ক্ষমতাসীন দলের বানানো নাটক বলতে চান তারাও বোঝেন যে নাটক বানানো খুবই সহজ কিন্তু ভাড়া করে দিনের পর দিন নাটকের দর্শক জমানো যায় না। এ কারণে পর্দার আড়ালে নানা উপায়ে এই আন্দোলনকে ঘায়েল করার কারসাজি শুরু হয়ে গেছে। আন্দোলনকারীদের বন্ধু সেজে তাদের পিঠে ছুরি মারার চেষ্টা করার লোকজন তো আগে থেকেই আছে। এখন তাদেরর সাথে যোগ দিয়েছে এতোদিন চুপ মেরে দূর থেকে বাতাসের দিক চেনার চেষ্টা করা সুবিধাবাদীরা। দলে দলে তারা আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করছে।আন্দোলন থেকে যতটুকু ফায়দা লোটা যায় সেটাই তাদের লাভ। ।ক্ষমতাসীনেরা আছে কীভাবে আন্দোলনকে বাগে রাখা যায় সেই চেষ্টায় আর আন্দোলন বিরোধীরা ধর্মকে হাতিয়ার বানিয়ে নিত্য নতুন কূট কৌশলে আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইছে।
এতসব বাধা ডিঙ্গিয়ে আন্দোলন কি স্বমহিমায় টিকে থাকতে পারবে? যারা এই প্রশ্নটি করেন তাদের কাছে এই আন্দোলনের বয়স মাত্র ১৪ দিন। কিন্তু যারা এই আন্দোলনের সৃষ্টিকর্তা সেই সব তরুণেরা জাননে এই আন্দোলন এক দিনে শুরু হয় নি। বছরের পর বছর ধরে এই আন্দোলনের বীজ বোনার কাজ চলে আসছে। যারা এই বীজ বুনেছেন সেইসব তরুণেরা কেউ আওয়ামী লীগ, বিএনপি থেকে আসেন নি; কেউই তাদেরকে যুদ্ধাপরাধীদের বিপক্ষে, জামাত-শিবিরের মতো ভয়ঙ্কর প্রতিক্রিয়াশীল দলের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য ডেকে আনেনি- তারা স্বেচ্ছায় নিজের বিবেকের তাড়নায় এই পথে এসেছেন।গত ৪২ বছর ধরে প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেটি করার সাহস করেনি এই তরুণেরা সেই কাজটি করার জন্যই স্বেচ্ছায় মাঠে নেমে এসেছেন।মূলত এদের চাপেই আওয়ামী লীগ তাদরে নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে বাধ্য হয়, এদের চাপে পড়েই জামাতের পিঠ এখন দেয়ালে ঠেকে গেছে, এদের কাছেই মাথা নত করে বিএনপি বলতে বাধ্য হচ্ছে ক্ষমতায় গেলে তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে আগ্রহী।
এই সব দুর্বার তরুণের কাছে শাহবাগ আন্দোলন নিছক কোন আন্দোলন নয় এটি একটা যুদ্ধের শেষ প্রান্ত। এখান থেকে পেছনে হটার কোন উপায় নেই।এবং এই ধারনাটি তারা ক্রমশ জনমানুষের ভেতরে ঢুকিয়ে দিতে সমর্থ হয়েছে। দুদিন বাদেই তারুণ্যের এই ইমোশন কমে যাবে এমন ধরনা করে যারা বসে আছেন তাদের অজান্তেই এই আন্দোলন তরুণদের একার যুদ্ধ থেকে পরিণত হয়েছে আপামর জনসাধারণের চেতনার প্লাটফর্মে। একে দমিয়ে রাখার চিন্তা পুরো মাত্রায় অবাস্তব। এ কারণেই এই কদিন আগেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের দাবীতে ডাকা হরতালে কুঁকড়ে থাকা মানুষগুলোকে আজ দেখুন, তারা কেমন দৃঢ়তার সাথে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। হুট করে একটা বিদ্যুত তরঙ্গ যেন শাহবাগ থেকে আমাদের ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিক্ষুক তার সারাবেলার উপার্জন দিয়ে খাবার কিনে আন্দোলনকারীদের খওয়াচ্ছে, স্কুলের বাচ্চা টিফিন নিয়ে এসে শাহবাগে বিলিয়ে দিচ্ছে, রিক্সায়ালারা বিনা ভাড়ায় লোকজনকে শাহবাগে পৌঁছে দিচ্ছে,শাহবাগের এক ডাকে পুরো দেশ স্থবির দাঁড়িয়ে পড়ছে-- অপরাজনীতির মারপ্যাচে চিড়েচ্যাপ্টা হওয়া হতাশ জনতাকে বিনিসুতোর মালায় গাঁথা এই আন্দোলনকে রোখে কে?
পৃথিবীর তাবৎ সফল বিপ্লব, আন্দোলনের দিকে নজর দিলে দেখা যায় সেখানে প্রতি বিপ্লবীরা ছিল,সুবধাবাদীরা ছিল, রাজনীতি ছিল, প্রতিপক্ষ ছিল- এগুলো বড় কোন আন্দোলনের প্রাত্যহিক অনুষঙ্গ। কিন্তু গণমানুষের উপস্থিতি থাকলে এসবের কোন কিছুই আন্দোলনকে ঠেকিয়ে রাখতে পারে না। শাহবাগকেও তাই ঠেকানো যাবে না। খুন করে, নাস্তিক আখ্যা দিয়ে,লোভের ফাঁদে ফেলে, দলীয় পরিচয় দেখিয়ে কতিপয় দোনোমোনো মানুষের মনে ভয়, সন্দেহ ধরিয়ে তাদরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলা সম্ভব কিন্তু লাখ লাখ জেগে ওঠা মানুষকে ঘুম পাড়ানো কখনোই সম্ভব নয়।
আর তাই আপনার যখন আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি, গন্তব্য নিয়ে সন্দেহ হয় তখন আপনি চারপাশে তাকান, দেশের আনাচে কানাচে থেকে সারা বিশ্বে শাহবাগের সমর্থনে জড়ো বাঙালিদের মুখগুলো খুটিয়ে খুটিয়ে দেখুন--দেখবেন তারা সবাই আপনার আমার মতোই সাধারণ মানুষ। তারা কোন রাজনৈতিক দলের কথা বলতে আসেনি, কোন রাজনৈতিক দাবী নিয়েও তারা স্লোগান দিচ্ছে না।তাদের কারো বুকে বাবার বুলেটবিদ্ধ লাশ, কারো বুকে মায়ের লাঞ্ছনা, কারো চোখে ভাই হারানোর বেদনা, কারো হাতে স্বজনের কুড়িয়ে পাওয়া অস্থি....যতোদিন নিজের চারপাশে ভেতরে ভেতরে ক্ষত পুষে রাখা এ্সইসব ধারণ মানুষকে দেখতে পাবেন ততোদিন জেনে রাখুন আপানার কোন নেতা দরকার নেই, আপনার পথ হারাবার কোন ভয় নেই, আমার আপনার ইচ্ছাই আন্দোলনের গন্তব্য;চলমান যুদ্ধের জয় পরাজয়ের নির্ধারক।
১৯/০২/২০১৩
সিডনি, অস্ট্রেলিয়া।
http://www.sachalayatan.com/murtala31/48065
শাহবাগ প্রাঙ্গণের চেতনায় চুরমার জামাতের হরতাল
| বিক্ষিপ্ত হিংসায় হত তিন |
| শাহবাগ প্রাঙ্গণের চেতনায় চুরমার জামাতের হরতাল |
| নিজস্ব সংবাদদাতা • ঢাকা |
| শাহবাগ স্কোয়ারের আন্দোলনকারীদের ডাকে সাড়া দিয়ে মৌলবাদী জামাতে ইসলামির ডাকা হরতাল কার্যত ব্যর্থ করে দিলেন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ। হরতালকারীদের ভাঙচুর ও আগুন লাগানোর হুমকি উপেক্ষা করে রাস্তায় বাস ও অন্য যানবাহন চলেছে। ব্যাঙ্ক ও অফিস-আদালতে স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে। শেয়ারবাজারে লেনদেনও হয়েছে আর পাঁচ দিনের মতোই। বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল-কলেজ, এমনকী সমস্ত প্রাথমিক স্কুলও এ দিন খোলা ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা শান্তিতে পরীক্ষা দিয়ে শাহবাগ স্কোয়ারে এসে জড়ো হন। এর মধ্যেই কাল সংসদে পাশ হওয়া 'যুদ্ধাপরাধ আইন সংশোধনী বিল'টিতে এ দিন সই করেছেন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। গেজেট নোটিফিকেশনের পরেই আইনটি কার্যকর হবে। জনজোয়ারের দাবি মেনে সরকার এই সংশোধনী আনায় কোনও ব্যক্তির পাশাপাশি জামাতে ইসলামির মতো দল এবং তাদের বিভিন্ন সংগঠনকেও মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষ নেওয়ার জন্য কাঠগড়ায় তোলা যাবে। আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেছেন, "এর পর জামাতকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি শুধু ঘোষণার অপেক্ষা।" শাহবাগের 'স্বাধীনতা প্রজন্ম চত্বর' থেকে কাল জামাতের হরতাল ব্যর্থ করার ডাক দিয়ে বলা হয়েছিল, 'পাড়ায় পাড়ায় ব্রিগেড গড়ুন, জামাত-দুষ্কৃতীদের প্রতিরোধ করুন'। |
| নতুন প্রজন্ম |
| শাহবাগের স্বাধীনতা প্রজন্ম চত্বরে গণবিক্ষোভে সামিল এই খুদেও। ঢাকায় সোমবার ছবিটি তুলেছেন উমাশঙ্কর রায়চৌধুরী। |
| অন্যান্য হরতালে জামাত এবং তার ছাত্র সংগঠন ছাত্র শিবিরের কর্মীরা সকাল থেকেই দোকানপাটে হামলা চালিয়ে, বাস-গাড়ি ভাঙচুর করে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে। এ দিনও সকালে তারা বিভিন্ন জায়গায় এ ধরনের ঝটিকা হামলা শুরু করেছিল। কিন্তু পুলিশ ও মানুষের প্রতিরোধে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। সকাল থেকেই ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় যানবাহন চলাচল শুরু হয়ে যায়। সে সময়েই জামাতের কর্মীরা আগুন লাগানোর জন্য একটি বাসকে তাড়া করলে সেটি উল্টে যায়। তার নীচে চাপা পড়ে এক জন মারা যান। কিন্তু এই ঘটনাও মানুষের জেদকে ভাঙতে পারেনি। রাস্তায় লোকজন কিছুটা কম থাকলেও জনজীবন প্রায় স্বাভাবিকই ছিল। এই প্রথম হরতাল অমান্য করে সমস্ত স্কুল-কলেজ খোলা ছিল। অন্যান্য ব্যাঙ্কের পাশাপাশি জামাতে ইসলামির 'নিজস্ব ব্যাঙ্ক' হিসেবে পরিচিত ইসলামি ব্যাঙ্কেও একেবারে স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তা থেকে জামাত কর্মীরাও উধাও হয়ে যান। হরতাল ভাঙার ডাক দিয়ে বড় বড় মিছিল বার হয় ঢাকার বিভিন্ন রাস্তায়। অন্যান্য শহরগুলির ছবিও মোটামুটি একই ছিল। সকালে জামাত কর্মীরা হামলা চালিয়ে সুবিধা করতে না পেরে দমে যায়। কোথাও কোথাও যানবাহনে আগুন লাগালেও দুপুরের পর থেকে বেপাত্তা হয়ে যায় তারা। দূরপাল্লার বাসও চলতে শুরু করে। কুমিল্লায় জামাত কর্মীরা হামলা চালালে পুলিশও গুলি চালায়। এক জামাত কর্মী নিহত হন। কক্সবাজারে জামাত কর্মীরা একটি অ্যাম্বুল্যান্সে ভাঙচুর করলে এক রোগী মারা যান। চট্টগ্রাম শহরেও মানুষ রাস্তায় নেমে হরতাল ব্যর্থ করেছেন। একেবারে স্বাভাবিক ছিল বন্দরের কাজকর্ম। শাহবাগের চত্বরে এ দিন সকালে জাতীয় পতাকা তুলে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। অন্য দিনের চেয়ে আজ ভিড় ছিল অনেকটাই বেশি। হরতালের ঘোষণা হওয়ায় রাত থেকেই বহু মানুষ জমায়েত হয়েছিলেন প্রজন্ম চত্বরে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় আরও বাড়ে। দুপুরে একটি অনুষ্ঠানে সম্মান জানানো হয় কবীর সুমনকে। প্রজন্ম চত্বরের যুববিক্ষোভ নিয়ে এ পর্যন্ত তিনটি গান বেঁধে পাঠিয়েছেন তিনি। সুমনের অন্য গানও লাউডস্পিকারে বাজানো হয়। সন্ধ্যায় এ দিন জামাতের আক্রমণে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। যুদ্ধাপরাধ আইনে সংশোধনী আনার জন্য ধন্যবাদও জানানো হয় সরকারকে। http://www.anandabazar.com/19bdesh2.html |
| উঠবে সীমান্ত-চুক্তিও |
| তিস্তা নিয়ে মমতার সঙ্গে কথা বলবেন খুরশিদ |
| জয়ন্ত ঘোষাল • নয়াদিল্লি |
| তিস্তা জট ছাড়াতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে খুব শীঘ্রই আলোচনায় বসতে চলেছেন বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ। তিনি বলেন, "খুব শীঘ্রই আমি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসতে চাই। শুধু মাত্র তিস্তা বা সীমান্ত চুক্তি নয়, সামগ্রিক ভাবে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়েও কথা বলব। আলোচনা হবে অন্যান্য সমস্ত প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়েও। মুখ্যমন্ত্রী যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাইবেন, সে সব ব্যাপারেও আমি কথা বলতে প্রস্তুত।" সেপ্টেম্বর মাসে দিল্লিতে আসছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে কথা মনে করিয়ে সলমনকে প্রশ্ন করা হয়, তা হলে কি সেপ্টেম্বরেই তিস্তা চুক্তি সই হবে? ঢাকা থেকে বিশেষ বিমানে দিল্লি ফেরার পথে এক বিশেষ সীমান্ত চুক্তি নিয়ে অবশ্য ঘোর আপত্তি জানিয়েছে অসম রাজ্য বিজেপিও। এই অবস্থায় বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব বিলটিকে কী ভাবে সমর্থন জানাবেন? বিদেশমন্ত্রীর জবাব, "বিজেপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন সীমান্ত বিতর্ক নিরসনের প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছিল। সে সময়ে এই সংক্রান্ত একটি মন্ত্রিগোষ্ঠী গঠন করা হয়। তার সুপারিশের ভিত্তিতে সীমান্ত চুক্তি রূপায়ণের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক আলাপ-আলোচনা শুরু হয়। ইন্দিরা গাঁধীর স্বপ্ন অটলবিহারী বাজপেয়ীর সরকার বাস্তবায়িত করতে সক্রিয় হয়। তখন বিজেপির সেই উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছিল কংগ্রেস। আশা করি, এখন বিজেপি কংগ্রেসের উদ্যোগকে সমর্থন জানাবে।" একই সঙ্গে অসম রাজ্য বিজেপির সঙ্গে সরাসরি কথা বলে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে অস্বস্তিতে ফেলতে নারাজ সলমন। তাঁর কথায়, "বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁদের রাজ্য নেতৃত্বকে বিষয়টি বোঝাতে সক্ষম হবেন। এ ব্যাপারে লোকসানের চেয়ে কূটনৈতিক লাভ অনেক বেশি।" মমতা ও তাঁর দল কেন্দ্র কথা কংগ্রেস-বিরোধিতার সুর চড়ালেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসাই করেছেন বিদেশমন্ত্রী। তাঁর কথায়, "মমতা অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। আমি ব্যক্তিগত ভাবে ওঁকে দীর্ঘ দিন ধরে চিনি। সিপিএমের মতো সংগঠিত একটি দলকে সরিয়ে বিপুল সমর্থন নিয়ে ক্ষমতাসীন হওয়া সাধারণ ব্যাপার নয়।" তিস্তা-সহ নানা বিষয়ে মমতার যে ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে, তা উড়িয়ে সলমন বলেন, "মমতার সম্বন্ধে একটি ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হয়েছে যে তিনি বাংলাদেশ বিরোধী। কিন্তু উনি আসলে বাংলাদেশের অত্যন্ত ভাল বন্ধু। তিনি তাঁর রাজ্যের, বিশেষত উত্তরবঙ্গের জল সঙ্কটের আশঙ্কায় কিছু বক্তব্য পেশ করেছিলেন। আমি মমতার সমর্থন চাই। আশা করি, আলোচনার মাধ্যমে তাঁকে বোঝাতে পারব যে পশ্চিমবঙ্গের এক চুলও ক্ষতি না করে ওই চুক্তিকে বাস্তবে রূপ দেওয়া যেতে পারে। মমতার সম্মতি একটি ছোট বিষয়। কিন্তু তার সঙ্গে আলোচনা করে তাঁকে সঙ্গে নিয়েই আমরা এগোতে চাই। তাঁকে বাদ দিয়ে নয়।" এই প্রসঙ্গেই উঠেছে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের প্রসঙ্গও। সলমন বলেন, "নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়েও আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা চাই না, উগ্রপন্থী শক্তি বাংলাদেশের মাটিকে ব্যবহার করে ভারতের নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করুক। পশ্চিমবঙ্গ এমন একটি রাজ্য, যার বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত সবথেকে বেশি। আমি জানি, মমতা বোঝেন যে, বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানের জন্যই আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিক রাখার জন্য বাংলাদেশের সাহায্য প্রয়োজন।" প্রয়োজনে মমতার সঙ্গে বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করতে কলকাতাতেও যাবেন বলে জানিয়েছেন খুরশিদ। http://www.anandabazar.com/19bdesh1.html |
No comments:
Post a Comment