Tuesday, April 23, 2013

Why didn’t new govt pursue bill: Asim,মদন-কুণালকে গ্রেপ্তারের দাবি,মহাকরণেই চক্র সিএমও-র তিন কর্মীর

মদন-কুণালকে গ্রেপ্তারের দাবি,মহাকরণেই চক্র সিএমও-র 

তিন কর্মীর

Why didn't new govt pursue bill: Asim

Asim Dasgupta at the news conference. Picture by Sanjoy Chattopadhyay

Calcutta, April 21: Former finance minister Asim Dasgupta today accused the Trinamul government of dithering on a bill passed by the Left Front regime in 2009 and sent for Presidential assent that could have empowered the state government to crack down on companies illegally mobilising deposits.

The bill — the West Bengal Protection of Interests of Depositors in Financial Establishments bill — was first passed in 2003 and sent for President's assent the same year.

According to Dasgupta, the bill lay with the Centre despite 12 reminders till 2009 when the state government was asked to tweak two provisions, following which the changes were made. The bill was sent to Delhi after the Assembly's seal in the winter session of 2009-10.

"We pursued it again, but the bill got stuck again in Delhi. Then, the new government came to power… But they did nothing to get the bill approved. Had the bill been passed, the present crisis over defaults by this deposit mobilising company could have been avoided," said Dasgupta.

The former minister did not name the Saradha Group, but it was clear that he was referring to the group as he spoke about the company that has closed down its offices across the state and has also wound up its media business.

Unlike his party colleagues, Dasgupta did not attribute any motive in the government's inaction, but he took care to explain that the 23-month-old government did precious little to follow up on what the Left Front government had done to rein in such companies.

"There was no effort to get the bill cleared…. We started a probe against four companies, including the one which has recently been shut down, and also informed Sebi that these companies were flouting norms and raising money from people. We want to know what they have done with the findings of the probe and why didn't they press for the bill's clearance?" asked Dasgupta during a one-and-a-half-hour news conference.

The trigger behind the conference was allegations by Trinamul all-India general secretary Mukul Roy that the Left government allowed the illegal deposit mobilising companies to mushroom.

Dasgupta denied the charge. He explained that different types of deposit mobilising companies that come under the purview of either Sebi or RBI, depending on the nature of their operation, could operate only after an approval from the Registrar of Companies, a wing of the Union ministry of corporate affairs.

"Those who are making such allegations either don't know about the rules or are deliberately misinforming people," the former finance minister said.

"The Left Front government did almost everything possible to rein in such companies, which are loosely called chit funds," he added.

Giving a historical perspective of such companies in Bengal, he recounted how Ashok Mitra, the finance minister of the first Left Front government, had ordered the arrest of the promoter of Sanchayita in 1981-82, which had collected deposits from public promising returns that banks couldn't match.

Dasgupta himself was the finance minister when a similar crisis returned to haunt gullible depositors in 1991-92, when the government arrested owners of 50 such companies and attached their properties to repay depositors after the high court allowed it to liquidate the assets of such sham companies.

The same model was followed again when there were complaints of defaults in 2002-03, he said, explaining how the Left Front government — despite limitations in the existing laws — cracked down on the offenders.

"The crisis of 1991-92 was by far the biggest and the present one may even get bigger…. Around 15 big companies and some 100 smaller outfits have mopped up at least Rs 30,000 crore from people. So, you can imagine the scale," said Dasgupta, hinting that the collapse of Saradha was a tip of the iceberg.

As the phenomenon of the so-called chit fund companies have come back in regular intervals, the government felt the need for a stringent law against companies illegally mobilising deposits. Rules prevalent then did not allow the government to take action against them unless there were complaints of default.

According to him, the bill was drafted in such a way that the government — through the district magistrates and police commissioner in Calcutta — could keep tabs on the companies and take action against the owners on the basis of suspicion that the companies were likely to default on repayments.

"There was a provision of even life imprisonment for the owners…. The bill would have allowed the government to seize the assets of the companies and sell them to repay the depositors," said Dasgupta before asking for an explanation on why the new government did not pursue its clearance with the Centre.

Sources in the state government had earlier said that the Mamata Banerjee government did not press for the passage of the bill and recalled it as it wanted to bring in new legislation with "more teeth".

"We had modelled our bill on legislation that the governments of Tamil Nadu and Maharashtra had introduced…. I don't know how they could have made it stronger," Dasgupta said.


From the Telegraph, Kolkata with thanks


মহাকরণেই চক্র সিএমও-র তিন কর্মীর


মহাকরণেই চক্র সিএমও-র তিন কর্মীর
পার্থসারথি সেনগুপ্ত

বাঘের ঘরেই ঘোগের বাসা!
মহাকরণের অন্দরেও জাল বিছোতে বাকি রাখেনি চিট ফান্ড৷ শিকার ক্যান্সার আক্রান্ত এক মহিলা কর্মী৷ তাঁর যত্‍‌সামান্য সঞ্চয় আত্মসাত্ করেছে চিট ফান্ডের
রাঘববোয়ালেরা৷ বার বার আকুতি সত্ত্বেও একটি পয়সাও ফেরত আসেনি৷ দুরারোগ্য ব্যাধির কাছে হার মেনে মারা যাওয়ার আগে প্রতি মূহূর্তেই মহিলা যন্ত্রণাবিদ্ধ
হয়েছিলেন, জীবনের যুদ্ধে তাঁকে চরম কোণঠাসা করে ফেলেছে শয়তানের দল৷

প্রায় দু' বছর আগেকার কথা৷ সে সময় চিট ফান্ডের খলনায়কেরা পরম বিক্রমে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন৷ তখনই কিন্ত্ত অসম সাহসের পরিচয় দিয়েছিলেন মহাকরণে
তথ্যসংস্কৃতি দপ্তরের 'রেকর্ড সাপ্লায়ার' আরতি সাহা৷ ২০১০ সালের ৩০ ডিসেম্বর কলকাতা পুলিশে এফআইআর দায়ের করে জানান, তিনি চিট ফান্ডের প্রতারণার
শিকার৷ 

২০১২ এর ২৪ জুলাই লালবাজারের স্পেশাল সেলের এসআই আর সাঁপুই যে নথি আদালতে পেশ করেছিলেন, তাতে বলা হয়েছে, 'মহাকরণের তিন কর্মী, অমিতাভ
মাইতি, অরুণ পাল ও সঞ্জীব পাল, গভীর চক্রান্ত করে 'তৃণমূল এমপ্লয়িজ ফেডারেশন ওয়েলফেয়ার কোঅপারেটিভ ফান্ড' তৈরি করে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে
এই সংস্থায় টাকা জমা রাখলে চল্লিশ মাসে দ্বিগুণ হবে৷ সঞ্জীববাবু ও অমিতাভবাবু বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে কর্মরত৷ অরুণবাবু কর্মরত অর্থ দপ্তরে৷ তাঁদের
ফাঁদে পা দেন অভিযোগকারী (আরতিদেবী)৷ যদিও, অভিযোগকারী ওই নির্দিষ্ট সময়সীমা পার হয়ে যাওয়ার পরও টাকা ফেরত পাননি৷ তদন্তে দেখা যাচ্ছে, তিন
অভিযুক্ত একটি দুষ্টচক্র চালাতেন৷ মাসে মাসে যে টাকা আরতিদেবী জমা দিয়েছিলেন, তার মোট অঙ্কটা ছিল ৫৬ হাজার টাকা৷ তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন৷

চিকিত্‍সার জন্য বারবার ওই টাকা ফেরত চেয়েও ব্যর্থ হন৷ তদন্তে দেখা গিয়েছে, তাঁর কাছ থেকে মাসে মাসে টাকা নিয়ে তিন অভিযুক্ত একটি ছোট নোটবইতে
সই করতেন৷ হস্তলিপিবিশারদদের কাছে তা পাঠিয়ে অকাট্য প্রমাণ মিলেছে যে ওই সই তিন অভিযুক্তদেরই৷' অভিযুক্তদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি৷
মহাকরণে চিট ফান্ডের অস্তিত্ব উদ্ঘাটনে এই 'হুইসল ব্লোয়ার'-এর ভূমিকা আইএনটিইউসি সমর্থিত সেক্রেটারিয়েট এমপ্লয়িজ ফেডারেশন৷ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সংকেত চক্রবর্তী গত ১২ ডিসেম্বর মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়ে আর্জি জানান, মহাকরণে চিট ফান্ডের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত কর্মীদের যন্ত্রণার উপশম করুক সরকার৷
এখানেই থেমে যাননি সংকেতবাবু৷ তিনি অর্থদপ্তরে একটি আর টি আই করে জানতে চান, প্রশাসনিক সদর দপ্তর ও অন্যান্য সরকারি ভবনে এই ধরনের চিট
ফান্ড কতগুলি আছে৷ উত্তরও মিলেছিল৷ তা হল, এই ব্যাপারে কোনও তথ্য পরিসংখ্যান নেই অর্থদপ্তরের হাতে৷ সংকেতবাবুর কথায়, 'বুঝতেই পারছেন, এখানেই
খেলা শেষ৷'

দীর্ঘ সময় কেটে যাওয়ার পর তিন অভিযুক্তই আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়েছেন৷ কিন্তু, এই দুঃখের কিস্সার নটেগাছ এখানেই মুড়িয়ে যায়নি৷ কারণ, ২
এপ্রিল টিএমসি সমর্থিত ইউনাইটেড স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ফেডারেশনের কোর কমিটির চেয়ারম্যান ও তৃণমূল বিধায়ক মৃগেন মাইতি মুখ্যসচিবকে একটি চিঠি
দিয়ে এই কমিটির যে ৪১ জন সদস্যের নাম পেশ করেছেন, তাতে রয়েছে সঞ্জীব পাল ও অরুণ পালের নাম৷
মৃগেনবাবু অবশ্য 'এই সময়'কে বলেছেন, 'আমি চিট ফান্ডের ব্যাপারটা জানতাম না৷ খোঁজখবর অবশ্যই নেব৷ তবে যতক্ষণ না কেউ দোষী সাব্যস্ত হচ্ছেন,
ততক্ষণ তো কাউকে নিশানা করা যায় না৷ আমি খোঁজখবর নিয়ে আপনাদের জানাব৷'


মদন-কুণালকে গ্রেপ্তারের দাবি


মদন-কুণালকে গ্রেপ্তারের দাবি
সারদা কোম্পানির বিরুদ্ধে এজেন্ট, আমানতকারী, সাধারণ কর্মীদের ক্ষোভ, বিক্ষোভ, মিছিল, অবরোধ চলছেই৷ সংস্থার সর্বময় কর্তা সুদীপ্ত সেন, তার মিডিয়া
গ্রুপের পদত্যাগী সিইও তথা তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ এবং অন্যান্য পদস্থ কর্তার গ্রেপ্তারের দাবিও জোরদার হচ্ছে৷ সোমবারও মুর্শিদাবাদ এবং উত্তরবঙ্গের
ডুয়ার্সে সারদার দুই এজেন্ট আত্মহত্যার চেষ্টা করেন৷ মহাকরণের সবুজ সংকেত পেয়ে পুলিশ এখন বিভিন্ন জেলায় সারদা গ্রুপের অফিস সিল করে জিনিসপত্র
বাজেয়াপ্ত করার অভিযানে নেমেছে৷ কলকাতার মেয়ো রোড এবং ডাফরিন রোডের সংযোগস্থলে এ দিন হাজার খানেক এজেন্ট এবং আমানতকারী বিক্ষোভ দেখান৷

তাঁদের হাতে কুণালবাবু ছাড়াও পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের গ্রেপ্তারের দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড, পোস্টার ইত্যাদি ছিল৷ দুপুরে উত্তর কলকাতার গড়পারে কুণালবাবুর
বাড়ির সামনে তাঁর গ্রেপ্তারের দাবিতে জনা পঞ্চাশ কংগ্রেস সমর্থক বিক্ষোভ দেখান৷ পুলিশ এসে পরে তাঁদের সরিয়ে দেয়৷ জেলায় জেলায় ওই ভুঁইফোঁড় চিট ফান্ড
সংস্থার হাজার হাজার এজেন্ট প্রশাসন এবং পুলিশের দোরে দোরে ঘুরে যারপরনাই হয়রান হচ্ছেন৷ টাকা ফেরতের দাবিতে তাঁদের বাড়িতে চড়াও হচ্ছেন
আমানতকারীরা৷ মার খাওয়ার আতঙ্কে বহু এজেন্ট এখনও পলাতক৷ এর মধ্যেই মহকরণে মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে এজেন্ট এবং আমানতকারীদের টাকা
ফেরতের কোনও আশ্বাস না-দেওয়ায় তাঁরা হতাশ হয়ে পড়েছেন৷ শুধু তাই নয়, মুখ্যমন্ত্রী বিক্ষোভরত এজেন্টদের একাংশকে 'সিপিএমের সাজানো লোক' বলে কটাক্ষ
করায় তাঁরা ক্ষুব্ধ৷ গোলমালের আশঙ্কায় কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি এবং তিলজলায় তৃণমূল ভবনের সামনে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে৷ তৈরি
করা হয়েছে ব্যারিকেডও৷

এ দিন সকালে আমানতকারীদের টাকা ফেরতের কী হবে, সেই আতঙ্কে মুর্শিদাবাদের সুতি থানার খিদিরপুর খামারবাড়িতে তাপসী সিংহ নামে এক এজেন্ট ঘুমের
ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন৷ তাঁর স্বামী শ্রীনন্দন সিংহ বাড়িতেই একটি মুদির দোকান চালান৷ সংসারের আয় বাড়াতে তিনি নিজের জমানো দেড় লক্ষ
টাকা ছাড়াও স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে ৬ লক্ষ টাকা তুলে সারদার তহবিলে জমা দিয়েছিলেন বলে শ্রীনন্দনবাবু পুলিশকে জানান৷ সোমবার ভোরে তিনি
মাত্রাতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খান৷ সংজ্ঞাহীন অবস্থায় তাঁকে জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়৷ বেডে শুয়ে তিনি বলেন, 'আমার মৃত্যু ছাড়া আর কোনও
পথ নেই৷ এতগুলি লোকের টাকা কী ভাবে ফেরত দেব, জানি না৷' আমানতকারীদের টাকা ফেরতের দাবিতে বহরমপুরে মিছিল করে এসইউসির ছাত্র সংগঠন
ডিএসও৷ তারা সুদীপ্তবাবুর কুশপুতুল পোড়ায়৷ জেলার পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর জানান, সারদা গোষ্ঠীর মুর্শিদাবাদ শাখার ম্যানেজার বিপ্লব সাহাকে এ দিন
গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷

রবিবার বেশি রাতে ডুয়ার্সের হাসিমারায় সারদা গোষ্ঠীর এক এজেন্ট গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন৷ বাড়ির লোকেরা তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায়
হাসপাতালে ভর্তি করেন৷ বীরপাড়ায় এক এজেন্টের বাড়িতে হামলা চালান আমানতকারীরা৷ সোমবার শিলিগুড়ির এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেরিয়েছেন সারদা গোষ্ঠীর এজেন্ট এবং আমানতকারীরা৷ কোথায় গেলে সুরাহা মিলবে, তা জানার চেষ্টা করেও বিফল হন তাঁরা৷ এ দিন বেলা ১১ টা নাগাদ তাঁরা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ দেখান৷ পরে হিলকার্ট রোডে অবরোধ চলে৷ মিনিট দশেক পর শিলিগুড়িতে মহকুমাশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন এজেন্টরা৷ শিলিগুড়ি থানাতেও বিক্ষোভ হয়৷ তবে শাসক দলের ঘনিষ্ঠ ওই চিট ফান্ডের মালিকের বিরুদ্ধে কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ জানাতে সাহস করছেন না৷

আগামিকাল, বুধবার উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব এজেন্ট এবং আমানতকারীদের তাঁর দপ্তরে বৈঠকে ডেকেছেন৷ মন্ত্রী নিজেই এ কথা জানিয়েছেন৷ মন্ত্রী বৈঠক
ডাকলেও সমস্যার কোনও সমাধান হবে বলে মনে করছেন না এজেন্টরা৷ আন্দোলনকারীরা জানান, টাকা ফেরতের আশ্বাস না মেলা পর্যন্ত মিছিল, মিটিং, বিক্ষোভ
ইত্যাদি চলবে৷ আজ তাঁরা বাঘা যতীন পার্ক থেকে কেন্দ্রীয় মিছিলের ডাক দিয়েছেন৷ এজেন্টদের তরফে অয়ন আচার্য জানান, ভয়ে তাঁরা কেউ বাড়ি ঢুকতে
পারছেন না৷ এ দিকে, জেলায় সারদা গোষ্ঠীর স্থাবর-অস্থাবর সমস্ত সম্পত্তির উপর নজরদারি শুরু করেছে জেলা প্রশাসন৷ দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন
জানান, বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের কিছু করার নেই৷ তবে আমানতকারীদের স্বার্থেই ওই নজরদারি চালানো হচ্ছে৷
আলিপুরদুয়ার এবং ফালাকাটায় ওই সংস্থার কয়েক হাজার এজেন্ট পথে নামেন৷ তাঁদের দাবি, শাসক দলের নেতাদের মদতেই তাঁরা টাকা তুলেছিলেন৷ এখন
আমানতকারীরা টাকা ফেরত চাইছেন৷ প্রশাসন অবিলম্বে নিরাপত্তার ব্যবস্থা না-করলে এজেন্টরা গণ আত্মাহুতিরও হুমকি দেন৷ তাঁদের তরফ থেকে সুদীপ্ত সেন
এবং কুণালবাবুর বিরুদ্ধে আলিপুরদুয়ার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে৷ বালুরঘাটে সারদা গোষ্ঠীর একটি অফিস সিল করে দেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট
কৌশিক সিংহ৷ তিনি বলেন, আমানতকারীদের জন্যই এটা করা হল৷

এই চিট ফান্ড কেলেঙ্কারিতে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করে এ দিন মিছিল বেরোয় রানাঘাটেও৷ ওই মিছিল থেকে সুদীপ্ত সেন, তৃণমূলের সাংসদ কুণাল ঘোষ এবং
মন্ত্রী মদন মিত্রের গ্রেপ্তারেরও দাবি ওঠে৷ শুভঙ্কর সরকার, বিশ্বজিত্‍‌ শাস্ত্রী প্রমুখ এজেন্ট জানান, তাঁরা বাড়ি ফিরতে ভরসা পাচ্ছেন না৷ এসইউসির যুব সংগঠন
কৃষ্ণনগরে অতিরিক্ত জেলাশাসকের দপ্তরে স্মারকলিপি দেয় দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে৷

আরামবাগে সারদা গোষ্ঠীর একটি অফিস মঙ্গলবার 'সিজ' করে দেয় পুলিশ৷ সেখান থেকে সমস্ত কাগজপত্র, কম্পিউটারও নিয়ে যায় তারা৷ সেখ মনির হোসেন
নামে সারদার এক ম্যানেজারকে গ্রেপ্তারও করা হয়৷ হাওড়ার শ্যামপুরে সারদার এজেন্ট ছায়া মান্নাকে ঘিরে দীর্ঘক্ষণ বিক্ষোভ দেখান আমানতকারীরা৷
বারাসতে সারদা গোষ্ঠীর ছ'টি শাখার হাজার খানেক এজেন্ট এ দিন দুপুরে জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারের দপ্তরের সামনে মিছিল করে এসে বিক্ষোভ দেখান৷
তাঁদের স্মারকলিপিও দেওয়া হয়৷ তাতে আমানতকারীদের হাত থেকে এজেন্টদের বাঁচানোর ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয়৷ পাশাপাশি সুদীপ্তবাবুদের গ্রেপ্তারেরও
দাবি ওঠে৷ বারুইপুরে মানিক চক্রবর্তী নামে এক এজেন্ট সারডার ডিভিশনাল ম্যানেজার অরিন্দম দাসের বিরুদ্ধে ৩০ কোটি টাকার প্রতারণার মামলা করেন৷ হুগলির পোলবায় সুগন্ধ্যায় সোমবার সারদা গ্রুপের অটোমোবাইল কারখানাটি সিল করে দিতে যান সাতটি ব্যাঙ্কের কর্তা৷ তাঁরা যাওয়ার আগেই শ্রমিকেরা সেখানে
পৌঁছে যান৷ নোটিস লাগাতে গিয়ে তাঁরা শ্রমিকদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন৷ ব্যাঙ্ক কর্তারা জানান, কারখানার সম্পত্তি বিক্রি করে শ্রমিকদের পাওনা মেটানোর চেষ্টা
হবে৷ কিন্তু শ্রমিকদের বাধায় তাঁরা নোটিস না-লাগিয়েই ফিরে যান৷ বর্ধমানে সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক এজেন্টকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ সারদার একটি
অফিসও সিল করা হয়েছে৷

কলকাতার মেয়ো রোড এবং ডাফরিন রোডের সংযোগস্থলে বেলা সাড়ে ১২ টা নাগাদ সারদার হাজার খানেক এজেন্ট জড়ো হন৷ তাঁদের হাতের পোস্টার, প্ল্যাকার্ডে
লেখা ছিল, 'কুণাল ঘোষ হায় হায়', 'মদন মিত্র হায় হায়৷' পরিস্থিতি সামাল দিতে সেখানে ডিসি (ট্র্যাফিক) দিলীপ আদক, যুগ্ম কমিশনার (ট্র্যাফিক) সুপ্রতিম
সরকার, ডিসি (সাউথ) বিশাল গর্গ, ডিসি (সিক্সথ ব্যাটালিয়ন) সত্যজিত্‍‌ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ ছিলেন৷ রাখা ছিল একটি জলকামান, পাঁচটি প্রিজন ভ্যান, তিনটি
বাস৷ সত্যজিত্‍‍‌বাবু দফায় দফায় মাইকে বিক্ষোভকারীদের সরে যেতে বলেন৷ কিন্তু তাঁরা রাস্তাতেই বসে থাকেন৷ বেলা সাড়ে চারটের সময় সত্যজিত্‍‍‌বাবু আবারও
মাইকে একই আবেদন করেন৷ পরে আরও পুলিশ আসায় বিক্ষোভকারীরা রণে ভঙ্গ দেন৷

রাজ্যের আগেই চিট ফান্ড তদন্তে কেন্দ্র

য়াদিল্লি: রাজ্যের আগেই চিট ফান্ড নিয়ে তদন্ত শুরু করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের দল তদন্ত করে গিয়েছে কলকাতায়৷
প্রয়োজনে ফের সেই দল শহরে হানা দিতে পারে৷

চিট ফান্ড বিতর্কে তৃণমূল, সিপিএম দু'দলেরই নিশানায় কেন্দ্রীয় সরকার৷ কেন কেন্দ্র এই ব্যাপারে নজর দেয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে রাজ্যের যুযুধান দুই দল৷
কিন্তু তথ্য বলছে, কেন্দ্রীয় কোম্পানি বিষয়ক মন্ত্রকের আতসকাচের নীচে রয়েছে সারদা-সহ রাজ্যের একগুচ্ছ চিটফান্ড৷ রাজ্যের মোট ৭৩টি চিট ফান্ড সংস্থার
বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে তাদের কাছে৷ তার মধ্যে ১০টি অভিযোগ সারদা-র সংস্থাগুলি নিয়েই৷ মন্ত্রক সূত্রের খবর, কিছু দিন আগেই রাজ্যে গিয়ে তাদের
তদন্তকারী শাখা একদফা তদন্ত করে এসেছে৷ এই মূহূর্তে তারা পশ্চিমবঙ্গে না-থাকলেও অদূর ভবিষ্যতে তারা আবার যেতে পরেন৷ সারদাকে নিয়ে যে পরিস্থিতি
তৈরি হয়েছে, সে বিষয়ে মন্ত্রক যথেষ্ট ওয়াকিবহাল৷ তাই এখন তদন্তের গতি বাড়িয়ে চিট ফান্ড সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে চান তারা৷ এই সংস্থাগুলির
উপর সেবির নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণ করার জন্য আইন বদলের কথাও ভাবা হচ্ছে৷ অর্থমন্ত্রক সূত্রের খবর, আইনের ফাঁক গলে চিট ফান্ড সংস্থাগুলি বেরিয়ে যাচ্ছে৷ তার
ফলে পথে বসছেন বিনিয়োগকারীরা৷ তাই তারা আইন সংশোধন করার কথাও ভাবছেন৷

সেবি যেমন রাজ্যের একটি চিট ফান্ড সংস্থার বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলা করেছে৷ এই সংস্থাটি প্রয়োজনীয় তথ্য সেবিকে দেয়নি৷ সেই তথ্য চেয়েও পাওয়া যায়নি৷
এর পরই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে সেবি৷ অর্থমন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, আইনের কিছু ফাঁক আছে৷ চিট ফান্ডের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ তাদের নেই৷ রাজ্য সরকারেরও
বড় ভূমিকা আছে৷ আর এই ফাঁক গলেই চিট ফান্ডগুলি বেরিয়ে যাচ্ছে৷ তা ছাড়া মন্ত্রকের বক্তব্য, এখন আসল ব্যবস্থা নেওয়ার কথা রাজ্য সরকারের৷ চিট
ফান্ডগুলি লোককে প্রতারণা করলে তাদের বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব রাজ্যেরই৷

আবার তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত হল, 'আইনি দিক থেকে বলতে পারি, চিট ফান্ড নিয়ন্ত্রণের পুরো দায়িত্বটা সেবি ও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের৷ দুটোই
কেন্দ্রের ব্যাপার৷ বিশেষ আইন অনুসারে এই দায়িত্ব তাদের দেওয়া হয়েছে৷ রাজ্যের ভূমিকা তখনই আসে, যখন এই সংস্থাগুলি লোককে ঠকায়৷ তখন তাদের
বিরুদ্ধে পুলিশি ব্যবস্থা নেওয়া হয়৷ এক্ষেত্রে কিন্তু কেন্দ্র পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারেনি৷' তা হলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর কেন রাজ্যে গিয়ে বলে
এসেছিলেন, চিট ফান্ডকে সামলানোর দায়িত্ব রাজ্যের৷ কল্যাণবাবুর ব্যাখ্যা, 'তিনি হয়তো অন্য ভাবে কোনও ব্যাখ্যা করেছেন৷ তবে আমার মত হল, দায়িত্বটা
কেন্দ্রের৷'

এ দিকে, সারদা-কাণ্ড নিয়ে তৃণমূলকে বিপাকে ফেলতে উঠেপড়ে লেগেছে প্রদেশ কংগ্রেস৷ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, 'আমি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী
ও কোম্পানি বিষয়কমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করছি৷ পুরো বিষয়টা তদন্ত করে দেখতে বলব৷ কারা এর সঙ্গে যুক্ত, তা তদন্ত করে বের করতে হবে৷' এর পাশাপাশি
রাজনৈতিক স্তরে আন্দোলনও শুরু করছে প্রদেশ কংগ্রেস৷ প্রদীপবাবু জানিয়েছেন, 'আগামিকাল থেকে রাজ্যজুড়ে আইন অমান্য হবে৷ আমি নিজে সেই আইন আমান্যে থাকব৷ আমানতকারীরা আত্মহত্যা করছেন, এটা আমরা মেনে নিতে পারব না৷ আমাদের প্রশ্ন, মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবি সারদা গোষ্ঠী ১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছিল৷ সেই টাকার কী হল? সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে কারা যুক্ত ছিল? তাঁদের কী স্বার্থ ছিল? সেবি বা সিবিআই এ সব তদন্ত করে দেখুক৷'
আর সিপিএম নিজেদের ঘাড় থেকে দায় ঝেড়ে ফেলে এখন কংগ্রেস ও তৃণমূল দু' দলকেই কাঠগড়ায় তুলছে৷ সিপিএমের সংসদীয় দলনেতা সীতারাম ইয়েচুরি
বলেছেন, 'বাম সরকার ২০০৩ সালে কড়া আইন করে তা রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য পাঠিয়েছিল৷ ২০০৯ সালে কেন্দ্র বলে, কিছু সংশোধনী করা দরকার৷ সেই
সংশোধনী ২০০৯ সালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়৷ কিন্তু তার পর কংগ্রেস ও তৃণমূল আঁতাঁতের জন্য সেই আইন এখনও কেন্দ্রের কাছে পড়ে আছে৷ আমরা গত
ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ব্যবস্থা নিতে বলি৷ কিন্তু তার পরও কিছু হয়নি৷'





পড়েই দেখেননি, কটাক্ষ সূর্যর
বামেদেরই দুষলেন মমতা, আরও চড়ল বিল-বিতর্ক
হাতে উপযুক্ত আইনি অস্ত্র নেই। তাই ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির দৌরাত্ম্য ঠেকাতে রাজ্য সরকার বিশেষ কিছু করে উঠতে পারে না। এই যুক্তিতে সহমত শাসক-বিরোধী, দু'পক্ষই। কিন্তু অন্য রাজ্যে কার্যকর হয়ে গেলেও পশ্চিমবঙ্গে এই সংক্রান্ত আইন কেন চালু হয়নি, তা নিয়ে দুই শিবিরের দ্বৈরথ চরমে উঠল! 
ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থা (চালু লব্জে চিট ফান্ড) নিয়ন্ত্রণে আইনের অভাবের জন্য বিগত বাম সরকারকেই কয়েক দিন ধরে দুষে আসছেন তৃণমূল নেতারা। সোমবার প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে। বামেদের ঘাড়ে যাবতীয় দোষ চাপিয়ে তিনিও বলেছেন, মাত্র তিন মাস আগে সেবি-র চিঠি পেয়ে রাজ্য সরকার বাম আমলের আইন খুলে দেখেছে, তাতে প্রচুর খামতি রয়েছে। এখন আরও শক্তিশালী করে ওই আইন তৈরি করতে চাইছে বর্তমান সরকার। তার আগে প্রয়োজনে অর্ডিন্যান্স জারির কথাও ভাবা হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রীর প্রথম অভিযোগ, "ওই আইনে (বাম আমলের বিল) সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতা ছিল না। জনগণের টাকা রক্ষা করতে কড়া আইনের খসড়া তৈরি করে রেখেছি। কেন্দ্রীয় সরকার সাহায্য করলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই আইন প্রণয়ন করব!" কিন্তু ঘটনা হল, ২০০৯ সালের ২২ ডিসেম্বর বিধানসভায় পাশ হওয়া 'ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রোটেকশন অফ ডিপোজিটর্স ইন্টারেস্ট ইন ফিনান্সিয়াল এসট্যাব্লিশমেন্ট বিল'-এর ৫ নম্বর ধারায় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার সংস্থান আছে। পাশাপাশি, বিলের ৩ নম্বর ধারায় আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে সংস্থার আধিকারিকদের কড়া শাস্তি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।(বিলের প্রতিলিপি দেখুন) 
বিলের প্রতিলিপি...

প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত রবিবারই জানান, ২০০৩ সালে যে বিল পাশ হয়েছিল, তাতে সর্বোচ্চ ১০ বছর শাস্তির কথা বলা হয়েছিল। তার পর কেন্দ্রের সুপারিশ মেনে ২০০৯ সালে তা বাড়িয়ে যাবজ্জীবন করা হয়। মহাকরণের এক পদস্থ আধিকারিকের মতে, ২০০৯ সালে পাশ হওয়া ওই বিল কার্যকর করলেই ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া যেত। এই ধরনের আইন করেই ওই সংস্থাগুলির উপরে রাশ টানতে সমর্থ হয়েছে তামিলনাড়ু। মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের অভিযোগের পরে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের কটাক্ষ, "বিলটা উনি পড়েও দেখেননি!"
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, "২০০৩ সালে পূর্ববর্তী সরকার আইন পাশ করে কেন্দ্রকে অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছিল। ২০০৬ সালে রাষ্ট্রপতি চিঠি লিখে জানান, ওই বিলে খামতি রয়েছে। নতুন আইন তৈরি করো। কিন্তু তার পরেও বামফ্রন্ট ওই আইন ফেরত নেয়নি। পুরনো আইন তুলে না-নিয়ে নতুন করে আইন করা যায় না। কিন্তু আগের আইন তুলে না-নিয়েই ২০০৮ সালে আবার আইন তৈরি করা হয়। ২০০৯ সালে ফের সেই আইন কেন্দ্রের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছিল।" 
সূর্যবাবু অবশ্য বলছেন, ২০০৬ সালে রাষ্ট্রপতির চিঠির কোনও তথ্য কোথাও নেই। কেন্দ্রের জবাব এসেছিল ২০০৮ সালে। যার পর ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে ফের বিল পাশ করা হয়। বিরোধী দলনেতার দাবি, ২০০৯-এর বিলটিকে নতুন বলে ধরা হবে, না বকেয়া বিল হিসেবে ধরা হবে, তা নিয়ে বিধানসভার স্থায়ী কমিটিতে দীর্ঘ বিতর্ক হয়েছিল। সেই কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন তৃণমূলের শিশির অধিকারী। শেষ পর্যন্ত ২০০৩ সালের বিলের সংশোধনী হিসেবেই ২০০৯ সালের বিলটি পাশ করানো হয়। কারণ, "বিধানসভার কার্যবিধির ১১৫(২) ধারায় বলা আছে, রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে কোনও বিল ফেরত (রিটার্ন) এলে সংবিধানের ২০০ ও ২০১ ধারা মতে তাকে বকেয়া (পেন্ডিং) বিল হিসেবেই ধরতে হবে।" ফলে পুরনো বিল ফেরতের অবকাশই ছিল না বলে সূর্যবাবুর অভিমত। 
মুখ্যমন্ত্রী বাম আমলের বিল ফেরত নিয়ে প্রশ্ন তুললেও তাঁর আমলেই বিল ফেরতের ব্যাপারে জটিলতা তৈরি হয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, তিন মাস আগে সেবি-র চিঠি পাওয়ার পরে বামফ্রন্টের তৈরি আইনটি ফেরত পাঠানোর জন্য কেন্দ্রকে তিনি অনুরোধ করেছেন। তাঁর কথায়, "কেন্দ্র তাড়াতাড়ি ফেরত দিলে কড়া আইন করতে পারি। ভুল আইনের জন্যই তো এই সব সংস্থাগুলির এত রমরমা! গত কাল রাষ্ট্রপতি আমার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে ফোন করেছিলেন। তাঁকেও আমি বলেছি, আইনটি দ্রুত ফেরত পাঠাতে।" 
মহাকরণের এক কর্তা জানান, বিল ফেরত (রিটার্ন) এবং প্রত্যাহারের (উইথড্রয়াল) মধ্যে আইনগত ফারাক আছে। বিল ফেরত চাওয়ার অর্থ হল, ওই বিলেই কিছু সংশোধন করা হবে। কিন্তু নতুন বিল আনতে হলে আগের বিল প্রত্যাহার করে নিতে হবে। ফেব্রুয়ারি মাসে রাজ্যের অর্থসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী রাজ্যপালকে চিঠি লিখে বাম আমলের বিলটি ফেরানোর আর্জি জানান (রাষ্ট্রপতির কাছে অনুমোদনের জন্য যাওয়া কোনও বিল ফেরাতে হলে রাজ্যপালকে দিয়েই আর্জি জানাতে হয়)। মহাকরণের ওই কর্তার কথা, "এর পরে রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে চিঠি দিয়ে বলা হয় রাজ্য যদি নতুন বিল আনতে চায়, তা হলে আগের বিলটি প্রত্যাহার করতে হবে। সেই চিঠি রাজভবন মারফত গত সপ্তাহে স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছে এসেছে।" 
দ্রুত আইন বা অর্ডিন্যান্স করার যে দাবি মুখ্যমন্ত্রী করেছেন, তা নিয়ে প্রশ্নে তুলেছেন বিরোধীরাও। সূর্যবাবুর বক্তব্য, "২০০৯-এ পাশ হয়ে যাওয়ার পরে বিলটা এত দিন দিল্লিতে পড়ে থাকল। মাঝে এত দিন কেন্দ্রের মন্ত্রী ছিলেন উনি। রাষ্ট্রপতির কাছে দরবার করতে পারতেন বিলে সম্মতির জন্য। আর যদি মনে করতেন বিলটা আগাগোড়াই ভুল, তা হলে নতুন করে বিল পাশ করাতে পারতেন বিধানসভায়। এত দিন অপেক্ষা করছিলেন কেন?" 
বস্তুত, বাম ও কংগ্রেসের অভিযোগ, বিল-অর্ডিন্যান্সে অহেতুক মানুষকে বিভ্রান্ত করে সারদা-কাণ্ডের মূল পাণ্ডাদের গুছিয়ে নেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। আগে অভিযুক্তদের গ্রেফতার এবং তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার জন্য আদালতে আবেদন করে পরে বিল নিয়ে বিতর্ক করা যেত বলে বিরোধীদের মত। বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুর কথায়, "আমরা সব ধরনের অর্ডিন্যান্সের বিরোধী। বর্তমান আইনেই এদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়। অর্ডিন্যান্সের কথা বলে কালক্ষেপ করা হচ্ছে, যাতে ওই সংস্থার কর্ণধার পালিয়ে যেতে পারেন।" 
সারদা-কাণ্ড ঘিরে তৈরি হওয়া পরিস্থিতির মোকাবিলার পথ খুঁজতে কংগ্রেস অবিলম্বে বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন ডাকার দাবি জানিয়েছে। কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার কথায়, "লক্ষ লক্ষ আমানতকারীর স্বার্থরক্ষাই এখন প্রধান লক্ষ্য। এজেন্টদের নিগ্রহের হাত থেকে বাঁচানোর পথ বার করতে বিধানসভায় আলোচনা দরকার।"
http://www.anandabazar.com/23raj1.html

লোভের ফাঁদে সর্বস্বান্তরা দিশা পেলেন না মুখ্যমন্ত্রীর কথায়
ম সময়ে অনেক বেশি টাকা পাওয়ার লোভেই বহু মানুষ সর্বস্ব লাগিয়েছিলেন সারদার বিভিন্ন স্কিমে। ব্যাঙ্ক-ডাকঘর যেখানে ৯ থেকে ৯.৫ শতাংশ সুদ দেয়, সেখানে সারদা কোথা থেকে এত চড়া হারে সুদ দিয়ে যাবে, তা ভেবেও দেখেননি তখন। এজেন্টরাও মোটা কমিশনের লোভে কোটি কোটি টাকার লগ্নি করিয়েছেন। এখন সুদীপ্ত সেন সংস্থা গুটিয়ে ফেরার হয়ে যাওয়ার পরে টাকা কোথা থেকে ফেরত পাবেন, সেই চিন্তায় মাথায় হাত লক্ষ লক্ষ মানুষের। এ ক'দিন তাঁরা তাকিয়ে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে। 'দিদি, আমাদের বাঁচান' প্ল্যাকার্ড নিয়ে রাস্তায়ও নেমেছেন। কিন্তু সোমবার মহাকরণে মমতা বলেছেন, "যা গেছে তা গেছে। ধৈর্য ধরুন, শান্ত থাকুন।" এই কথার পরে আর কোনও দিশাই দেখতে পাচ্ছেন না আমানতকারী থেকে এজেন্ট, কেউই।
কান্নার মুখ। সোমবার কলকাতার গাঁধী মূর্তির পাদদেশে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
ভুঁইফোঁড় সংস্থাগুলির শিকার কারা? প্রশাসনের একটি সূত্র বলছে, শুধু অল্পশিক্ষিত গ্রামের মানুষরাই যে কম সময়ে প্রচুর টাকা পাওয়ার লোভে তাদের ফাঁদে পা দিয়েছেন, তা কিন্তু নয়। ব্যাঙ্কের কর্মী, শহরের প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসকও একই অলীক স্বপ্ন দেখেছেন। অর্থনীতির যাবতীয় যুক্তি-বুদ্ধির বাইরে গিয়ে বছরে ১২৫% পর্যন্ত সুদের লোভ দেখিয়েছে কোনও কোনও ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থা। আর তাতে সাড়া দিয়ে লগ্নি করেছেন তাঁরা। কোনও কোনও ক্ষেত্রে তো সারা জীবনের সঞ্চয় তুলে দিয়েছেন ওই সব সংস্থার এজেন্টদের হাতে। 
প্রশাসনের আর একটি অংশ অবশ্য বলছেন, শুধু গ্রাহকদের লোভই দায়ী নয়। তাঁদের বক্তব্য, ডাকঘরে গিয়ে মানুষ যথাযথ সাড়া পান না। ডাকঘরের যাঁরা এজেন্ট, তাঁদের অনেকেই এখন আবার বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থারও এজেন্ট। কারণ, সংস্থাগুলি অনেক বেশি কমিশন দেয়। এবং তা-ও দেয় নগদে, হাতে হাতে। ফলে তাঁরাও ডাকঘরে স্বল্প সঞ্চয় করানোর বদলে এই সব সংস্থার জন্য লগ্নি টানতে কোমর বেঁধেছেন। গ্রামের মানুষের কাছে গিয়ে বিরাট টাকা ফেরত পাওয়ার টোপ দিয়েছেন। গ্রামের স্বল্পশিক্ষিত বা অশিক্ষিত মানুষও ডাকঘর বা ব্যাঙ্কে গিয়ে দশ রকম আইনি হ্যাপা সামলানোর বদলে ঘরে বসে বিরাট টাকা পাওয়ার লোভ সামলাতে পারেনি। প্রশাসনের ওই কর্তাদের বক্তব্য, এই অবস্থায় ডাকঘরের স্বল্প সঞ্চয় কর্মসূচিকে ঢেলে সাজলে কিংবা ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খোলার পদ্ধতি সরল করলে ওই সংস্থাগুলির গ্রাস থেকে মানুষকে অনেকটাই মুক্তি দেওয়া সম্ভব হবে।
মুখ্যমন্ত্রীও এ দিন সাধারণ মানুষকে স্বল্প সঞ্চয়ে বেশি করে টাকা রাখতে অনুরোধ করেন। বলেন, "সাধারণ মানুষকে অনুরোধ করব স্বল্প সঞ্চয়ে টাকা রাখতে। কোনও জায়গায় টাকা রাখার আগে ভাল করে খোঁজখবর নিন। গরিব মানুষের সর্বনাশ হচ্ছে, সেটা খারাপ লাগছে। ধাপে ধাপে যতটা পারি চেষ্টা করব।" তবে ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে তিনি যে কঠোর হবেন, তা বুঝিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "মানুষ প্রতারিত হচ্ছে। এক ইঞ্চি জমিও ছাড়তে রাজি নই।"
এই ধরনের সংস্থাগুলির রমরমার জন্য সব দায় মুখ্যমন্ত্রী চাপিয়েছেন কেন্দ্রের উপরেই। তাঁর যুক্তি, "কেন্দ্র স্বল্প সঞ্চয়ে সুদ কমিয়ে দেওয়ার পরেই এ ধরনের সংস্থায় লগ্নির প্রতি ঝোঁক বেড়েছে সাধারণ মানুষের।" তাঁর আরও বক্তব্য, "এই সংস্থাগুলি কোম্পানি আইনে নথিভুক্ত হয়। পনেরো মিনিটে অনলাইনেই নথিভুক্ত হওয়া যায়। এ তো কেন্দ্রেরই নিয়ম। তাই যাবতীয় দায় তাদেরই।" 
রাজ্য সরকারের পক্ষে যুক্ত দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, "আমার পক্ষে তো সম্ভব নয়, সারা রাজ্যে কোথায় কী হচ্ছে, তা খুঁজে বেড়ানো! সেবি আমাকে কিছু দিন আগে চিঠি দিয়ে একটি সংস্থার বিরুদ্ধে সতর্ক করে। তার পরেই আমরা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উদ্যোগী হই।" মুখ্যমন্ত্রী জানান, গত সপ্তাহে একটি টিভি চ্যানেলের কর্মীরা অভিযোগ দায়ের করার পরেই তাঁরা ভুঁইফোঁড় সংস্থাগুলির কাজকারবার সম্পর্কে জানতে পারেন। মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, "কই, তার পর তো আর আমরা দেরি করিনি! সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছি। ওদের বোর্ড অফ ডিরেক্টরকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।"
মুখ্যমন্ত্রীর এই সাংবাদিক বৈঠকের পরে বিরোধীরা অবশ্য বলছেন, তাঁর কথায় কোনও আশার বার্তা নেই। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, "সর্বস্বান্ত হওয়ার পরে আমানতকারীদের কাছে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, 'যা গেছে তা গেছে।' এর ভিতরের বার্তা হল, যেটুকু আছে, সময় দিচ্ছি, এ দিক ও দিক করে নেওয়া হোক।" রাজ্য সরকার ভুঁইফোঁড় সংস্থাগুলিকেই গুছিয়ে নেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে বলে ইঙ্গিত করেছেন সূর্যবাবু। 
সারদা গোষ্ঠীর অফিসে হামলা ও এজেন্টদের অবস্থান-বিক্ষোভ কিন্তু অব্যাহত। জেলা থেকে আসা এজেন্টরা দুপুরে দীর্ঘক্ষণ মেয়ো রোড অবরোধ করে রাখেন। গাঁধী মূর্তির তলায় সমাবেশ করে এজেন্টরা দাবি করেন, অবিলম্বে সুদীপ্ত সেনকে গ্রেফতার করতে হবে। রাজ্য সরকারকে এজেন্টদের স্বার্থরক্ষা করতে হবে। 
বারাসতে জেলাশাসক, পুলিশ সুপারের অফিস এবং জেলায় সারদার প্রধান কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখান এজেন্টরা। রানাঘাটে এজেন্টদের মিছিল হয়। মিছিলে কয়েক জন আমানতকারীও সামিল হয়েছিলেন। শিলিগুড়িতে লগ্নিকারীরা 'এজেন্ট-কর্মী সম্মিলিত সারদা ঐক্য' নামে সংগঠন তৈরি করে আন্দোলনে নেমেছেন। কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, দুই দিনাজপুর, মালদহে এবং ধুবুরিতেও আমানতকারীরা রাস্তা অবরোধ করেন। জলপাইগুড়ির উকিলপাড়ায় সারদা সংস্থার অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখান এজেন্টরা। এ সবের মধ্যেই আমানতকারীদের টাকা ফেরতের হুমকি শুনে মুর্শিদাবাদের সুতিতে ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেন শ্রীনন্দন সিংহ। তাঁর স্ত্রী তাপসীদেবীও সারদা গোষ্ঠীর ফরাক্কা অফিসের এজেন্ট। 
চলছে ধরপাকড়ও। এ দিন সারদার চার এজেন্ট এবং আরামবাগ শাখা অফিসের ম্যানেজার মনির হোসেনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বর্ধমানে এক এজেন্ট অফিস খুলতে দেখে বেতন নিতে আসেন। পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। আরও দু'জন গ্রেফতার হন মুর্শিদাবাদের ডোমকলে।
http://www.anandabazar.com/23raj2.html

সারদা কাণ্ডে আস্থা নেই পুলিশে
সিবিআই আর রিসিভার চেয়ে মামলা
শাসক দলের উপরে চাপ বাড়াতে সারদা কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত চেয়ে আগেই সরব হয়েছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল সিপিএম। এ বার ওই কেন্দ্রীয় সংস্থাকে এর তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার আবেদন জানিয়ে জনস্বার্থের মামলা হল কলকাতা হাইকোর্টে। সেই সঙ্গে সারদা গোষ্ঠীর সম্পত্তি ও টাকা উদ্ধারের জন্য রিসিভার নিয়োগ করার আর্জিও জানানো হয়েছে। 
আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় সোমবার সকালেই হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চের সামনে সারদা গোষ্ঠীর কর্মকাণ্ডের বিবরণ দেন। তিনি বলেন, ওই লগ্নি সংস্থার লক্ষ লক্ষ গরিব আমানতকারী বিপন্ন। প্রায় রোজই আত্মহত্যা বা আত্মহত্যার চেষ্টার খবর আসছে। ৩০ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়ে সংস্থা বন্ধ করে পালিয়ে গিয়েছেন সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার। এই নিয়ে জনস্বার্থের মামলা শোনার জন্য ডিভিশন বেঞ্চে আর্জি জানান সুব্রতবাবু। 
প্রধান বিচারপতি সুব্রতবাবুকে বলেন, তিনি যেন এই ব্যাপারে মামলা দায়ের করে সব পক্ষের কাছে সেই আবেদনের প্রতিলিপি পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। মামলা হলে ডিভিশন বেঞ্চ শুনানি শুরু করতে পারবে। এ দিন এর পরেই এক বিশিষ্ট আইনজীবীর মৃত্যুতে শোকপালনের জন্য হাইকোর্টের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। 
বেলা ১টা নাগাদ আইনজীবী বাসবী রায়চৌধুরী সারদা কাণ্ড নিয়ে জনস্বার্থের মামলাটি দায়ের করেন। মামলাটি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে করা হলেও কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় অর্থসচিব, রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাস্ট্রসচিব, সেবি-র চেয়ারম্যান, সিকিওরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড, এল অ্যান্ড টি-র চেয়ারম্যান, কোম্পানি বিষয়ক মন্ত্রক, সিবিআই-এর ডিরেক্টর, কলকাতায় সিবিআই-এর দুর্নীতি দমন শাখা, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিমের আঞ্চলিক অধিকর্তা, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার, রাজ্যের অর্থসচিব, সারদা গোষ্ঠীর এগ্জিকিউটিভ চেয়ারম্যান কুণাল ঘোষ, সারদা গোষ্ঠীর ডিরেক্টর প্রমুখকেও বিবাদী করা হয়েছে। 
আবেদনে বলা হয়েছে, সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন সিবিআই-কে একটি চিঠি লিখেছিলেন। তাতে এমন কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের নাম রয়েছে, যাঁরা ওই গোষ্ঠীর কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা পেয়েছিলেন। সেই চিঠি হাইকোর্টে জমা দেওয়া হোক। আবেদনকারীর বক্তব্য, ২০০৪ সালে রাজ্যের গোয়েন্দা গেজেটে সুদীপ্তবাবুকে 'মোস্ট ওয়ান্টেড' বলা হয়েছিল। সাংলি সিটি কেলেঙ্কারির জন্য তাঁর বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে পুণে আদালত। আবেদনে বলা হয়েছে, সুদীপ্তবাবু আগেকার লগ্নি সংস্থা সঞ্চয়িনীর প্রয়াত মালিক ভূদেব সেনের ছেলে। তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তে নেমে পুলিশ এক সময় জানতে পারে, সুদীপ্তবাবু ও দীপিকা সেন 'প্যাকেজড ওয়াটার' তৈরির জন্য একটি কোম্পানি গড়েন। শিলং কলেজের তিন শিক্ষক অভিযোগ দায়ের করেন সুদীপ্তবাবুর বিরুদ্ধে। অন্য সংস্থা গড়ে মেঘালয়েও একই ব্যবসা শুরু করেছিলেন সুদীপ্তবাবু। মামলা দায়ের করার পরে বাসবীদেবীর আইনজীবী সুব্রতবাবু জানান, সিবিআই তদন্তের আর্জি জানানো হয়েছে। কারণ রাজ্যের সঙ্গে এই সারদা গোষ্ঠী কার্যত এক বন্ধনীতে যুক্ত হয়ে গিয়েছে। তাই রাজ্য পুলিশ নিরপেক্ষ ভাবে এর তদন্ত করতে পারবে না। হাইকোর্টের তত্ত্বাবধানে রিসিভার নিয়োগের আবেদনও জানানো হয়েছে। ওই রিসিভার সারদা গোষ্ঠীর সম্পত্তি ও টাকা উদ্ধারের কাজ করবেন। তাঁরা চান, সংস্থার কেউ বা কোনও সরকারি কর্মী-অফিসার যাতে কোনও নথি নষ্ট করে ফেলতে না-পারেন, তার জন্য সারদা গোষ্ঠীর সব অফিসেই ঢোকার জন্য হাইকোর্টের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হোক। আবেদনে বলা হয় তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ প্রথমে সারদার সংবাদমাধ্যমের চিফ এগ্জিকিউটিভ অফিসার ছিলেন। পরে এগ্জিকিউটিভ চেয়ারম্যান হন। গত এক মাস ধরে সারদা গোষ্ঠী টাকা সরিয়ে ফেলছিল এবং জমি বাড়ি বিক্রি করছিল। শাসক দলের অনেকেই তা জানতেন। তবু সরকার কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।
http://www.anandabazar.com/23raj3.html

সাংবাদিকদের আর সংসদে চান না মমতা


সাংবাদিকদের আর সংসদে চান না মমতা
চিট ফান্ড বিতর্কে দলীয় সাংসদ-সাংবাদিকদের ছেড়ে কথা বললেন না মুখ্যমন্ত্রী৷ সারদার ভরাডুবিতে তাই এ বার ঘোর বিড়ম্বনায় বাংলা থেকে রাজ্যসভায় যাওয়া
তৃণমূলের সাংবাদিকরা৷

সারদা গোষ্ঠীর গণেশ ওল্টানোর জেরে সাংসদ-সাংবাদিক কুণাল ঘোষ আমজনতার কাঠগড়ায় উঠেছিলেন আগেই৷ সোমবার মুখ খুললেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীও৷
সাংসদ-সাংবাদিক প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্পষ্ট প্রতিক্রিয়া, ভবিষ্যতে তিনি আর কোনও সাংবাদিককে সংসদে পাঠানোর ভুল করবেন না৷ রাজ্য থেকে
মনোনীত চার সাংসদ-সাংবাদিকের প্রতি অনাস্থা এই মন্তব্যেই বুঝিয়ে দেন তিনি৷ এ বিষয়ে বিতর্ক বাড়তে না দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, জড়িত ব্যক্তি সাংসদ
হলেও আইন আইনের পথেই চলবে৷ বিপাকে পড়েছেন বুঝে সাংসদ-সাংবাদিকরা অবশ্য 'এই সময়'-এর কাছে মন্তব্য করতে চাননি৷

গত বছর পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজ্যসভার সাংসদ পদের জন্য শাসকদলের তরফে মনোনীতদের মধ্যে ছিলেন চার মিডিয়া ব্যক্তিত্ব৷ সারদার মিডিয়া গোষ্ঠীর সিইও
কুণাল ঘোষ, সংবাদ প্রতিদিনের সম্পাদক সৃঞ্জয় বসু, হিন্দি দৈনিক সন্মার্গের ম্যানেজিং ডিরেক্টর বিবেক গুপ্তা এবং উর্দু দৈনিক আখবর-ই-মসরিকের কলকাতা
সংস্করণের সিইও মহম্মদ নাদিমুল হক৷ অন্য তিন জন সরাসরি বিতর্কে না-জড়ালেও, সাম্প্রতিক চিট ফান্ড কেলেঙ্কারিতে নাম জড়ায় সারদা মিডিয়া গ্রুপের চিফ
এগজিকিউটিভ অফিসার কুণালবাবুর৷ চিট ফান্ড নিয়ে এদিন প্রথম বারের জন্য সংবাদমাধ্যমের সামনে যখন এদিন মুখ খোলেন মুখ্যমন্ত্রী, তখন স্বাভাবিক ভাবেই
ওঠে কুণালবাবুর নাম৷ সে প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়েই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'আমি বাংলা, হিন্দি, উর্দু ভাষার কাগজ থেকে চার জনকে সাংসদ করেছিলাম৷ আর কখনও
কোনও সাংবাদিককে সাংসদ করব না৷'

মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের পরই এই চার সাংসদের প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা করে 'এই সময়'৷ কিন্তু কেউ-ই প্রতিক্রিয়া জানাতে চাননি৷ কেউ মন্তব্য এড়িয়ে গিয়েছেন,
কেউ আবার ফোনই ধরেননি৷ কুণাল ঘোষের মোবাইলে এদিন সন্ধেয় একাধিক বার ফোন করা হলে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া তো যায়ইনি, বরং অন্য প্রান্ত থেকে
প্রতি বারই 'রং নাম্বার' বলা হয়েছে৷ বিবেক গুপ্তা নিজে ফোন ধরেননি৷ অন্য একজন ফোন ধরে 'এই সময়'-এর প্রশ্ন জেনে নিয়ে ১০ মিনিট পরে ফের ফোন
করতে বলেন৷ তাঁর কথামতো পরে বার বার ফোন করা হলেও, বিবেক গুপ্তার মোবাইল হয় রিং হয়ে গিয়েছে, অথবা কেটে দেওয়া হয়েছে ফোন৷ সৃঞ্জয়বাবু
শহরের বাইরে থাকায় মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য সম্পর্কে কিছুই শোনেননি বলে জানান৷ নাদিমুল হকের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'এ বিষয়ে এখনই
কোনও মন্তব্য করব না৷'

দেখেশুনে বিনিয়োগ করা উচিত ছিল, চিটফান্ড প্রসঙ্গে বললেন মুখ্যমন্ত্রী

দেখেশুনে বিনিয়োগ করা উচিত ছিল, চিটফান্ড প্রসঙ্গে বললেন মুখ্যমন্ত্রী
কলকাতা: দেখেশুনে বিনিয়োগ করা উচিত ছিল৷ চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে যখন সর্বস্বান্ত মানুষ রাজ্য সরকারের কাছে সাহায্যের আবেদনে সরব হয়েছেন, তখন এ কথাই বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ 

চিটফান্ড কেলেঙ্কারি নিয়ে সোমবার মহাকরণে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ বৈঠকে শিল্পমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন৷ বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন তার নির্যাস, চিটফান্ড নিয়ে সব তথ্যই রাজ্য সরকারের কাছে ছিল৷ তিনি বলেছেন, 'সিবিআই আগেই অভিযোগ জানিয়েছিল রাজ্যকে৷ পয়লা বৈশাখের পর সে কথা জানতে পারে রাজ্য৷' বিধাননগর থানায় সিবিআই অভিযোগ দায়ের করার পরই বিষয়টি সরকারের নজরে আসে৷ 

তবে সাধারণ মানুষের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন, তা বিতর্কের জন্ম দিতে পারে৷ তিনি বলেছেন, 'বিনিয়োগের আগে সাধারণ মানুষের ক্রসচেক করা উচিত ছিল৷' তাঁর সংযোজন, 'যা যাওয়ার, তা গেছেই৷' এই মন্তব্য থেকে ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, ক্ষতিগ্রস্তরা রাজ্য সরকারের সাহায্যের দাবি করলেও, সরকার তাঁদের কোনও রকম আর্থিক সহায়তা দেবে না৷ সরকারের ভাবমূর্তি নিয়ে কোনও প্রশ্ন উঠতে পারে না, এই দাবি করে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, 'আইন আইনের পথেই চলবে৷' 

রাজ্য সরকারের দায় এড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, 'চিট ফান্ডের নামে প্রতারণা করছে বহু সংস্থা৷ এই ঘটনা আশির দশক থেকে চলছে৷' একই সঙ্গে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, চিটফান্ড নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব কেন্দ্রের-' এগুলির উপর নজর রাখে কেন্দ্র৷ কেন্দ্রেই নানা সংস্থা নজরদারি চালায়৷' ভুঁইফোড় সংস্থাগুলি বাড়বাড়ন্তের দায় বিগত সরকারের ঘাড়ে ঠেলে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, 'যারা মানুষকে সর্বস্বান্ত করে, তারা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে না৷' চিটফান্ড নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন৷ বাম সরকারের আনা চিটফান্ড বিরোধী আইনেও অনেক গলদ ছিল বলে দাবি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের৷ 

সারদার মতো সংস্থাগুলির দুর্নীতি রুখতে এদিনের বৈঠকে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার৷ বিশেষ তদন্তকারী কমিটি গড়ে চিটফান্ডগুলির উপর লাগাম পরানো হবে৷ গঠিত হবে বিশেষ কমিশন৷ শ্যামল সেনের নেতৃত্বে এই কমিশনে থাকবেন আরও চার জন সদস্য৷ প্রতারিতরা কমিশনে এসে সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন৷ সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই তদন্ত এগোবে৷ 

বাঁয়ে ডাইনে চাই নে চাই নে... মগজধোলাই ও স্থিতাবস্থার রাজনীতি
ডানপন্থা বনাম বামপন্থা, কিংবা দলহীন বনাম দলীয় রাজনীতি নয়৷ আসল রোগটা কোনও রকম ঝুঁকির মধ্যে না গিয়ে স্থিতাবস্থাকে মেনে নেওয়ার দুরারোগ্য সামাজিক রোগ৷ লিখছেন বৈজয়ন্ত চক্রবর্তী

ইদানীং সব স্মৃতিই তাত্‍ক্ষণিক৷ একের পর এক অলীক কুনাট্যের অবতারণায় ঢেকে যায় কয়েক দিন আগের দুর্বিষহ স্মৃতি৷ যেমন আস্তে আস্তে মিলিয়ে আসছে ছবি হয়ে বেঁচে থাকা এক জোড়া উজ্জ্বল স্বপ্নাভ চোখ৷ গালে হাত রেখে বসে থাকা এক নবীন কিশোরের মুখচ্ছবি৷ আক্ষরিক অর্থে 'চেনা' নয়৷ আবার চেনাও বটে৷ যেমন রেডিয়োতে হঠাত্‍ একটা পুরনো গান শুনলে ছেলেবেলার কিছু গন্ধ ফিরে আসে৷ যে গন্ধগুলো এখন প্রায় অবলুন্ত৷ যেমন সমাজের মূলস্রোতে প্রায় অবলুন্ত হয়ে এসেছে সেই সব তরুণের দল যাঁরা হিসেবের কড়ি না গুনে গান গাইতেন, লিখতেন, পড়ার বইয়ের বাইরে অন্য বই পড়তেন এবং সর্বোপরি ছকে বাঁধা জীবনের বাইরে বেরিয়ে অন্য কিছু করার কথা ভাবতেন৷ শুধু নিজের জন্য নয়, অন্য অনেকের জন্য৷ কিংবা, হয়তো তাঁরা অবলুপ্ত নন৷ কিন্ত্ত সামাজিক চালচিত্রে তাদের অবলুন্ত করে দেওয়ার একটা চতুর প্রচেষ্টা চলছে৷ ষাট এবং সত্তরের দশকে স্বাভাবিক ভাবেই এই তরুণদের সিংহভাগ বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন৷ কিন্ত্ত রাজনৈতিক পরিচয়টা এখানে খুব বড়ো ব্যাপার নয়৷ আসলে তাঁরা এক সামাজিক প্রতীতি বহন করতেন৷ যে সামাজিক প্রতীতির আদল গড়ে উঠেছিল চল্লিশের দশক থেকে দাঙ্গা-তেভাগা-দেশভাগ-উদ্বাস্ত্ত-খাদ্য আন্দোলনের যৌথ উত্তরাধিকার সূত্রে৷ যে সমাজে তথাকথিত 'বাস্তব পরিস্থিতি'-কে একমাত্র ধ্রুব সত্য মেনে না নিয়ে সেই বাস্তবকে অতিক্রমণের একটা ভাবনা ছিল৷ ইতিহাসের কোনও একটি বিশেষ মুহূর্তকে ইতিহাসের শেষ বিন্দু না ভেবে ভবিষ্যত্কে নতুন কাঠামোয় বাঁধবার একটা প্রতিশ্রুতি ছিল৷ আর সেই প্রতিশ্রুতিতে আস্থা জাগিয়ে রাখত সেই সব উজ্জ্বল চোখ৷ সেই সব নবীন মুখচ্ছবি৷ ক্ষমতা যখন রাজনীতিকে একটি নির্দিষ্ট গণ্ডিতে আটকে ফেলল, তখনই হারিয়ে যেতে লাগল এই অতিক্রমণ অর্থাত্, ট্র্যান্সেনডেন্স-এর রাজনীতি৷ পেশাদার রাজনীতিবিদরা সুকৌশলে এই গণ্ডিটি রচনা করলেন, যে গণ্ডির মধ্যে নিঃশর্ত আনুগত্যের মুচলেকা লিখে না দিলে কারও টিকে থাকা কঠিন৷ অর্থাত্, যৌবনের স্বাভাবিক স্পর্ধার শ্বাসরোধ সম্পূর্ণ হল৷ আর এই গণ্ডিকে হয়তো অজান্তেই মান্যতা দিলেন সেই সব সামাজিক মোড়লরা যাঁদের নাসিকা রাজনীতি নামক শব্দটি শুনলেই কুঞ্চিত হয়ে ওঠে৷ অর্থাত্, মুখে এ কালের রাজনীতির ঘোর নিন্দা করলেন বটে, কিন্ত্ত সেই কায়েমি স্বার্থকে বহাল তবিয়তে টিকিয়ে রাখার ছাড়পত্র দিল তাঁদের সযত্নকুঞ্চিত নাসিকাগুলি৷ সেই অর্থে, সুকৌশলী পেশাদার রাজনীতিক এবং পবিত্রতার ধ্বজাধারী সামাজিক জ্যাঠামশাই- উভয়ই একই মুদ্রার এ পিঠ ও পিঠ৷

সেই পুরাতন দ্বন্দ্ব সমাস

পড়াশুনো ছেড়ে 'পার্টি পলিটিক্স' করা গুরুজনরা কখনই পছন্দ করেননি৷ তখনও না, এখনও না৷ কিন্ত্ত সেই সময়ের তিরস্কার ছিল সস্নেহ৷ এক ধরনের প্রশ্রয় লুকিয়ে থাকত শুভানুধ্যায়ীদের উপদেশের আড়ালে৷ প্রায় প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে তরুণদের কর্তব্য নিয়ে সামাজিক মোড়লি শুরু হয়নি৷ নিজের আখের গুছানোর ধারণাকে সর্বশক্তিমান মতবাদে রূপান্তরিত করার মধ্যবয়স্ক চতুরালি তখনও সামাজিক মান্যতা পায়নি সেই ভাবে৷ তবে তরুণদের এই গণ্ডি ছাড়াবার স্পর্ধা অবশ্যই বামপন্থীদের কোনও একচেটিয়া কারবার নয়৷ গল্পটা শুরু হয়েছিল আরও বহু বছর আগে৷ যে কাল নিয়ে 'অবুঝ তরুণ'-দের পিণ্ডি চটকানো সমাজপতিদের নর্তন-কোঁদনের অন্ত নেই, সেই সময়ে৷ যখন বাঙালি তরুণ প্রথম পিতৃদ্রোহের মন্ত্রে দীক্ষিত হল৷ যখন পিতৃদ্রোহের প্রথম ঋত্বিক ইয়ং বেঙ্গলকে নিয়ে মোড়লরা ছড়া কাটলেন- 'ইয়ং বেঙ্গল এই হোয়েছে কি কাল/ চাল চুলো নাহি যার তারো লম্বা চাল'৷ তথাকথিত 'পার্টি পলিটিক্স' ছিল না উনিশ শতকের প্রথম দিকে৷ কিন্ত্ত পিতৃদ্রোহের হাত ধরে রাজদ্রোহ প্রবেশ করতে বেশি সময় লাগেনি৷ ইয়ং বেঙ্গল, মধুসূদন, নরেন্দ্রনাথ দত্তদের হাত ধরে যা পূর্ণতম রাজনৈতিক রূপ পেল জীবন পণ করা বিপ্লবী আন্দোলনে৷ সেই রাজনীতি সঠিক না বেঠিক ছিল, তা বিতর্কযোগ্য অবশ্যই৷ কিন্ত্ত বাস্তব, অর্থাত্ ইংরেজের লাঠির বাড়ি এবং ফাঁসির দড়ির সম্ভাবনাকে অগ্রাহ্য করার যে সত্ সাহস তাঁদের মধ্যে ছিল তা অস্বীকার করাটা অনৈতিহাসিক৷ বিপ্লবী আন্দোলনের কঠোর সমালোচক রবীন্দ্রনাথও কুর্নিশ জানিয়েছেন সেই সাহসী যৌবনকে৷

বস্ত্তত রবীন্দ্রনাথ নিজেও এই বিদ্রোহী বৃত্তের বহির্গত কোনও ব্যতিক্রম নন৷ কালো সাহেব-অধ্যুষিত কংগ্রেস অধিবেশনে ছেলেছোকরাদের ধুতি চাদর পরিয়ে নিয়ে যাওয়ার নেতা ছিলেন স্বয়ং তিনি৷ হঠাত্ খেয়ালবশে গাড়িতে যেতে যেতে মোজা খুলে ফেলে সেখানে হাজির হওয়ার দৃষ্টান্ত তাঁরই স্থাপিত৷ যে সমাজে মোজা না পরে সভাসমিতিতে যাওয়া ছিল এক গর্হিত অপরাধ৷ তাঁর থেকে আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর থেকে দুই বছরের ছোটো পড়শি যুবক৷ তিনি এবং তাঁর চ্যালাচামুণ্ডাদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষ কী বলাবলি করতেন তা লিখে গিয়েছেন তাঁরই ভাই মহেন্দ্রনাথ দত্ত- 'আর শিখেছেন কতকগুলো বচনের ঝুড়ি৷ কাজকর্ম করার নাম নেই, চাকরিবাকরি করবার নামগন্ধ মুখে নেই৷ এর বাড়ি, ওর বাড়ি পেট ঠেসে আসে, আর কাজের মধ্যে কতকগুলো ছোঁড়াকে বকিয়েছে৷ সেগুলোকে নিয়ে কী রকম করছে সব- একটা কর্মনাশার দল করেছে৷' উক্তিটি একটু দীর্ঘ | কারণ উক্তিটির সঙ্গে এখনকার সাধারণ মানুষদের রাজনীতি-করা-ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি ভেসে আসা কটূক্তির মিল চমকপ্রদ৷ পরবর্তীকালে এই 'কর্মনাশা' যুবকদের নেতা প্রিয়নাথ সিংহকে এক কথোপকথনে জানান- 'ঈশ্বর নিরাকার চৈতন্যস্বরূপ', 'গোপাল অতি সুবোধ বালক- ওতে কোনও কাজ হবে না৷ ওতে মন্দ বই ভালো হবে না৷' গোপাল-রাখাল দ্বন্দ্বের সেই ঐতিহাসিক শুভারম্ভ৷

সমালোচকরা নিশ্চিত ভাবে বলবেন- তাঁরা তো আর 'পার্টি পলিটিক্স' করত না৷ আর দেশ পরাধীন থাকার সময় রাজনীতিটা অন্য ব্যাপার৷ প্রথমেই বিরুদ্ধ যুক্তির ঐতিহাসিক ভ্রান্তির কথা বলে নেওয়া জরুরি৷ প্রথমত, পরাধীন যুগের সংগ্রামী রাজনীতিও তথাকথিত 'পলিটিক্স'-এ ক্লিন্ন ছিল৷ সেই যুগে তরুণদের রাজনীতির চালের বোড়ে হিসেবে ব্যবহার করার উদাহরণ কম নেই৷ দ্বিতীয়ত, ছাত্রদের মধ্যে লাঠিসোঁটা নিয়ে মারপিটের ইতিহাসও উনিশ শতক থেকেই নথিভুক্ত৷ কাজেই হাতে পেনসিলের মতো পড়ে রইল দেশের স্বাধীনতাকেই ছাত্র রাজনীতির শেষ গণ্ডি হিসেবে মেনে নেওয়া৷ ভাবটা এমন- অনেক তো হল বাছারা, এবার যাও যাও সবে নিজ কাজে৷ এই অযৌক্তিক গণ্ডির বাঁধন অনেকের পক্ষেই মানা সম্ভব হয়নি৷ এই বাঁধন না মানার সাহস থেকেই এক দিকে যেমন তৈরি হয়েছে বামপন্থী আন্দোলনসমূহ, অন্য দিকে জয়প্রকাশ নারায়ণের নেতৃত্বে গুজরাট ও বিহারের নবনির্মাণ আন্দোলন৷ সব আন্দোলনেরই ত্রুটিবিচ্যুতি প্রচুর, মতাদর্শ নিয়েও অসংখ্য বিতর্ক৷ কিন্ত্ত মূলে ভুল ছিল না৷ অর্থাত্, ক্ষমতার চোখ রাঙানির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জারি ছিল৷ মূলত ছাত্র এবং যুবকদের নেতৃত্বে৷ যে প্রতিবাদের ঐতিহ্য ভারতীয় গণতন্ত্রের আরও শক্ত ভিত গেঁথে দিয়েছিল৷

পোড়া বার্তাকু এনেছি খাস 

অস্যার্থ এই নয় যে রাজনীতি ঠিক একই চেহারায় আছে৷ গত কয়েক সন্তাহের তাণ্ডব থেকে পরিষ্কার যে বঙ্গীয় রাজনীতির পঙ্কিলতায় নিমজ্জন সম্পূর্ণ৷ এটাও সম্পূর্ণ সত্য যে রাজনৈতিক ব্যবসার বিনে পয়সার এজেন্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে ছাত্ররা৷ কিন্ত্ত তার দাওয়াই হিসেবে সামাজিক মোড়লদের পরামর্শ হল- যাও, ঘরে গিয়ে পড়তে বসো৷ অর্থাত্, যে সমস্ত নেতানেত্রীদের হাত ধরে রাজনৈতিক সংস্কতির এই পদস্খলন, রাজনীতির জমিদারিটা তাঁদের হাতেই সম্পূর্ণ ছেড়ে দাও৷ নিতান্ত বিবেকে চুলকানি হলে মাঝেমধ্যে লিকপিকে কয়েকটি মোমবাতি জ্বালিয়ে দিও৷ এখানেই নাগরিক কর্তব্যের ইতি৷ বাকি যা কিছু বোঝার সব বুঝে নেবেন টিভি বাইটের মাধ্যমে সমাজসংস্কারে ব্রতী, দুনিয়ার হালচাল সম্পর্কে জ্ঞানের একমাত্র দাবিদার প্রৌঢ় পক্বকেশ গুরুঠাকুররা৷ অর্থাত্, রাজনীতি নামক লক্ষ্মণের গণ্ডিরেখার মধ্যে এত কাল ধরে যে পূতিগন্ধময় আবর্জনা জমা হয়েছে, তা ঠিক সেই রকমই থাক৷ মধ্যবয়স্ক আমরা সেই দুর্গন্ধের মধ্যেই মোটামুটি টিকে গিয়েছি এবং আখের গুছিয়ে নিয়েছি যখন, তোমরাও সেই টিকে থাকা এবং আখের গুছানোটাই প্র্যাকটিস করো৷ নইলে ঝুঁকি আছে৷

আপাতত শান্তিকল্যাণ

আর এটাই শিকড়ে জমে থাকা আসল রোগ৷ ডানপন্থা বনাম বামপন্থা, বা সি পি এম বনাম তৃণমূল, কিংবা দলহীন বনাম দলীয় রাজনীতি নয়৷ রোগটা আদতে কোনও রকম ঝুঁকির মধ্যে না গিয়ে স্থিতাবস্থাকে মেনে নেওয়ার দুরারোগ্য সামাজিক রোগ৷ এবং বলা অসঙ্গত হবে না সেই স্থিতাবস্থাপ্রিয়তার জন্ম দিয়েছেন কোনও এক সময়ে সামাজিক ও রাজনৈতিক চলমানতার প্রতীক বামপন্থীরাই৷ যখন তাঁরা 'ভালো থাকা'-র এক বিভ্রম তৈরি করলেন৷ বিক্ষুব্ধ টালমাটাল সময়ের পর যখন শান্তিকল্যাণ, তখন সামাজিক স্থিতাবস্থার একটা বোধ তৈরি করা হল৷ যেন এই স্থিতিশীল রাজনৈতিক ধাঁচাকে সামান্য ওলটপালট করলেই যা পাওয়া যাচ্ছে সেটুকুও আর পাওয়া যাবে না৷ অর্থাত্, ইতিহাসের একটি নির্দিষ্ট মুহূর্তকে অন্তিম বিন্দু মেনে নেওয়া হল৷ যেন এই অন্তিম বিন্দুর পরে যা কিছু সামান্য পরিবর্তন প্রার্থিত, তা হতে হবে সরকারি বামপন্থীদের বেঁধে দেওয়া গণ্ডির মধ্যেই৷ বাস্তব যাই হোক না কেন, যতই অপদার্থতা বা অবিচার থাকুক, গণ্ডির বাইরে ভবিষ্যত্ নামে এক জুজুর ভয় তৈরি করা হল অহর্নিশ৷ যে রাজনৈতিক কৌশলের ফলে জন্ম হল সরকারকে চোখের মণির মতো বাঁচিয়ে রাখার সম্পূর্ণ অবামপন্থী স্লোগান৷ যেন খাস প্যারিস কমিউন জন্ম নিয়েছিল এই বঙ্গভূমিতে৷ তার সঙ্গে যোগ হল গণসংগঠনকে পার্টির তাঁবেদারিতে রেখে দেওয়ার বামপন্থী ঐতিহ্য৷ অর্থাত্, ছাত্র বা শ্রমিক বা কৃষকের স্বার্থকে সরকার যে ভাবেই বিঘ্নিত করুক না কেন, হ্যাঁ-হ্যাঁ-বলা ঘাড় নাড়া সঙের মতো ঘাড় নেড়ে যাওয়াই এই সব সংগঠনের কর্তব্য৷ সেই ট্র্যাডিশন এখনও চলেছে৷ চলেছে শুধু নয়, আরও পাকাপাকি ভাবে জমে বসেছে৷ তফাত্ একটাই৷ আগে এই দখলদারি ও স্থিতাবস্থার কৌশলকে একটা মোড়কের আড়ালে পেশ করা হত৷ এখন সব খুল্লমখুল্লা৷ রাখঢাকের কোনও বালাই নেই৷

রাজনৈতিক স্তর থেকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার এই শিক্ষা ছড়িয়ে গিয়েছে সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্তরে৷ ছোটোবেলা থেকে বাঁধাধরা পথে ছেলেমেয়ের 'ভবিষ্যত্' উজ্জ্বল করার জন্য বাপ মায়েদের উদয়াস্ত পরিশ্রম৷ কোচিং ক্লাসে মোটা টাকা দিয়ে কিছু নোট গিলিয়ে কোনও ভাবে পরীক্ষা উতরে দেওয়া গেল তো মার দিয়া কেল্লা৷ কোনও রকমে একটা মোটা মাইনের চাকরি মিলে গেলে আর কথাই নেই৷ পুরোপুরি মোক্ষলাভ৷ যত কম ঝুঁকি নিয়ে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেওয়া যায় | ছকের বাইরে বেরোবার ভাবনাচিন্তা যতটা কম করতে হয়৷ যাঁরা রাজ্যে শিল্পের অভাব নিয়ে অহোরাত্র চিন্তিত, তাঁরা এটা ভাবেন না যে কোনও রকম ঝুঁকি নিতে ভীত, অন্য পথে চলতে সন্ত্রস্ত জাতির ভবিতব্যে এই দৈন্যই আঁকা থাকে৷
তরুণদের হয় রাজনৈতিক দল, নয় বাজার, অথবা অ-রাজনীতির গতানুগতিক মগজধোলাই যন্ত্রের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলে যা হওয়ার সেটাই হয়েছে এই রাজ্যে৷ ইতিহাসে যাঁদের নেতৃত্বে সমাজ ও রাজনীতির জড়ত্ব ভেঙেছে, তাঁদের শিশুকাল থেকেই শিক্ষা দেওয়া হয়েছে ঠিক যেমনটি আছে তেমনটি মেনে নেওয়ার৷ সামাজিক ও রাজনৈতিক জ্যাঠামশাইদের রক্তচক্ষু অগ্রাহ্য করে তরুণরা যত দিন না নিজেদের পথ বেছে নিতে পারে, তত দিন এই বদ্ধ ডোবার থেকে মুক্তি নেই৷

ভয় হয় এই বদ্ধ ডোবায় সিমলেপাড়ার সেই 'দুর্মুখ' যুবকের ভবিষ্যত্বাণী ফলে গেলেও যেতে পারে৷ শিষ্য শরচ্চন্দ্র চক্রবর্তীকে যেমন তিনি বলেছিলেন- '... তোরা 'হা চাকরী যো চাকরী' করে করে লোপ পেয়ে যাবি৷'

No comments:

Post a Comment